পডসল মৃত্তিকা ও তার বৈশিষ্ট্য
সরলবর্গীয় বনাঞ্চলের
সৃষ্ট আদর্শ পরিলেখ বিশিষ্ট একপ্রকার আঞ্চলিক মৃত্তিকা হল পডসল। পডসল কথাটি
এসেছে রুশ শব্দ ‘জোলা’ থেকে যার অর্থ ছাই বা ভস্ম। পডসল মৃত্তিকার ‘A2’ স্তরটি ধূসর বা ছাই বর্নের হওয়ায়
এই মৃত্তিকার নাম পডসল হয়েছে।
অবস্থান – আর্দ্র
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্গত সরলবর্গীয় বনভূমি অঞ্চলে পডসল মৃত্তিকা বলয় গড়ে ওঠে।
ইউরোপ ও এশিয়ায় এই বলয়টি উত্তরে তুন্দ্রা ও দক্ষিনে স্তেপ জলবায়ুর মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দক্ষিন গোলার্ধে এই রূপ মৃত্তিকার অবস্থান দেখা যায় না।
উৎপত্তি – শীতল ও আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতা অনেক কম। এখানে
বাষ্পীভবন অপেক্ষা বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় জলবায়ু শীতল ও আদ্র প্রকৃতির। এই পরিবেশে সরলবর্গীয়
উদ্ভিদ প্রচুর পরিমানে জন্মায়। উদ্ভিদের ডালপালা, কান্ড ও পাতা পচে যায় এবং কম উষ্ণতার
জন্য হিউমাস জমতে থাকে। হিউমাসের সঞ্চয়ের সাথে সাথে জৈব পর্দাথের পরিমানও বাড়তে থাকে।
এই ভাবে পুরু এক জৈবিক স্তর গঠিত হয়।
আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট দ্রবীভূত পদার্থ মৃত্তিকার A স্তর থেকে ধৌত প্রক্রিয়ায় অপসারিত
হয়। কাদা কনার সাথে কিছু সূক্ষ্ম পলি থাকায় B স্তর টি জমাট বেঁধে যায় এবং অপেক্ষাকৃত
অপ্রবেশ্য হয়। এই স্তরটি শুকিয়ে শক্ত হয়ে হার্ডপ্যান
সৃষ্টি করে। মাটির ওপরের স্তরে কেবলমাত্র সিলিকার একটি আস্ত্রন থেকে যায়। সিলিকা বেশি
থাকায় মাটি ধূসর ছাই রঙের হয়। মাটি গঠনের এইরূপ প্রক্রিয়াকে পডসলিকরন বলে।
পডসল মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য
১. পডসল মাটির
A, B ও C এই তিনটি স্তর অতি সুস্পষ্ট হয়। A স্তরের ওপরের অংশ থেকে সেসক্যুঅক্সাইড ও
হিউমাস জাতীয় পদার্থ অপসারিত হয় বলে A স্তর
সাধারণত হালকা ও ধূসর রঙের হয়। B স্তরে সেসক্যুঅক্সাইড ও হিউমাস সঞ্চিত হওয়ায় B স্তরের
রঙ গাঢ় বাদামি বর্নের হয়।
২. পডসল মৃত্তিকার তিনটি স্তরই আম্লিক
প্রকৃতির। pH এর মান ৫ পর্যন্ত হয়।
৩. পডসল মৃত্তিকা ধূসর বর্নের হয়।
৪. এইরুপ মৃত্তিকার উর্বর শক্তি কম।
ওট, যব, সোয়াবিন ও ভুট্টার চাষ হয়।
কোন মন্তব্য নেই: