নিয়ত বায়ু কাকে বলে


নিয়তবায়ু কাকে বলে, নিয়ত বায়ুর প্রকার, আয়ন বায়ু কাকে বলে, পশ্চিমা বায়ু কাকে বলে, মেরু বায়ু কাকে বলে এবং উক্ত বায়ু প্রবাহ গুলির বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হল। 

নিয়ত বায়ু – পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় গুলির তারতম্য জনিত কারণে যে বায়ু সারা বছর ধরে নিয়মিত ভাবে একটি নির্দিষ্ট পথে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে, তাকে নিয়ত বায়ু বলে।

নিয়ত বায়ুর প্রকারভেদ
নিয়ত বায়ুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা – আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু।
 
আয়ন বায়ু – কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপবলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে যে বায়ু সারা বছর ধরে নিয়মিত ভাবে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে, তাকে আয়ন বায়ু বলে।
 
আয়ন বায়ুর বৈশিষ্ট্য
 
১. অবস্থান – আয়ন বায়ু উভয় গোলার্ধে ৫ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
 
২. নামকরন – উত্তর গোলার্ধে আয়ন বায়ু উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিন গোলার্ধে এটি দক্ষিন-পূর্ব আয়ন বায়ু নামে পরিচিত।
 
৩. গতিবেগ – উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি থাকায় উত্তর পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ সামান্য কম হয়, যা ঘণ্টায় ১৬ কিমি। অন্যদিকে দক্ষিন-পূর্ব আয়ন বায়ু সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে স্থলভাগ জনিত বাধা কম হওয়ায় গতিবেগ বেশি হয়, ঘণ্টায় ২২ কিমি।

৪. অপর নাম – আগে কার দিনে পাল তোলা বানিজ্য জাহাজ গুলি আয়ন বায়ুর গতিপথ অনুসারে যাতাযাত করতো বলে, আয়ন বায়ুকে বানিজ্য বায়ু বলা হয়।
 
৫. গতিপথ – আয়ন বায়ু উত্তর গোলার্ধে ফেরেলের সুত্র অনুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এবং দক্ষিন গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে দক্ষিন-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়।   
 
৬. বৃষ্টিপাত – এই আয়ন বায়ুর জন্যই নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারা বছর ধরে পরিচলন প্রক্রিয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
 
৭. মরুভূমির সৃষ্টি – আয়ন বায়ুর উভয় গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিন-পূর্ব দিক থেকে সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহ কালে প্রচুর জলীয় বাষ্প ধারন করে মহাদেশ গুলির পূর্ব অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যখন মহাদেশের পশ্চিম অংশে পৌঁছায় তখন সেখানে আর কোন জলীয় বাষ্প থাকে না বলে বৃষ্টি হয় না । ফলে মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে মরুভূমির সৃষ্টি হয়।
 
পশ্চিমা বায়ু – উভয় গোলার্ধে ৩০ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সারা বছর ধরে পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে পশ্চিমা বায়ু বলে।
 
পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্য
 
১. নামকরন – উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু এবং দক্ষিন গোলার্ধে এটি উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত।
 
২. বৃষ্টিপাত – পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়। এই পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবেই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
 
৩. গতিবেগ ও নামকরন – পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ দক্ষিন গোলার্ধে ৪০ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সব থেকে বেশি হয়ে থাকে। গতিবেগ অনুসারে পশ্চিমা বায়ু দক্ষিন গোলার্ধে বিভিন্ন নামে পরিচিত - চল্লিশ ডিগ্রি অক্ষরেখায় গর্জনশীল চল্লিশা, পঞ্চাশ ডিগ্রি অক্ষরেখায় ভয়ঙ্কর চল্লিশা এবং ষাট ডিগ্রি অক্ষরেখায় ঝোড়ো ষেটো নামে পরিচিত।
 
৪. গতিপথ – এই পশ্চিমা বায়ু ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিন-পশ্চিম দিক থেকে এবং দক্ষিন গোলার্ধে কিছুটা বাম দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
 
মেরু বায়ু – উভয় গোলার্ধে সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে যে বায়ু সুমেরু ও কুমেরু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সারাবছর ধরে প্রবাহিত হয়ে থাকে তাকে মেরু বায়ু বলে।
 
মেরু বায়ুর বৈশিষ্ট্য
 
১. নামকরন – উত্তর গোলার্ধে মেরু বায়ু উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু এবং দক্ষিন গোলার্ধে দক্ষিন-পূর্ব মেরু নামে পরিচিত।
 
২. বায়ুর প্রকৃতি – এই বায়ু শীতল বরফাবৃত মেরু অঞ্চল থেকে প্রভাবিত হয় বলে এই বায়ু খুব শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
 
৩. তুষার পাত – মেরু বায়ুর প্রভাবে মহাদেশ গুলির পূর্বাংশে তুষারপাত হয়ে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.