বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে


বায়ু বলতে সাধারণত বাতাসের অনুভূমিক চলনকে বোঝানো হয়ে থাকে। পৃথিবী পৃষ্ঠে বায়ুচাপের তারতম্য অনুসারে বাতাস যখন উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ যুক্ত অঞ্চলের দিকে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিক ভাবে এক স্থান থেকে অপর স্থানে গমন করে তখন তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে।

আবার বায়ুপুঞ্জের উল্লম্ব চলন কে বায়ু প্রবাহ না বলে বায়ুস্রোত বলা হয়ে থাকে। ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বাইয়ুপুঞ্জ  যখন খুব উষ্ণ হয়ে পড়ে তখন সেটি হালকা হয়ে উপরে উঠে বায়ুস্রোতের সৃষ্টি করে। এই বায়ুস্রোতের কারনেই বায়ুমণ্ডলে মেঘের সৃষ্টি হয়, বৃষ্টিপাত হয় এমনকি বিভিন্ন প্রকার ঘূর্নবাতের সৃষ্টিতেও বায়ুস্রোত গুরুতবপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।  

বায়ুপ্রবাহের গুরুত্ব

ক) বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠে বায়ুচাপের যে তারতম্য দেখা যায়, তার ভারসাম্য রক্ষিত হয়।

খ) পৃথিবী ব্যাপী তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করতেও বায়ু প্রবাহ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।  

গ) সমুদ্র স্রোত সৃষ্টিতে বায়ু প্রবাহের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ) পৃথিবী জলভাগ থেকে বাষ্পীভবনের ফলে যে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় তা বায়ুর অনুভূমিক প্রবাহের  মাধ্যমে স্থলভাগের দিকে ধাবিত হয়ে স্থলভাগে বৃষ্টিপাত হতে সাহায্য করে।

ঙ) বায়ু প্রবাহ যখন জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন বায়ু তার মধ্যে কিছু পরিমান জলীয় বাষ্প গ্রহন করে অর্থাৎ বাষ্পীভবনেও বায়ু বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

চ) বর্তমানে গ্রিন এনার্জির উৎস হিসাবে বায়ুপ্রবাহ থেকে উৎপন্ন শক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

চাপ ঢাল ও বায়ুপ্রবাহ

বায়ু কোন দিকে কি রকম গতিতে প্রভাবিত হবে তা বায়ুর চাপ ঢালের ওপর নির্ভর করে। বায়ুর চাপ ঢাল বলতে দুটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে বায়ুচাপের পার্থক্যকে বোঝানো হয়ে থাকে। এই চাপ ঢাল যত বেশি হবে বায়ু তত দ্রুত গতিতে উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ যুক্ত অঞ্চলের দিকে প্রভাবিত হবে।

বায়ুপ্রবাহের ওপর কোরিওলিস বলের প্রভাব

পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রতিনিয়ত আবর্তন করছে আর এই আবর্তন জনিত কারণে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তাকে কোরিওলিস বল বলে। এই কোরিওলিস বলের প্রভাবে পৃথিবীর ওপর যে সব গতিশীল বস্তু রয়েছে, সেগুলি উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিন গোলার্ধে বাম দিকে আবর্তন করে।   

তাই পৃথিবীর ওপর বায়ুচাপের তারতম্য অনুসারে প্রভাবিত গতিশীল বায়ু সোজা পথে প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিন গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। একেই কোরিওলিস প্রভাব বলা হয়ে থাকে।   

নিরক্ষরেখা থেকে যত উত্তর দিকে যাওয়া যায় কোরিওলিস বলের প্রভাব তত বাড়তে থাকে এবং নিরক্ষরেখায় কোরিওলিস বলের প্রভাব হয় শূন্য।

জিওস্ট্রপিক বায়ু

ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধবাংশ দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে ভূপৃষ্ঠের ঘর্ষন জনিত বাধা তেমন থাকে না । অর্থাৎ পৃথিবীর ওপরের অংশ দিয়ে প্রবাহিত বায়ু ভূপৃষ্ঠ জনিত বাধাকে অতিক্রম করে কোরিওলিস বলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সমচাপ রেখা গুলির একেবারে সমান্তরালে প্রবাহিত হতে শুরু করে, একেই জিওস্ট্রপিক বায়ু বলে। যেমন – জেট স্ট্রিম একপ্রকার জিওস্ট্রপিক বায়ু।

 বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যে সব বায়ু প্রবাহিত হয় সেগুলিকে তিনটি বৃহৎ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা –

১. প্রাথমিক সংবহন 

যেমন -  নিয়ত বায়ুপ্রবাহের অন্তর্গত আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ুপ্রবাহ  

২. গৌন সংবহন

যেমন – ঘূর্নবাত, প্রতীপ ঘূর্নবাত, মৌসুমি বায়ু ও বায়ুপুঞ্জ

৩. প্রগৌন সংবহন

যেমন – স্থানীয় বায়ু প্রবাহসমূহ
 

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.