মৃত্তিকা পরিলেখের বিভিন্ন স্তর সমূহ
ভূ-পৃষ্ট থেকে নিচের দিকে আদিশিলা
পর্যন্ত পরপর মাটির সুবিন্যাস্ত স্তর সমূহের উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদকে মৃত্তিকা পরিলেখ
বলে। হিউমিফিকেশন, খনিজিকরন, এলুভিয়েশন ও এলুভিয়েশন প্রভৃতি
মৃৎ উৎপাদী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবিন্যস্ত রেগোলিথের মধ্যে চূর্নীকৃত ও বিয়োজিত শিলা
সমূহ অনুভূমিক ভাবে বিন্যস্ত হয়ে হোরাইজোন বা স্তর তৈরি করে। রুশ বিজ্ঞানী ডকুচেভ প্রথম স্তরায়ন
তথা মৃত্তিকা পরিলেখের কথা উল্লেখ করেন।
মৃত্তিকা স্তর বা হোরাইজোন – মাটির গঠন প্রক্রিয়া সমূহের প্রভাবে উৎপন্ন এবং ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বিস্তৃত এক
একটি পাতলা অথচ সুস্পষ্ট বিভাজিত অংশ কে মাটির হোরাইজন বা স্তর বলে। এক একটি স্তর পৃথক পৃথক ভৌত
রাসায়নিক উপাদান এবং জৈব পদার্থে পূর্ন থাকে। একমাত্র পরিনত মৃত্তিকায় সব
স্তর থাকে। মৃত্তিকার বিভিন্ন স্তর গুলির নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা
হল –
বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক, জৈবিক পরিবেশ ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে মৃত্তিকা বিজ্ঞানীগন
একটি পরিনত মৃত্তিকার পরিলেখকে চারটি প্রধান স্তরে ভাগ করেন, যথা – O, A, B, ও C স্তর । আবার এই চারটি স্তরকে জৈব ও অজৈব পদার্থের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে মৃত্তিকা
পরিলেখকে দুইভাগে ভাগ করা যায়, যথা – জৈবিক স্তর ও খনিজ স্তর।
১. জৈবিক স্তর (O স্তর) – মৃত্তিকা পরিলেখের
উপরের স্তরে জৈব বর্জ্যের পতিত হয়। এই জৈব বর্জ্যগুলি বিয়োজকের দ্বারা বিয়োজিত হয়ে কালো রঙের জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ একটি
জৈবিক স্তর গঠন করে। এই জৈবিক স্তরটিকে O স্তর বলা হয়।
জৈব পদার্থের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে জৈবিক স্তর কে তিনটি
উপবিভাগে ভাগ করা হয়।
ক) Oi স্তর – জৈবিক স্তরের উপরের অংশ যেখানে সদ্য পতিত পাতা, ফুল, ফল, কাণ্ড ও মৃত জীব দেহের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
খ) Oe স্তর - Oi স্তরের নিচের উপস্তরটি Oe স্তর নামে পরিচিত। এখানে আংশিক বা অর্ধবিয়োজিত জৈব পদার্থ থাকে।
গ) Oa স্তর – জৈবিক স্তরের সর্বনিম্ন স্তর, এই স্তরের জৈব পদার্থ গুলি সম্পূর্নভাবে বিয়োজিত। এই উপস্তরের রঙ ঘন কালো হয়।
সরলবর্গীয় বনভূমি অঞ্চলের এই জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ‘O’ স্তরটি ডাফ (Duff) নামে এবং পর্নমোচী
অরন্যের জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ‘O’ স্তরটি মাল (Mull) নামে পরিচিত।
2. খনিজ স্তর – জৈবিক স্তরের নিচে
মৃত্তিকায় সাধারণত খনিজ পদার্থের সমন্বয় দেখা যায়, তাই O স্তরের নিম্নের স্তর গুলিকে খনিজ স্তর বলে। খনিজ স্তরের অন্তর্ভুক্ত প্রধান
স্তর গুলি হল – A স্তর, B স্তর, ও C স্তর।
ক) A স্তর বা হোরাইজোন – জৈবিক স্তরের ঠিক নিচের স্তর A স্তর বা হোরাইজোন নামে পরিচিত। এই স্তরটি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মৃত্তিকা
কনা দ্বারা গঠিত। এই স্তরটি জৈবিক এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। A স্তরের উপরের অংশ জৈব স্তরের সন্নিকটে থাকে বলে উপরের
অংশের রঙ বা বর্ন কালো হয়। দ্রবীভূত পদার্থ সমূহ A স্তর থেকে এলুভিয়েশন অর্থাৎ
ধৌত প্রক্রিয়ায় অপসারিত হয় বলে, এই স্তর কে ধৌত স্তর বা এলুভিয়াল
স্তর বলে। ধৌত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে এই স্তরটি কর্দম কনা ও খনিজ শূন্য হয়ে পরে। তাই এই স্তরের নিম্ন অংশের রঙ
হালকা হয়।
E স্তর বা হোরাইজোন - A স্তরের নিম্নে E স্তর বা হোরাইজোন গঠিত হয়। এখানে এলুভিয়েশন প্রক্রিয়ার
প্রাধান্য দেখা যায়। E স্তর থেকে সিলিকা, কর্দম, লৌহ, অ্যালুমিনিয়াম ও অন্যান্য অক্সাইড ধৌত বা লিচিং প্রক্রিয়ায়
অপসারিত হয় বলে এই স্তর ধূসর বা সাদা রঙের হয়।
খ) B স্তর বা হোরাইজোন - A স্তরের নিচের স্তর B স্তর বা হোরাইজোন নামে পরিচিত। ধৌত প্রক্রিয়ায় উপরের স্তর থেকে যে সব পদার্থ অপসারিত হয় ইলুভিয়েশন প্রক্রিয়ায়
সে সব পদার্থগুলি মাটির B স্তরে এসে সঞ্চিত
হয়। B স্তরে ওপরের স্তর থেকে বাহিত পদার্থ সমূহ এসে সঞ্চিত হয় বলে, এই স্তরটিকে পুষ্টিমৌলের ভাণ্ডার বলা হয়। এই স্তরের রঙ গাঢ় হয়। B স্তরে ইলুভিয়েশন
প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে, একে ইলুভিয়াল স্তরও বলা হয়। B স্তরের গভীরতা বেশি
হয়।
গ) C স্তর বা হোরাইজোন – মৃত্তিকা পরিলেখের সর্বনিম্ন স্তরটি C স্তর নামে পরিচিত। এই স্তরটি আংশিক বা সম্পূর্ন
ভাবে শিলাচূর্ন দ্বারা সৃষ্ট। এই স্তরটি আদিশিলা ও মৃত্তিকার মধ্যে সংযোগ সাধনকারী স্তর।
ঘ) আদিশিলা (D/R স্তর) - C স্তরের নিম্নে আদিশিলা
অবস্থান করে। এই আদিশিলা বা জনক শিলা নিদিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আবহবিকার গ্রস্থ হয়ে জৈব পদার্থের
সমন্বয়ে মৃত্তিকায় পরিনত হয়।
উপরিউক্ত স্তর গুলি যে মৃত্তিকার পরিলেখে দেখা যায়, তাকে আদর্শ মৃত্তিকা বলে। কেবল মাত্র পডসল মৃত্তিকায় উপরিক্ত
সব গুলি স্তর বা হোরাইজোনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, তাই পডসল মৃত্তিকাকে আদর্শ মৃত্তিকা বলা হয়।
কোন মন্তব্য নেই: