আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষির বৈশিষ্ট্য

বৃষ্টিপাতের পরিমানের উপর ভিত্তি করে কৃষি ব্যবস্থাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা - আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষি । এখানে আর্দ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য ও শুষ্ক কৃষির বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য পৃথক পৃথক ভাবে  আলোচনা করা হল ।

আর্দ্র কৃষি ও তার বৈশিষ্ট্য 

সংজ্ঞা - সাধারনত যে সব অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাত হয়, সেই সমস্ত অঞ্চলে ওই বৃষ্টিপাতের জলকে কাজে লাগিয়ে যে কৃষিকাজ করা হয় তাকে আর্দ্র কৃষি বলে।  

আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল - যে সব ফসল চাষের জন্য অধিক জলের প্রয়োজন হয়, সেই সমস্ত ফসল এই কৃষি ব্যবস্থায় চাষ করা হয়ে থাকে।  যেমন - ধান, পাট, আখ প্রভৃতি এই কৃষির প্রধান ফসল। 

অবস্থান - এই কৃষি ব্যবস্থা নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে হয়ে থাকে। যেমন - ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল হিসাবে প্রচুর ধান ও পাট চাষ করা হয়ে থাকে। 

বৈশিষ্ট্য 

👉 এই কৃষি ব্যবস্থায় জলসেচ করার প্রয়োজন হয় না । 

👉 এই কৃষি যে সমস্ত অঞ্চলে প্রচলিত সেখানে জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় কৃষিজোত 
গুলি ক্ষুদ্র আকৃতির হয়ে থাকে ।

👉 আর্দ্র কৃষিতে হেক্টর প্রতি উৎপাদনের পরিমান বেশি হয় কিন্তু অধিক জনসংখ্যার জন্য মাথাপিছু উৎপাদন কম হয়।

👉 এই ধরণের কৃষিতে কায়িক শ্রমের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। 

👉 আর্দ্র কৃষি মূলত জীবিকাসত্বাভিত্তিক চরিত্রের হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই কৃষি ব্যবস্থায় প্রধানত খাদ্য শস্যের চাষ করা হয়ে থাকে এবং উদ্বৃত্ত ফসল কম থাকে বলে তেমন মুনাফা অর্জিত হয় না। 

👉 এই কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির তেমন একটা ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না। 

শুষ্ক কৃষির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য 

সংজ্ঞা - যে সমস্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ৭৫ সেমির কম সে সমস্ত অঞ্চলে এই অল্প বৃষ্টির জলকে কাজে লাগিয়ে মূলত খরা প্রতিরোধী ফসলের চাষকে বলা হয় শুষ্ক কৃষি। 

শুষ্ক কৃষির ফসল - শুষ্ক কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল গম, ভুট্টা, মিলেট ও ডাল । 

অবস্থান - এই কৃষি প্রধানত খরা প্রবন মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল গুলিতে হয়ে থাকে। 

বৈশিষ্ট্য 

👉 যে অল্প বৃষ্টি হয় তার উপর নির্ভর করেই এই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে । এই কৃষিতে জলসেচের তেমন সুযোগ থাকে না। 

👉 এই কৃষিতে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান খুব কম হয়। 

👉 শুষ্ক কৃষি অঞ্চলে কৃষি জমিতে জল ধরে রাখার জন্য কৃষি জোত গুলি ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়ে থাকে। 

👉 এই অঞ্চলের মাটি গুলি শুষ্ক বেলে-দোয়াস প্রকৃতির হয়ে থাকে। 

👉 প্রাচীন পদ্ধতিতে এই কৃষি কাজ করা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রেও শ্রমের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। 

👉 এই কৃষি ব্যবস্থায় মাটিতে জলের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য জমির উপর অনেক সময় ফসলের অবশিষ্টাংশ এবং আগাছা বিছিয়ে রাখা হয়, এই পদ্ধতিকে মালচিং বলা। 


আর্দ্র ও শুষ্ক কৃষির পার্থক্য 

জলবায়ু 

উষ্ণ ও আর্দ্র নিরক্ষীয় এবং মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি দেখা যায়। 

উষ্ণ শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে শুষ্ক কৃষির প্রচলন দেখা যায়। 

বৃষ্টিপাত 

বছরে ১৫০ থেকে ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি ব্যবস্থা দেখা যায়। 

সাধারণত যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৭৫ সেমির কম সেখানে শুষ্ক কৃষিকাজ হয়ে থাকে। 

প্রধান ফসল 

আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল - ধান, পাট, আখ প্রভৃতি ।

শুষ্ক কৃষির  প্রধান ফসল গুলি হল - গম, ভুট্টা, মিলেট ও ডাল ।

উৎপন্ন ফসল 

আর্দ্র কৃষিতে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান বেশি। 

শুষ্ক কৃষির ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান অনেক কম । 


কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.