সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ সমূহ
সমুদ্র উপকূলে তরঙ্গ বাহিত ক্ষয়জাত পদার্থের সঞ্চয় ঘটে, ফলে নানা রকম সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ গঠিত হয়। স্থলভাগ ও জলভাগ উভয়ক্ষেত্র
থেকে সমুদ্র সৈকতে পদার্থের সঞ্চয় ঘটে। ব্যাকওয়াস অপেক্ষা সোয়াস তরঙ্গের দ্বারা সঞ্চয় কাজ বেশি হয়। সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে সমুদ্র সৈকতে গঠিত ভূমিরূপ গুলি হল –
১. সমুদ্র সৈকত বা বেলাভূমি – তটভূমির উপর তরঙ্গবাহিত নানা আকৃতির শিলাখন্ড নুড়ি, কাঁকর, বালি ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে সমুদ্রের
দিকে যে ঈষৎ ঢালু প্রায় সমতলভূমি গড়ে ওঠে, তাকে বলা হয় সমুদ্র সৈকত বা বেলাভূমি। ভূবিজ্ঞানী মঙ্কহাউসের মতে, জোয়ারের নিম্ন জলতল থেকে ঝটিকা তরঙ্গের তরঙ্গের দ্বারা প্রভাবিত সর্বোচ্চ সিমারেখা
পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে সঞ্চিত বস্তুভারকে সৈকত বা বেলাভূমি বলে।
২. সামুদ্রিক বাঁধ – তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে অগভীর সমুদ্রের বুকে উপকূলের
সমান্তরালে বা অর্ধাচন্দ্রাকারে বালি, কাঁকর জমা হয়ে নতুন ভূভাগ গড়ে
ওঠে, এরুপ বাঁধের আকারে গঠিত ভূভাগ সামুদ্রিক বাঁধ নামে পরিচিত।
সাধারণত উপকূলের মুখে বা নদী মোহনার সন্নিকটে সামুদ্রিক
বাঁধ গুলি আড়াআড়ি ভাবে গড়ে ওঠে।
প্রকৃতি ও গঠন অনুসারে সামুদ্রিক বাঁধকে তিনভাগে ভাগ করা
যায় –
ক) পুরোদেশীয় বাঁধ – উপকূলের প্রায় সমান্তরালে কোন নদী মোহনার সাথে আড়াআড়ি
ভাবে দীর্ঘ বাঁধের সৃষ্টি হলে, তাকে পুরোদেশীয় বাঁধ বলে। এরুপ বাঁধের পেছনে অর্থাৎ স্থলভাগের
দিকে সমুদ্রের জলরাশি আবদ্ধ হয়েজলাভূমি ও উপহ্রদের সৃষ্টি করে।
উদাহরণ – ভারতের চিল্কা হ্রদের
সন্নিকটে গঞ্জাম থেকে রসিকুল্য পর্যন্ত একটি পুরোদেশীয় বাঁধের অবস্থান রয়েছে।
খ) বেরিয়ার বীচ – উপকূলে অবস্থিত উপহ্রদের অপর দিকে অনেক সময় সামুদ্রিক
বাঁধ সৃষ্টি হতে দেখা যায়, এরুপ উপহ্রদ দ্বারা উপকূল থেকে
বিচ্ছিন্ন বাঁধকে বেরিয়ার বীচ বলে।
উদাহরণ – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের
নিঊ জার্সি থেকে ফ্লোরিডা পর্যন্ত বিস্তৃত আটলান্টিক উপকূলে বেরিয়ার বীচ দেখতে পাওয়া
যায়।
গ) টম্বোলো – উপকূলের সন্নিকটে অবস্থিত কোন দ্বীপকে অনেক সময় বাঁধ দ্বারা
উপকূলের সাথে যুক্ত হতে দেখা যায়, এরুপ দ্বীপ সংযোগকারী বাঁধকে
বলা হয় টম্বোলো ।
উদাহরণ – গ্রেট ব্রিটেনের সন্নিকটে অবস্থিত
পোর্টল্যান্ড দ্বীপটি চেলসি সৈকতের সঙ্গে একটি টম্বোলো দ্বারা যুক্ত।
ঘ) স্পিট – অনেক সময় অগভীর সমুদ্রের বুকে নুড়ি, কাঁকর
ইত্যাদি জমে একটি নতুন ভূভাগ গড়ে ওঠে। রেখার আকারে উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে
প্রসারিত বা অভিক্ষিপ্ত হয়। এরুপ উপকূল ভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বিস্তৃত রেখা
আকৃতির স্থলভাগকে স্পিট বলে।
প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্পিট আবার দুভাগে
বিভক্ত ।
অ) হুক স্পিট – সমুদ্রের মধ্যে অভিক্ষিপ্ত কোন
স্পিটের আকৃতি সাঁড়াশির মতো বা বাঁকানো হুকের মতো হলে তাকে হুক বা কার্ভড স্পিট
বলে।
আ) তীক্ষাগ্র পুরোভূমি বা ক্যাস্পেট ফোরল্যান্ড – একাধিক
কার্ভড স্পিট সমুদ্রের মধ্যে পরস্পর মিলিত হয়ে সেখানকার তটভূমি ক্রমশ সমুদ্রের
দিকে প্রসারিত হতে থাকে। এর ফলে সেখানে একটি ত্রিকোনাকৃতি ভূখন্ড বা অন্তরীপ গড়ে
ওঠে। একেই বলে তীক্ষাগ্র পুরোভূমি বা ক্যাস্পেট ফোরল্যান্ড।
কোন মন্তব্য নেই: