জেট স্ট্রিম কাকে বলে
জেট স্ট্রিম বায়ুমণ্ডলের ঊদ্ধ ট্রপোস্ফিয়ারে প্রবাহিত দ্রুতগতি সম্পন্ন জিওস্ট্রপিক বায়ু যা সর্পিলাকারে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। জেট স্ট্রিম বায়ু জিওস্ট্রপিক বায়ু, রসবি তরঙ্গ ও থার্মাল উইন্ড নামেও পরিচিত। জেট স্ট্রিম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন সিলকফ (Seilkolf) ১৯৩৯ সালে।
জেট বায়ু কে জিওস্ট্রপিক বায়ু বলে কেন
যেহেতু জেটস্ট্রিম ট্রপোস্ফিয়ারের উদ্ধসীমা দিয়ে বয়ে যায় বলে এটি ভূ-পৃষ্টের ঘর্ষন জনিত বাধা থেকে মুক্ত থাকে এবং জেট বায়ু কেবল মাত্র চাপ ঢাল ও কোরিওলিস বলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই জেট বায়ুকে জিওস্ট্রপিক উইন্ড বলা হয়। যখন বায়ুর চাপ ঢাল ও কোরিওলিস বল সমান হয়, তখন বায়ু চাপবলয় গুলির সমান্তরালে প্রবাহিত হয়।
রসবি তরঙ্গ - জেটবায়ুতে যে তরঙ্গ বা সর্পিলাকারে বাঁক দেখা যায়, সেই বাঁক গুলিকে রসবি তরঙ্গ বলে। রসবি তরঙ্গে মেরু বায়ু নিরক্ষরেখার দিকে এবং ক্রান্তীয় বায়ু মেরু বায়ুর দিকে বেঁকে থাকে।
জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য -
১. জেট বায়ু কয়েকশো কিমি প্রশস্থ পথে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমা বরাবর প্রবাহিত হয়।
২. জেট বায়ু গড়ে হাজার কিমি দৈর্ঘ্য , কয়েকশো কিমি প্রশস্ত ও মাত্র কয়েক কিমি গভীরতা বিশিষ্ট হয়।
৩. জেট বায়ু উভয় গোলার্ধে ২০ ডিগ্রি থেকে মেরু বিন্দুর মধ্যে দিয়ে চক্রাকারে আবর্তন করে।
৪. জেট স্ট্রিম ঘন্টায় ১০০ কিমি থেকে ৪০০ কিমির বেশি বেগে প্রবাহিত হয়।
৫. জেট বায়ুর গতির ঋতুভিত্তিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শীতকালে জেট বায়ুর গতি গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত জেট বায়ুর গতির থেকে দ্বিগুণ বেশি হয়। শীতকালে জেটবায়ুর গতি অনেক সময় প্রতি ঘন্টায় ৪৮০ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৬. জেট বায়ু প্রধানত শীতকালে প্রবাহিত হয়।
৭. জেট বায়ু তরঙ্গের আকারে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। ৫ থেকে ৬ টি তরঙ্গ সম্পন্নিত একটি জেট সারা পৃথিবীকে বেষ্টন করে থাকে।
জেট স্ট্রিমের প্রকার ভেদ
জেট স্ট্রিম প্রধানত দুই প্রকার – উপক্রান্তীয় জেট স্ট্রিম ও মেরু জেট স্ট্রিম । এছাড়া আরো এক প্রকার অস্থায়ী জেট হল ক্রান্তীয় জেট।
উপক্রান্তীয় জেট স্ট্রিম –
- উপক্রান্তীয় জেট স্ট্রিম শীত কালে উত্তর ও দক্ষিন উভয় গোলার্ধে অবিচ্ছিন্ন ভাবে বিস্তৃত।
- উভয় গোলার্ধে এটি ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থান করে।
- এটি দক্ষিন গোলার্ধে সারাবছর বিদ্যমান থাকলেও উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে উত্তর মুখী সরনের ফলে এটি কিছু সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে।
- উপক্রান্তীয় জেট স্ট্রিম ভারত ও আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
- ভূ-পৃষ্ট থেকে উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৬ কিমি।
- উপক্রান্তীয় জেট সাধারণত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
মেরু জেট স্ট্রিম –
- সবচেয়ে শক্তিশালী জেট বায়ু হল মেরু জেট।
- মেরু জেট বায়ু সূর্য কে অনুসরন করে অর্থাৎ গ্রীস্মকালে এটি কিছুটা উত্তর দিকে সরে যায় এবং শীতকালে এটি দক্ষিন দিকে সরে আসে।
- মেরু জেট বায়ু মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলে মেরু সীমান্ত সৃষ্টিতে গুরুত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করে।
- শীতকালে মেরু জেটের গতি সবথেকে বেশি হয়।
- জেট বায়ু বলতে সাধারণত মেরু জেটকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
- মেরু জেট ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশের নিকটবর্তী অঞ্চলের জলবায়ুকে গভীর ভাবে নিয়ন্ত্রন করে।
- এটি নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতের প্রবাহ দিক ও গতি নিয়ন্ত্রন করে।
ক্রান্তীয় জেট বায়ু
- এই অস্থায়ী ক্রান্তীয় জেট বায়ুটি উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে আবির্ভূত হয়।
- ক্রান্তীয় জেট সাধারণত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। তাই এঁকে পূর্বালি জেটও বলা হয়ে থাকে।
- এটি নিম্ন ট্রপোস্ফিয়ারের একটি উচ্চ গতিবেগ সম্পন্ন বায়ু, তাই ক্রান্তীয় জেট কে Low
Level Jet বলে।
- ক্রান্তীয় জেটের উদাহরণ হল – সোমালী জেট ও আফ্রিকান পূর্বালী জেট।
- ক্রান্তীয় জেটের আগমন মৌসুমি বায়ুকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে।
আবহাওয়ার উপর জেট বায়ুর প্রভাব
১. জেট স্ট্রিম বায়ুর আদান প্রদানের মাধ্যমে অক্ষাংশীয় তাপ বাজেটে সাহায্য করে।
২. উপক্রান্তীয় ও ক্রান্তীয় জেট বায়ু ভারতবর্ষ তথা দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় মৌসুমি বায়ু নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
৩. জেট বায়ু বায়ুপুঞ্জের চলাচল কেও প্রভাবিত করে, যার ফলে খরা বা বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
কোন মন্তব্য নেই: