টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়নের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য ।। Sustainable Development
বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন
এবং পরিবেশগত অবনমনের হাত থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে টেকসই উন্নয়ন ধারনার বিকাশ ঘটে।
সংজ্ঞা - টেকসই উন্নয়ন ধারনাটি অনেক পুরনো । যদিও এর গুরুত্ব বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অনুধাবন হয়। টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন শব্দ টি প্রথম ব্যবহৃত হয় ব্রুন্ডল্যান্ড কমিসনে।
ব্রুন্ডল্যান্ড কমিশন /Brundtland Commission (১৯৮৭) টেকসই উন্নয়নের যে সংজ্ঞা দেয় তাহল – ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা
কে বজায় রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানো কে টেকসই বা স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে।
টেকসই উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য
১) স্থিতিশীল উন্নয়ন এক ধরণের কার্যাবলি যা পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে
বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
২) স্থিতিশীল উন্নয়ন এ প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশের গুনগত মান
বজায় রেখে মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।
৩) মানুষ যে প্রাকৃতিক
সম্পদ ও সাংস্কৃতিক সম্পদ গুলো ব্যবহার করছে, সেগুলি হ্রাস বা ধ্বংস না করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
ব্রুন্ডল্যান্ড কমিশন (Brundtland Commission) প্রদত্ত
প্রতিবেদন স্থিতিশীল উন্নয়নের পৌছানোর লক্ষ্যে বিশ্বের সব দেশ গুলির দ্বারা উন্নয়নমূলক
কৌশল গঠনের উপর জোর দেয়। এই কমিশনের মতে স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জন করতে নিম্নলিখিত বিষয় গুলির প্রতি
গুরুত্ব দেওয়া খুব জরুরী -
১. স্থিতিশীল পরিবেশ ২. স্থিতিশীল
পৃথিবী ৩. স্থিতিশীল মানব উন্নয়ন
৪.স্থায়ী শান্তি ও বিকাশ ৫.
স্বল্প অপচয়
৬. টেকসই প্রযুক্তি
১৯৮০ দশকে ও ১৯৯০ দশকে সালের মধ্যে স্থিতিশীল
উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কমিশন ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাদের
মধ্যে উল্লেখ যোগ্য গুলি হল –
১. ওজোন ক্ষয় সম্পর্কীত মন্ট্রিল প্রোটোকল - ১৯৮৭
২. ক্ষতিকারক বর্জ্য সম্পর্কীত বাসেল সম্মেলন – ১৯৮৯
৩. জলবায়ু পরিবর্তনের উপর সম্মেলন - ১৯৯২
৪.জীববৈচিত্র্য সম্মেলন – ১৯৯২
৫. বিশ্ব সম্মেলন -১৯৯২
৬. স্থিতিশীল উন্নয়নের উপর বিশ্ব সম্মেলন, জোহানেসবার্গ – ২০০২
স্থিতিশীল উন্নয়নের বিশেষ দিক গুলি হল
স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে যে বিষয় গুলির উপর জোর
দিতে হবে সেগুলি হল –
১. জীববৈচিত্র্য ২. গ্রিন হাউস গ্যাস ৩.
ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
৪. শিল্পাঞ্চল যে
দূষণ ছড়াচ্ছে আয়ত্বে আনা ৫. নিরাপদ বাস্তুসংস্থানের ব্যবস্থা
স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রধান নীতি বা উদ্দেশ্য
(Objectives of Sustainable development)
১. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পদের ব্যবহার
২. জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ
৩. এমন ভাবে সম্পদের ব্যবহার করা, যাতে সামাজিক ন্যায় বজায়
থাকে
৪. সম্পদের পুনব্যবহার
৫. মানুষের গুনগত মানের বিকাশ – ভালো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও
উচ্চ মাথা পিছু আয়
৬. পরিবেশ সম্পর্কীত বিষয় গুলি বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা
৭. মানুষ কে বিশ্ব সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বোঝানো।
৮. স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য সকলের অংশগ্রহণ আবশ্যক
স্থিতিশীলতা পরিমাপের কৌশল (Measurement of Sustainability)
সম্পদের স্থিতিস্থাপকতা, শক্তির দক্ষতা, সংস্কৃতি ও
জীববৈচিত্র্যের রক্ষনাবেক্ষন ও মানব বিকাশের ভিত্তিতে পরিবেশ ও সম্পদের
স্থিতিশীলতা পরিমাপ করা হয় ।
স্থিতিশীলতার নির্দেশক (Indicators) গুলি হল –
১. বাস্তুসংস্থানিক নির্দেশক – এটি ভূমি ব্যবহারের
নমুনা, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, জীবভরের
গুন ও পরিমান, জলের গুন ও পরিমান, মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা ও শক্তি সম্পদের প্রাচুর্যতা প্রভৃতি
অন্তভুক্ত করে।
ক) ভূমি
ব্যবহার ও ভূমি আচ্ছাদন পরিবর্তন প্যাটার্ন - রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড এবং রিমোর্ট সেন্সিং পদ্ধতির
ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমান ভূমি ব্যবহার প্যাটার্ন ও সময়ের সাথে সাথে যে পরিবর্তন
হচ্ছে তা বিশ্লেষণের দ্বারা ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়া ।
খ) জীবভরের গুনমান ও পরিমান – স্থলজ ও জলজ বাস্তুতন্ত্র থেকে উৎপন্ন জীব ভরের
পরিমান ও তার গুনমান বাস্তুতন্ত্রের এক গুরুত্বপুর্ন নির্দেশক।
গ) জলের গুনমান ও পরিমান – জীব তথা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জল অত্যাবশ্যকীয়
উপাদান। স্বাদু জলের গুনমান ও পরিমানের যথা যথ পর্যালোচনা করা পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের
অপর একটি গুরুত্ব পূর্ন নির্দেশক।
ঘ) মৃত্তিকার উর্বরতা – বিবেচনা সম্মত জমির ব্যবহার ও শস্যাবর্তন পরিবেশের
উৎপাদন শীলতা ও স্থায়িত্ব নির্দেশ করে।
ঙ) শক্তি সম্পদ - শক্তি বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের গুরুত্ব পূর্ন
উপাদান। এটি সৌরশক্তি, জীবাশ্ম জ্বালানি, ভূতাপ বিদ্যুৎ প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত
করে। বাস্তুতন্ত্রের শক্তির একমাত্র উৎস হল সূর্য।
২) অর্থনৈতিক নির্দেশক -
ইনপুট ও আউটপুট অনুপাত স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্ব
পূর্ন অর্থনৈতিক নির্দেশক। মোট জাতীয় উৎপাদক কোনো দেশের জাতীয় স্তরের নির্দশক
হিসাবে কাজ করে।
৩) সামাজিক নির্দেশক -
সামাজিক নির্দেশক হিসাবে জীবন যাত্রার মান খুবই
গুরুত্বপূর্ন। জীবনযাত্রার উচ্চ মান বাস্তুতন্ত্রের ভালো স্থায়িত্ব কে নির্দেশ
করে।
কোন মন্তব্য নেই: