কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ কর
অস্ট্রিয়ার গ্রেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান ভূগোলবিদ ডঃ ওলাদিমির কোপেন একজন উদ্ভিদবিদ ও আবহবিদ ছিলেন। কোপেনের জলবায়ুর
শ্রেণিবিভাগ ১৯০১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বেশ কয়েকবার সংশোধনের পর কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের শেষ সংস্করনটি ১৯৩৬ সালে জার্মানির বার্লিনে প্রকাশিত হয়।
জলবায়ুর শ্রেণী নির্বাচনের ভিত্তি
গড় বার্ষিক তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোপেন জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ
করেন। কোন অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ সে অঞ্চলের জলবায়ুর সামগ্রিক বহিঃপ্রকাশ একথা বিবেচনা
করে কোপেন জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উদ্ভিদের সীমানাকে বিশেষ গুরুত্ব
প্রদান করেন ।
শ্রেণীবিভাগ - প্রধান প্রধান উদ্ভিদ অঞ্চলের সাথে সঙ্গতি রেখে কোপেন পৃথিবীর জলবায়ুকে প্রধান
৫ টি শ্রেনীতে বিভক্ত করেছেন। ৫ টি জলবায়ুর প্রতিটি এক একটি ইংরেজি Capital হরফ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।
১. ক্রান্তীয় আদ্র অরণ্য জলবায়ু (A)
বৈশিষ্ট্য – মাসিক গড় উষ্ণতা সবসময় ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি এবং
বার্ষিক বৃষ্টিপাত বার্ষিক বাস্পীভবনের থেকে বেশি।
২. শুষ্ক জলবায়ু (B)
বৈশিষ্ট্য – সারা বছর গড় কার্যকরী বাষ্পীভবন সবসময় অধঃক্ষেপনের থেকে
বেশি ফলে জলের ঘাটতি বজায় থাকে।
৩. উষ্ণ ও আদ্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু (C)
বৈশিষ্ট্য – শীতলতম মাসের তাপমাত্রা – ৩ ডিগ্রি থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। উষ্ণতম মাসের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের বেশি থাকে।
৪. হিমশীতল অরণ্য জলবায়ু (D)
বৈশিষ্ট্য – বছরের শীতলতম মাসের তাপমাত্রা – ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে কিন্তু উষ্ণতম মাসের গড়
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির উপর থাকে।
৫. মেরু জলবায়ু (E)
বৈশিষ্ট্য – উষ্ণতম মাসের গড় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে
থাকে। অর্থাৎ এই জলবায়ুতে গ্রীষ্মকালও শীতল হয়।
উপরিউক্ত চারটি বিভাগ A, C, D এবং E কে উষ্ণতা অনুযায়ী ভাগ করা যায় কিন্তু B কে ভাগ করার সময় বার্ষিক অধঃক্ষেপণের সাথে বার্ষিক বাষ্পীভবনের
তুলনা করে ভাগ করতে হয়।
ঋতু বিশেষে উত্তাপ ও বৃষ্টিপাতের ব্যতিক্রম এবং উদ্ভিদের ওপর তার প্রভাব অনুসারে
এই ৫ টি বিভাগকে ক্ষুদ্রতর উপবিভাগে ভাগ করা হয়।
ইংরেজি ছোট অক্ষর f, s, w দ্বারা ঋতু ভিত্তিক বৃষ্টিপাতের বন্টন নির্দেশ করা হয়। এখানে -
f = শুষ্ক ঋতুহীন
আদ্র জলবায়ু
s = শুষ্ক
গ্রীষ্মকাল
w = শুষ্ক শীতকাল
শুষ্ক জলবায়ু B কে উপবিভাগ করার জন্য ইংরেজি Capital হরফ S এবং W ব্যবহার করা হয়।
S = স্টেপ বা মরুপ্রায়
জলবায়ু
W = মরুভূমি বা মরু
জলবায়ু
একই ভাবে মেরু জলবায়ু E কে উপবিভাগ করার
জন্য ইংরেজি Capital হরফ T এবং F ব্যবহার করা হয়।
T = তুন্দ্রা জলবায়ু
F = স্থায়ী তুষার আবৃত
বা মেরু জলবায়ু
কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণী ও উপশ্রেণীর বর্ন সংযোগ দেখানো হল
জলবায়ুর শ্রেণী
|
চিহ্ন
|
শুষ্ক ঋতু
|
শুষ্কতা বা শৈত্যের মাত্র
|
ক্রান্তীয় উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু
|
A
|
f (s) w
|
|
শুষ্ক জলবায়ু
|
B
|
S W
|
|
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু
|
C
|
f s w
|
|
হিমশীতল অরণ্য জলবায়ু
|
D
|
f (s) w
|
|
মেরু জলবায়ু
|
E
|
T F
|
কোপেনের জলবায়ুর প্রধান শ্রেণী ও উপশ্রেণী বিভাগ
প্রধান জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ
|
চিহ্ন
|
উপশ্রেণী বিভাগ
|
ক্রান্তীয় উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু (A)
|
Af
|
১. বৃষ্টি বহুল অরণ্য
জলবায়ু বা নিরক্ষীয় জলবায়ু
|
Aw
|
২. ক্রান্তীয় সাভানা
জলবায়ু
|
|
As
|
৩. শুষ্ক গ্রীষ্মকাল
বিশিষ্ট জলবায়ু
(এই জলবায়ু কোথাও দেখা যায় না )
|
|
Am
|
৪.মৌসুমি জলবায়ু
|
|
শুষ্ক মরু জলবায়ু (B)
|
BS
|
৫. স্টেপ জলবায়ু
|
BW
|
৬. মরু জলবায়ু
|
|
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু (C)
|
Cf
|
৭. আদ্র নাতিশীতোষ্ণ
জলবায়ু
|
Cw
|
৮. শুষ্ক শীত ঋতু বিশিষ্ট
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু
|
|
Cs
|
৯. শুষ্ক গ্রীষ্ম ঋতু
বিশিষ্ট জলবায়ু বা ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু
|
|
হিমশীতল জলবায়ু (D)
|
Df
|
১০. আদ্র শীত ঋতু বিশিষ্ট
শীতল জলবায়ু
|
Dw
|
১১. শুষ্ক শীত ঋতু
বিশিষ্ট শীতল জলবায়ু
|
|
Ds
|
১২. শুষ্ক গ্রীষ্মকাল বিশিষ্ট শীতল জলবায়ু
(এই জলবায়ু কোথাও দেখা যায় না)
|
|
মেরু জলবায়ু (E)
|
ET
|
১৩. তুন্দ্রা জলবায়ু
|
EF
|
১৪. স্থায়ী তুষারবৃত মেরু
জলবায়ু
|
কোপেন কৃত অফ জলবায়ু বলতে কি বোঝো
উত্তরমুছুন