চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে সৃষ্ট কার্স্ট ভূমিরূপ সমূহ
জার্মান শব্দ কাস্ট কথাটির অর্থ হল উন্মুক্ত প্রস্তর ক্ষেত্র। ভূপৃষ্টের যে সব অঞ্চল চুনাপাথর
দ্বারা গঠিত, সেখানে ভৌমজলের কার্যের ফলে নানা ধরণের ভূমিরূপ সৃষ্টি
হয়। ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত যুগোশ্লোভিয়ার অ্যাড্রিয়াটিক উপসাগরের তীরবর্তী ডালমেশিয়ান উপকূল চুনাপাথর দ্বারা গঠিত এবং
সেখানে ভৌমজলের কার্যের ফলে এক বিশেষ ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়েছে, একে কার্স্ট বলে এবং
এই অঞ্চলটি কার্স্ট অঞ্চল নামে পরিচিত। আর এই নামানুসারে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র চুনাপাথর
জাতীয় অঞ্চলের বিশেষ ভূমিরূপকে কাস্ট ভূমিরূপ বলে।
চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের সঙ্গে চুনাপাথরের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়ে নানা ধরনের ভূমিরূপ ও জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে, একে ফাস্ট কার্স্ট ভূমিরূপ বলে।
উদাহরণ
– যুগোশ্লোভিয়ার এই অঞ্চল ছাড়া আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো, কেন্টাকি ইন্ডিয়ানা
ও টেক্সাস প্রদেশ, ফ্রান্সের সেন্ট্রাল মাসিভ অঞ্চলে, কিউবা ও জামাইকার ককপিট অঞ্চলে,
অস্ট্রেলিয়ার ব্লু পর্বত এবং ভারতের দেরাদুন ও পাঁচমারিতে এই প্রকার ভূমিরূপ দেখা যায়।
কার্স্ট
ভূমিরূপ গঠনের শর্ত – আর্দশ কার্স্ট ভূমিরূপ গঠনের জন্য নিম্নলিখিত শর্তাবলী থাকা একান্ত
প্রয়োজনীয়। যথা –
১. বিশাল
আয়তন – সমগ্র অঞ্চলটির আয়তন বিশাল হওয়ার প্রয়োজন। এর ফলে দ্রবনের কাজ ভালোভাবে হতে
পারে ও সব ধরণের কার্স্ট ভূমিরূপ উৎপন্ন হয়।
২. পুরু
বা গভীর চুনাপাথরের স্তর – বিশুদ্ধ চুনাপাথর স্তরের গভীরতা যথেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। উদাহরণ
স্বরূপ বলা যায় যে, চুনাপাথের স্তর ক্রোয়েশিয়া, মন্টিনিগ্রো ও বসনিয়া হার্জেগোভিনা অঞ্চলে ৪০০০ মিটারের বেশি, জামাইকায় ৭০০ মিটার
এবং ইয়র্কশায়ারে মাত্র ২০০ মিটার পুরু। অবিশুদ্ধ ও কমপুরু চুনাপাথর দিয়ে গঠিত অঞ্চলে
কার্স্ট ভূমিরূপের বিকাশ ব্যাহত হয়।
৩. ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি দ্রাব্য শিলার উপস্থিতি – কার্স্ট
ভূমিরূপের পূর্ন বিকাশের জন্য ভূপৃষ্ঠ বা ভূপৃষ্ঠের খুব কাছে দ্রাব্য শিলা, যেমন –
চুনাপাথর। ডলোমাইট, চক ইত্যাদি থাকা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষত চুনাপাথরের ওপর কার্স্ট
ভূমিরূপ সবথেকে ভালো তৈরি হয়।
৪. দ্রাব্য শিলার অনুকূল প্রকৃতি – দ্রাব্য শিলা বৃহদায়তন,
কেলাসিত, স্বল্প প্রবেশ্যতা, স্তরায়ন তল এবং দারণ যুক্ত হওয়া দরকার। উত্তর ইংল্যান্ডে
চুনাপাথরের মধ্যে অবস্থিত দারণ গুলি ০.৫ থেকে ১০ মিটারের বেশি প্রশস্ত। শিলার স্তরায়ন
তল বা দারণ ভূপৃষ্ঠের এবং ভূগর্ভের দ্রবন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৫. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা – সমগ্র অঞ্চলটি সমুদ্র পৃষ্ট
থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত হওয়া প্রয়োজন। এর ফলে আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভৌমজল ভালোভাবে
দ্রবনের কাজ করতে পারে। পূর্বতন যুগোস্লোভিয়ার কার্স্ট অঞ্চলের অংশ বিশেষ সমুদ্র পৃষ্ঠ
থেকে প্রায় ২০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।
৬. প্রচুর বৃষ্টিপাত – কার্স্ট ভূমিরূপ বিকাশের জন্য প্রচুর
বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন এবং এর সঙ্গে পরিমিত উদ্ভিদ ও মৃত্তিকা থাকাও বিশেষ দরকার। বছরে
মোট বৃষ্টিপাতের দ্রবন প্রক্রিয়া বিশেষ ভাবে ব্যাহত হয়। এই কারণে মরু অঞ্চলে চুনাপাথর
থাকলেও কার্স্ট ভূমিরূপ তৈরি হয় না।
৭. প্রচুর ভৌমজলের জোগান – চুনাপাথর বা দ্রাব্য শিলাস্তরের
নীচে প্রচুর ভৌমজল থাকলে চুনাপাথর তাড়াতাড়ি দ্রবীভূত হয়। ফলে কার্স্ট ভূমিরূপ দ্রুত
গড়ে ওঠে।
চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে গঠিত কার্স্ট ভূমিরূপ সমূহ
চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের সঙ্গে চুনাপাথরের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়ে নানা ধরণের ভূমিরূপ ও জলনির্গমন প্রনালী গড়ে ওঠে। দ্রবন কার্যের ফলে কার্স্ট অঞ্চলে যে সব ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাদের অবস্থান ও প্রকৃতি অনুযায়ী ৪ টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
ক) পৃষ্টীয় ভূমিরূপ –
১. টেরা রোসা – Terra শব্দটির অর্থ হলো মৃত্তিকা এবং Rossa শব্দের অর্থ হলো লাল। সাধারণত মৃদু ঢালযুক্ত চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে কার্বনিক
অ্যাসিড মিশ্রিত জলে বিশুদ্ধ চুনাপাথর দ্রবীভূত হলে অদ্রাব্য শুষ্ক লৌহের যৌগ ভূপৃষ্টের
ওপর পড়ে থেকে কালক্রমে আম্লিক লাল অবক্ষেপের সৃষ্টি করে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে একে টেরারোসা
বলে।
২. ল্যাপিস ও কারেন – অধিক ঢাল যুক্ত চুনাপাথর অঞ্চলে দ্রবন কার্যের ফলে শিলাপৃষ্টে অসংখ্য অগভীর রৈখিক খাতের সৃষ্টি
হয় এবং পরস্পরের সমান্তরালে বিন্যস্ত খাত গুলিতীক্ষ্ণশীর্ষ দেশ দ্বারা বিভক্ত হয়ে যে
খাত বিশিষ্ট ভূমিরূপ গঠিত হয়, ফরাসি ভাষায় তাকে ল্যাপিস এবং
জার্মান ভাষায় কারেন বলে।
৩. গ্রাইক ও ক্লিন্ট – দ্রবন কার্যের ফলে চুনাপাথরে দারণ বা সন্ধিস্থল বরাবর
গভীর রৈখিক ও দীর্ঘ গর্ত সৃষ্টি হলে, তাকে গ্রাইকস বলে আবার দুটি
গ্রাইকের মধ্যবর্তী প্রায় সমতল পৃষ্ট বিশিষ্ট আয়তাকার উঁচু শিলাখন্ডকে ক্লিন্টস বলে।
উদা – মধ্যপ্রদেশের নন্দিনী
খনি অঞ্চলে গ্রাইকস ও ক্লিন্ট দেখা যায়।
খ) অবনমিত ভূমিরূপ
১. সিঙ্ক হোল – কার্স্ট অঞ্চলে দ্রবন প্রক্রিয়ায় অসংখ্য ছোট ছোট গর্তের
সৃষ্টি হয়, এদের মধ্যে দিয়ে জল সহজেই ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে, এই ধরণের উন্মুক্ত গহ্বরমুখকে
সোয়ালো হোল বলে।
২. সোয়ালো হোল – কাস্ট অঞ্চলে দ্রবন কার্যের ফলে যে ফাঁদল আকৃতির অবনমিত
ভূভাগ গঠিত হয়, তাকে সিঙ্কহোল বলে। এটি কয়েক সেমি থেকে কয়েক মিটার
গভীর হতে পারে।
৩. পোনর - সোয়ালো হোল থেকে ভূ-অভ্যন্তরে বিস্তৃত সুরঙ্গ পথটি পোনর নামে পরিচিত।
৪. ডোলাইন - সার্বিয়ান শব্দ Dolina থেকে ডোলাইন শব্দটি উঠে এসেছে যার অর্থ ভূভাগের অবনমন। তাই বলা যায় ডোলাইন সিঙ্ক হোলের নামান্তর। বিশুদ্ধ চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে এবং শুষ্ক নদী উপত্যকায় অসংখ্য ডোলাইন দেখতে পাওয়া যায়। অধিকাংশ ডলার ব্যয় 50 থেকে 100 মিটার এবং গভীরতা 2 থেকে 10 মিটার হয়ে থাকে।
উৎপত্তি অনুসারে ডোলাইন কে 5 ভাগে ভাগ করা যায় - a) দ্রবণ ডোলাইন। b) ধ্বস ডোলাইন c) দ্রবন পাইপ ডোলাইন d) অবনমিত ডোলাইন e) ককপিট ডোলাইন।
৫. উভালা – চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে সৃষ্ট সিঙ্কহোল গুলি কার্বনিক অ্যাসিড
মিশ্রিত জলের দ্রবন কার্যের ফলে ক্রমশ মিলিত হয়ে যে বৃহদাকার গহ্বরের সৃষ্টি করে, তাকে উভালা বলে।
৬. পোলজে – চুনাপাথর অঞ্চলে দ্রবন কার্যের ফলে সৃষ্ট উভালা অপেক্ষা
বিশালাকার, দীর্ঘাকার, খাড়া পাশ্বদেশ বিশিষ্ট গর্তকে
পোলজে বলে।
উদা – পশ্চিম বাল্কান
প্রদেশে পৃথিবীর দীর্ঘতম লিভনো পোলজেটি দেখা যায়।
৭. হামস – পোলজের ভিতরে চুনাপাথর স্তরের কিছু অংশ ক্ষয় কাজ প্রতিরোধ
করে টিলার আকারে দাঁড়িয়ে থাকে, এই রূপ টিলা গুলিকে হামস বলে। হামস গুলি আবার কোন কোন অঞ্চলে
হে স্ট্যাক বা পেপিনো পাহাড় নামে পরিচিত।
গ) নদীর দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
১. অন্ধ ও শুষ্ক উপত্যকা – কার্স্ট অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদী সিঙ্ক হোলের মধ্যে প্রবেশ করে নদী উপত্যকা
সিঙ্কহোল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। কার্স্ট অঞ্চলের এই রূপ উপত্যকাকে
অন্ধ উপত্যকা বলে।
পূর্বেকার নদী উপত্যকার কোন স্থানে নদীর সব জল সিঙ্কহোলের
মধ্যে প্রবেশ করলে নদী উপত্যকার নিম্ন অংশ শুষ্ক উপত্যকা রূপে অবস্থান করে।
২. প্রাকৃতিক সেতু ও প্রাকৃতিক
সুরঙ্গ – কার্স্ট অঞ্চলে ভূপৃষ্টের তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে
দ্রবন কার্যের মাধ্যমে ভূগর্ভে সুরঙ্গ পথ তৈরি হয়। সুরঙ্গ পথ দিয়ে প্রবাহিত নদী অন্তঃনিহিত হলে সুরঙ্গ
পথটি প্রাকৃতিক সুরঙ্গ রূপে অবস্থান করে।
ভূ-অভ্যন্তরস্থ খাতের ওপরের ছাদ
ধসে গিয়ে এর আয়তন সংকুচিত হয়। ফলে ধসে না যাওয়া ছাদ খাতের একপাশ থেকে অন্য পাশে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত
হতে পারে।
৩. কার্স্ট বাতায়ন বা গবাক্ষ – চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ নদী যে সুরঙ্গ পথের মধ্যে
দিয়ে প্রবাহিত সেই সুরঙ্গের ছাদ যে অংশে ধ্বসে পড়ে, সেখানে ভূপৃষ্ট থেকে ভূ-গর্ভস্থ নদীকে দেখা যায়, জানালার মতো এরূপ অংশ কে কার্স্ট বাতায়ন বলে।
ঘ) ক্ষয়জাত ভূমিরূপ
১. গুহা – ভূ-অভ্যন্তরে স্বাভাবিক শূন্য স্থানকে
গুহা বলে। কার্স্ট অঞ্চলে দ্রবনীয় শিলাস্তরের ফাটল ও সন্ধিস্থল দিয়ে অ্যাসিড মিশ্রিত জল ভূ-গর্ভে প্রবেশ করলে ভূঅভ্যন্তরে গুহার সৃষ্টি হয়। উদাহরন – সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতের হোলক এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের
কেনটাকি প্রদেশের মামদ নামক গুহা বিখ্যাত।
ভৌমজলের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সমূহ
চুনাপাথরের গুহার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দ্রবীভূত এবং ক্ষয়জাত পদার্থ সমূহ সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়জাত ভূমিরূপের উদ্ভব হয়। এই সব সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ গুলিকে একত্রে স্পিলিওথেম বলা হয়। অনেক এগুলিকে কেভ ট্র্যাভারটিন নামে অভিহিত করেন।
গুহার অভ্যন্তরে যে সব ভূমিরূপ গঠিত হয় বিজ্ঞানী ডেভিস সেগুলিকে একত্রে ড্রিপস্টোন নামে আখ্যা দিয়েছেন। চুনাপাথরের গুহায় সঞ্চয়জাত উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ গুলি হল -
১. স্ট্যালাকটাইট - গুহার ছাদ থেকে দ্রবীভূত চুনাপাথর মিশ্রিত জল ফোটার আকারে মেঝেতে পড়ার আগেই বাস্পীভূত হয় এবং ক্যালসিয়াম দন্ড রূপে ঝুলতে থাকে। এইভাবে গুহার ছাদ থেকে ছুলতে থাকা দীর্ঘ স্তম্ভের মত ভূমিরূপ কে স্ট্যালাকটাইট বলে।
২. স্ট্যালাকমাইট - গুহার ছাদ থেকে দ্রবীভূত চুনাপাথর মিশ্রিত জল গুহার মেঝেতে ফোটা ফোটা রূপে সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ স্তম্ভের আকারে ওপরের দিকে বাড়তে থাকে, একে স্ট্যালাকটাইট বলে।
৩. স্তম্ভ - দীর্ঘদিন ধরে চুনাপাথরের প্রক্রিয়া চলার ফলে কখনো কখনো গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত স্ট্যালাকটাইট ও মেঝে থেকে উত্থিত স্ট্যালাকমাইটের মিলন হয় এবং উভয়ে যুক্ত হয়ে স্তম্ভ বা পিলার তৈরি হয়।
ভারতের দেরাদুনের নিকট তপকেশ্বর এবং মেঘালয়ের চেরা মাল্ভূমিতে এ জাতীয় ভূমিরূপ দেখা যায়।
ভৌমজলের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সমূহ
চুনাপাথরের গুহার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দ্রবীভূত এবং ক্ষয়জাত পদার্থ সমূহ সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়জাত ভূমিরূপের উদ্ভব হয়। এই সব সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ গুলিকে একত্রে স্পিলিওথেম বলা হয়। অনেক এগুলিকে কেভ ট্র্যাভারটিন নামে অভিহিত করেন।
গুহার অভ্যন্তরে যে সব ভূমিরূপ গঠিত হয় বিজ্ঞানী ডেভিস সেগুলিকে একত্রে ড্রিপস্টোন নামে আখ্যা দিয়েছেন। চুনাপাথরের গুহায় সঞ্চয়জাত উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ গুলি হল -
১. স্ট্যালাকটাইট - গুহার ছাদ থেকে দ্রবীভূত চুনাপাথর মিশ্রিত জল ফোটার আকারে মেঝেতে পড়ার আগেই বাস্পীভূত হয় এবং ক্যালসিয়াম দন্ড রূপে ঝুলতে থাকে। এইভাবে গুহার ছাদ থেকে ছুলতে থাকা দীর্ঘ স্তম্ভের মত ভূমিরূপ কে স্ট্যালাকটাইট বলে।
২. স্ট্যালাকমাইট - গুহার ছাদ থেকে দ্রবীভূত চুনাপাথর মিশ্রিত জল গুহার মেঝেতে ফোটা ফোটা রূপে সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ স্তম্ভের আকারে ওপরের দিকে বাড়তে থাকে, একে স্ট্যালাকটাইট বলে।
৩. স্তম্ভ - দীর্ঘদিন ধরে চুনাপাথরের প্রক্রিয়া চলার ফলে কখনো কখনো গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত স্ট্যালাকটাইট ও মেঝে থেকে উত্থিত স্ট্যালাকমাইটের মিলন হয় এবং উভয়ে যুক্ত হয়ে স্তম্ভ বা পিলার তৈরি হয়।
ভারতের দেরাদুনের নিকট তপকেশ্বর এবং মেঘালয়ের চেরা মাল্ভূমিতে এ জাতীয় ভূমিরূপ দেখা যায়।
৪. হেলিকটাইট, গ্লোবিউলাইট - চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে দণ্ড গুলি তির্যক, বক্র ও পার্শ্ববরাবর নির্গত হলে, সেগুলিকে একত্রে হেলিকটাইট বলে। গোলাকৃতি হেলিকটাইট গুলি গ্লোবিউলাইট নামে পরিচিত।
মানব জীবনে কার্স্ট ভূমিরূপের প্রভাব
কার্স্ট ভূমিরূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ
ভাবে নানাদিক থেকে মানুষের কর্মধারাকে প্রভাবিত করে, তা নিচে আলোচনা করা হল –
১. কৃষিকাজ – চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে
প্রস্রবণ দিয়ে ভৌমজল বেরিয়ে আসে এবং তা দিয়ে ভূমি ঢালের নিচের দিকে কৃষিকাজ করা হয়।
যেমন – যুগোশ্লোভিয়া, হাঙ্গরি এবং অস্ট্রেলিয়াতে এভাবে কৃষিকাজ হয়।
২. পানীয় জল সরবরাহ – কার্স্ট অঞ্চলে
বা চুনা পাথর যুক্ত অঞ্চলে ভোমজল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করা হয়। উত্তর ফ্রান্সের শিল্পাঞ্চলে,
পোলান্ডের শিল্পাঞ্চলের চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে ভৌমজল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করা হয়।
৩. খনিজ দ্রব্যের আধার – কার্স্ট অঞ্চল
থেকে নানা ধরণের খনিজ দ্রব্য, যথা – ফসফেট, ক্যালসাইড, ট্যাল্ক, কেলাসিত চুনাপাথর প্রভৃতি
পাওয়া যায়।
৪. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র – চুনাপাথর
অঞ্চলে ভৌমজল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ইতালিতে মেটসে এবং ক্যানটা তে ভৌমজল বিদ্যুৎ
কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে।
৫. পর্যটন শিল্প – চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে
বা কার্স্ট অঞ্চলে পর্যটন শিল্প কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে। ভারতের দেরাদুন, তপকেশ্বর এবং মেঘালয়ের
শিলং শহরে আসে পাশে অনেক গুহা রয়েছে, সেখানে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠেছে।
৬. হোটেল শিল্প – পর্যটন শিল্পের পরিপূরক
শিল্প হিসাবে হোটেল শিল্পের বিকাশ ঘটে।
৭. ভূ-তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র – কার্স্ট
অঞ্চলে উষ্ণ প্রস্রবণ ও গিজারের তাপ প্রবাহের সাহায্যে ভূ-তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে
ওঠে। হাঙ্গরিতে ভূতাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
৮. পশুপালন – কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজল
কে কেন্দ্র করে যে তৃনভূমি সৃষ্টি হয় সেখানে পশুপালন করা হয়।
৯. শ্রাত কেন্দ্র – কার্স্ট অঞ্চলে
অনেক সময় ক্ষয় রোধ এবং সদ্য রোগ মুক্ত রোগীদের স্বস্তি নিবাস রূপে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এই ধরণের অনেক স্বস্তি নিবাস গড়ে ওঠেছে।
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত এর জীবনচক্র ব্যাখ্যা করো চিত্রসহ
উত্তরমুছুন