সবুজ বিপ্লব কাকে বলে

বুজ বিপ্লব  - ভারতবর্ষে স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা যেত। তার অন্যতম প্রধান কারণ হল ভারতে পুরনো পদ্ধতিতে কৃষিকাজ । তাই ফসলের উৎপাদন ছিল খুব কম যা মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম ছিল না। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভারত সরকার কে একটা বড়ো অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো অর্থাৎ খাদ্যের জন্য পরনির্ভরশীল ছিল।

তাই ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা যায় এবং এই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে  ফসলের উৎপাদন অনেকটাই বৃদ্ধি পায়, এটিই ভারতের ইতিহাসে সবুজ বিপ্লব নামে পরিচিত।

সবুজ বিপ্লবের সংজ্ঞা -  ভারতবর্ষে ১৯৬০ এর দশকে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, জলসেচ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় যার ফলস্বরূপ ফসলের উৎপাদন অত্যাধিক পরিমানে বৃদ্ধি পায়, যাকে সবুজ বিপ্লব বলে। সবুজ বিপ্লবের প্রধান ফসল হল গম ও ধান।ভারতবর্ষে সবুজ বিপ্লব প্রথম দেখা যায় পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে।
  • উচ্চফলনশীল বীজের আবিষ্কারক নরম্যান বোরলাঙ কে সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয়।
  • সবুজ বিপ্লব শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন উইলিয়াম গ্যাড ১৯৬৮ সালে
  • ভারতে সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয় এম এস স্বামীনাথান কে

সবুজ বিপ্লবের ধনাত্মক প্রভাব

১. ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি
রাসায়নিক সার, কীটনাশক, উচ্চফলনশীল বীজ প্রভৃতি ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন অদ্ভূতপূর্ব বৃদ্ধি পায়।

২. কৃষক দের আর্থিক অবস্থার উন্নতি
প্রচুর পরিমান ফসল উদবৃত্ত হওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করে কৃষক দের আয় হয়, যা তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নতিতে সাহায্য করে।

৩. বহু ফসলি কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন  
আগে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে ফসল ফলাতে হত বলে, বছরে একবার ফসল উৎপাদন হত। কিন্তু সবুজ বিপ্লবে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়, সেই জমি বছরে দুই থেকে তিনবার ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই ফসলের উৎপাদন অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

৪.  মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস
নদী থেকে অসংখ্য খাল কেটে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটানো হয়। ফলে জমিতে সময় মতো প্রয়োজন অনুসারে জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করতে হয় না।  

৫. অনাহারের পরিমান হ্রাস
সবুজ বিপ্লবের পূর্বে ভারতের বহু মানুষকে খাদ্যের অভাবে অনাহারে থাকতে হত। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের ফলে ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়, যার দ্বারা দেশের প্রায় সকল মানুষ কে খাবার পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়।

৬. দেশের আর্থিক উপার্জন বৃদ্ধি
উদ্বৃত্ত ফসল বিদেশে রপ্তানি করে ভারত সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, যা দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে।

সবুজ বিপ্লবের ঋনাত্মক প্রভাব
১. ভূমির অবনমন
একই জমিতে বছরে দুই বা তিন বার ফসল উৎপাদন করার ফলে জমির স্বাভাবিক উর্বরতার পরিমান কমে যাচ্ছে। ফলে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রচুর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে মৃত্তিকা দূষণের পরিমান বাড়ছে।

২. জীব বৈচিত্র্যের হ্রাস
কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলেকিছু কিছু উপকারী পাখি ও পতঙ্গের পরিমান অনেকটাই কমে যাছে।

৩. জলদূষণের পরিমান বৃদ্ধি
জমিতে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক গুলি বৃষ্টির জলের দ্বারা বাহিত হয়ে পাশ্ববর্তী জলাশয়ে পরে, জলাশয়ের জলকে দূষিত করছে।

৪. ভৌম জলের পরিমান হ্রাস
জলসেচের জন্য ভৌম জলের ব্যবহার করার ফলে ভৌমজল স্তরের পতন ঘটছে।

৫. অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিকাশ
সবুজ বিপ্লবের ফলে এক শ্রেণীর কৃষক ক্রমশ লাভবান হচ্ছে। অন্য দিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণীর কৃষক তেমন কোনো লাভ হওয়ায় অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৬. বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি
অধিক যান্ত্রিকরনের ফলে শ্রমিকের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৭. আঞ্চলিক বৈষম্য 
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ কেবলমাত্র উত্তর - পশ্চিম ভারতের রাজ্য গুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল বলে এই অঞ্চলের কৃষকরাই কেবলমাত্র সবুজ বিপ্লবের সুযোগ সুবিধা লাভ করে, কিন্তু ভারতের অন্যত্র সবুজ বিপ্লবের তেমন কোন প্রসার লক্ষ্য করা যায় না। তাই এই ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। 

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.