পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর সমুদ্র স্রোতের প্রভাব


পৃথিবীর আবর্তন গতি, বায়ু প্রবাহ, সমুদ্র জলের লবণতা, ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্র জলরাশির নির্দিষ্ট দিকে নিয়মিত ভাবে একস্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহ কে সমুদ্র স্রোত বলে। এই সমুদ্র স্রোত পৃথিবীর জলবায়ু ও মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র স্রোতের প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। সাধারণত সমুদ্রে দুই ধরনের স্রোত প্রবাহিত হয়ে থাকে - শীতল স্রোত ও উষ্ণ সমুদ্র স্রোত। এই দুই ধরনের সমুদ্র স্রোত পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে এক গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

1) উষ্ণতার ওপর প্রভাব - সমুদ্র তীরবর্তী দেশ গুলির উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র স্রোতের প্রত্যক্ষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যে দেশের উপকূলের পাশ দিয়ে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয়, সেই সমস্ত উপকূল অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়। যেমন - উষ্ণ আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে শীতকালেও ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল অঞ্চল গুলি বরফ মুক্ত থাকে। অন্য দিকে শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেক টা হ্রাস পায়। যেমন - শীতকালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রচণ্ড শীত পড়ে ও তুষার পাত হয়। 

2) বৃষ্টিপাতের ওপর প্রভাব - উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে বলে, উষ্ণ স্রোত দ্বারা প্রভাবিত উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূল অঞ্চল গুলিতে তেমন একটা বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। 

3) মরুভূমির সৃষ্টি - যে সমস্ত দেশের উপকূলের পাশ দিয়ে শীতল সমুদ্র স্রোত বাহিত হয়, সেই সমস্ত অঞ্চলে  খুব নগন্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় বলে, বৃষ্টিপাতের অভাবে মরুভূমির সৃষ্টি হয়। যেমন - আফ্রিকার উত্তর পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত শীতল ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে সাহারা মরুভূমি র সৃষ্টি হয়েছে। আবার দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত শীতল হ্যামবোল্ড স্রোতের প্রভাবে পৃথিবীর শুষ্ক তম মরুভূমি আটাকামার সৃষ্টি হয়েছে।

4) দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া - ঝড় কুয়াশা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক সময় সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে হয়ে থাকে। উপকূলবর্তী যে সমস্ত অঞ্চলে উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত মিলিত হয় সে সমস্ত অঞ্চলে উষ্ণতার তারতম্য বা পার্থক্য জনিত কারণে ঘন কুয়াশা ও ঝড় বৃষ্টির সৃষ্টি হয়। 

5) তাপের সমতা - উষ্ণ ও শীতল সমুদ্র স্রোত পৃথিবীব্যাপী তাপে ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতল মেরু অঞ্চল থেকে প্রবাহিত শীতল স্রোত গুলি উষ্ণ অঞ্চলের দিকে বাহিত হয় এবং উষ্ণ নিরক্ষীয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্ট স্রোত গুলি শীতল অঞ্চলের দিকে বাহিত হয় বলে পৃথিবী ব্যাপী তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে। 

6) এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব - এল নিনো ও লা নিনা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত উষ্ণ (এল নিনো) ও শীতল স্রোত (লা নিনা)। এই দুটি উষ্ণ ও শীতল স্রোতের পর্যায়ক্রমিক আবির্ভাব প্রশান্ত মহাসাগরের দুই উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন লা নিনা বছরগুলিতে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায় ও প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে এলনিনো যে বছর আবির্ভূত হয় সে বছরগুলিতে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে (পেরু ইকুয়েডর উপকূল) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও পশ্চিম উপকূলে (দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) হ্রাস পায়। 

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে সমুদ্র স্রোত পৃথিবীর জলবায়ুর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে থাকে। 

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.