বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ
মরু অঞ্চলে বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে নানা প্রকার ভূমিরুপের
সৃষ্টি হয়। মরু অঞ্চলে যখন কোন কারণে বায়ুপ্রবাহ বাধা প্রাপ্ত হয়, তখন বায়ুর সঞ্চয় কাজ শুরু হয়, এর ফলে নানা ধরণের সঞ্চয় জাত
ভূমিরূপ গঠিত হয়। বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে সাধারণত দুই রকমের ভূমিরূপ গঠিত হয় – ১) বালিয়াড়ি, ২) লোয়েশ সমভূমি
১) বালিয়াড়ি - বায়ুর প্রবাহ পথে কোনো স্থানে বাধা পেলে যে উঁচু ও দীর্ঘ ঢিবির আকারে বালির স্তুপ
গঠন করে, তাকে বালিয়াড়ি বলে। সাধারণত মরু অঞ্চলে বালিয়াড়ি
দেখা যায়।
ভূবিজ্ঞানী বাগনল্ড (১৯৫৩) – প্রকৃত বালিয়াড়ি হল এক গতিশীল বালির স্তুপ বা ভূমির গঠন
যা কোন বাধার ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে না।
বাগনল্ড বালিয়াড়িকে দুভাগে ভাগ করেন । যথা –
ক) বারখান বা অর্ধাচন্দ্রাকার বালিয়াড়ি
খ) সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি
ক) বারখান বা অর্ধাচন্দ্রাকার বালিয়াড়ি
- বায়ুর গতিপথের আড়াআড়ি
ভাবে গঠিত বালিয়াড়িকে বার্খান বলে। বারখান একটি তুর্কি শব্দ, যার অর্থ খিরগিজ স্তেপ অঞ্চলের
বালিয়াড়ি। বারখানের বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
- বারখানের সামনের দিক উত্তল ও পেছনের দিক অবতল আকৃতির হয়।
- বারখানের দুই প্রান্তে দুটি শিং এর মতো শিরা দেখা যায়।
- বারখান অস্থায়ী হয়।
- বারখানের উচ্চতা ১৫-৩০ মিটারের মতো হয়।
খ) সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি – বায়ুর গতিপথের সমান্তরালে যে সব বালিয়াড়ি গঠিত হয়, তাদের অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে। এদের মধ্যে যে সব বালিয়াড়ি খুব
লম্বা ও সরু তাদের সিফ বালিয়াড়ি বলে। আরবি শব্দ ‘সিফ’ যার অর্থ সোজা তরবারি।
বাগনল্ড এঁর মতে আড়াআড়ি ও তির্যক বায়ুপ্রবাহের যুগ্ম প্রবাহে
বারখান গুলি ভেঙে সিফ বালিয়াড়ি গঠিত হয়। সিফ বালিয়াড়ির বৈশিষ্ট্য –
- এগুলি পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করে।
- এধরনের বালিয়াড়ি লম্বায় কয়েকশো কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত ।
- সিফ বালিয়ারির উচ্চতা অনেক সময় ১০০ মিটারের বেশি হয়।
- দুটি সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী ফাঁককে করিডর বলে।
- উদাহরণ – সাহারা, কালাহারি ও থর মরুভূমিতে সিফ দেখা যায়।
বাগনন্ড ছাড়াও মেল্টন, হ্যাক, ম্যাকি প্রমুখ ভূবিজ্ঞানী বিভিন্ন প্রকারের বালিয়াড়ি চিহ্নিত
করেছেন ।
মস্তক বালিয়াড়ি – কোন শিলাখন্ডে বায়ু বাধা পেলে শিলাখন্ডের সামনে বা প্রতিবাত অংশে যে বালিয়াড়ির
সৃষ্টি হয়। তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে।
পুচ্ছ বালিয়াড়ি – বায়ু প্রবাহ শিলাখন্ডে বাধা পেলে শিলাখন্ডের অনুবাত বা বিপরীত অংশে লেজের আকারে
যে বালিয়াড়ি গঠিত হয়, তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি বলে।
অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি – মস্তক বালিয়ারির সামনে ঘূর্নির সৃষ্টি হয়ে যে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়, তাকে অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি বলে।
পাশ্বস্থ বালিয়াড়ি – শিলাখন্ডের উভয় দিকে বালুকনা সঞ্চিত হয়ে যে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়, তাকে পাশ্ব বালিয়াড়ি বলে।
চলমান বালিয়াড়ি – প্রবল বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে অনেক সময় মরু অঞ্চলে বিভিন্ন বালিয়াড়িকে সরে সরে সঞ্চিত
হতে দেখা যায়। এদের চলন্ত বালিয়াড়ি বলে।
নক্ষত্র বালিয়াড়ি – মরু অঞ্চলে সব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে কোন ছোট ঝোপের ওপর বালি সঞ্চিত হলে নক্ষত্র
বা তারার মতো বালিয়াড়ি গঠন করে।
অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি – বায়ুর অবনমনের ফলে সৃষ্ট গর্তের দুপাশে অনেক সময় চামচ বা বেলচার গর্তের মতো অধিবৃত্তের
আকারে যে বালিয়াড়ি গঠিত হয় তাদের অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি বলে। এগুলি দেখতে অনেকটা বারখানের
মতো কিন্তু এদের গঠন বারখানের বিপরীত প্রকৃতির।
২) লোয়েস বালিয়াড়ি – জার্মান শব্দ লোয়েশ এর অর্থ স্থান স্থানচ্যুত বস্তু। প্রবল বায়ু প্রবাহের প্রভাবে
অতি সূক্ষ্ম বালুকনা ( ব্যাস – ০.০৬ মিমির কম) বহু দূরে বাহিত হয়ে যে ভূমিরূপ গঠন করে, তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। লোয়েস ভূমির রং হলুদ। গোবি মরুভূমির হলদে রঙের বালু রাশি বহু দূরে চিনের হোয়াংহো অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে
লোয়েস সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
Hii
উত্তরমুছুনKi bolun
মুছুনআপনার নাম
উত্তরমুছুন