ভৌমজল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ভৌমজল । ভৌমজলতল । ভৌমজলতলের উৎস । আবহিক জল । সহজাত জল । উৎসন্দ্য জল । ভৌমজলস্তর বিন্যাস । ভাদোস জল । ফ্রিয়েটিক জল । অ্যাকুইফার । অ্যাকুইটার্ড । অ্যাকুইফিউজ । অ্যাকুইক্লুড । ভৌমজলের নিয়ন্ত্রক ।। বিস্তারিত আলোচনা ।।

সাধারনভাবে মাটির নিচে যে জল পাওয়া যায়, তাকে ভৌমজল বলে বৃষ্টির জল এবং তুষারগলা জলের যে অংশ ভূপৃষ্ঠের প্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং ভূ-গর্ভের মধ্যে অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপর অবস্থিত প্রবেশ্য শিলাস্তরকে সম্পূর্নরূপে সম্পৃক্ত করে, তাকে ভৌমজল বলে অর্থাৎ ভৌম জল হল সেই উপপৃষ্ঠীয় জল যা শিলারন্ধ্র গুলিকে সম্পূর্ন রূপে সম্পৃক্ত করে এবং অভিকর্ষীয় প্রভাবের দ্বারা প্রতিক্রিয়া করে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তরে সঞ্চিত জলরাশির শীর্ষ দেশ যোগ করলে যে কাল্পনিক রেখা পাওয়া যায়, তাকে ভৌমজলতল বলে ভূমিভাগের উচ্চতা বিশেষে যেমন ভৌমজলতলের উচ্চতার হ্রাস বৃদ্ধি হয় তেমনি ঋতু ভেদেও ভৌমজলতলের উচ্চতার হ্রাস বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়  

ভৌমজলের উৎস - ভৌমজলের প্রধান উৎস গুলি হল বৃষ্টির জল, হিমবাহ গলা জল কিন্তু আরও নানা প্রকারের জল ভূ-অভ্যন্তরে থাকে, এসবই ভৌমজলের অন্তর্গত ভৌমজলের প্রধান উৎস গুলি হল -

) আবহিক জলবৃষ্টির জল, তুষার গলা জল, নদীর জল, হ্রদের জল এবং অন্যান্য জলাশয়ের জল ভূ-পৃষ্টের সছিদ্র শিলাস্তরের মধ্যে দিয়ে অনুস্রাবন প্রক্রিয়ায় ভূ-গর্ভে এসে সঞ্চিত হয় তাকে আবহিক জল বলে

) সহজাত জল - সমুদ্র এবং  হ্রদের তলদেশে সঞ্চিত পলিরাশি থেকে পাললিক শিলা গঠন কালে শিলাস্তরের মধ্যে কিছু জল থেকে যায়, তাকে সহজাত জল বলে

) উৎসন্দ্য জলভূ-গর্ভস্থ ম্যাগমার সাথে উপস্থিত জলীয় বাষ্প, আগ্নেয় ক্রিয়ার সময় ম্যাগমার সাথে ভূ-গর্ভের বাইরে বেরিয়ে আসে এই খনিজ পদার্থ মিশ্রিত উত্তপ্ত জলকে ম্যাগনেটিক জল বলেম্যাগনেটিক জল অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-গর্ভ থেকে প্রথমবার ভূ-পৃষ্ঠের ওপর উঠে আসে বলে, তাকে উৎসন্দ্য জল বলে  

) মহাসাগরীয় জলঅনেক সময় সমুদ্রের উপকূলবর্তী প্রবেশ্য শিলার মধ্যে দিয়ে সমুদ্রের কিছু জল অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভৌমজলের ভান্ডার গড়ে তোলে, একেই মহাসাগরীয় জল বলে

নিচে ভৌমজলস্তরের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হল

ভূ-পৃষ্টের নিচে ভৌমজলের অবস্থানকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয় যথা. বায়বীয় স্তর বা ভাদোস স্তর . সম্পৃক্ত স্তর বা ফ্রিয়েটিক স্তর

. বায়বীয় স্তর বা ভাদোস স্তরবায়বীয় স্তরে মৃত্তিকা রন্ধ্রগুলি আংশিক ভাবে জল দ্বারা আংশিক ভাবে বায়ু দ্বারা পূর্ন থাকে তাই একে ভাদোস স্তর বলে বায়বীয় স্তরকে তিনটি উপস্তরে ভাগ করা হয় যথা

) মৃত্তিকা স্তর এটি অসম্পৃক্ত বা ভাদোস স্তরের সবচেয়ে উপরের স্তর স্তরটি ভূপৃষ্ঠের নিম্নে উদ্ভিদের মূল শিকড় সমূহ মাটির গভীরে যে পর্যন্ত বিস্তৃত হয় সে পর্যন্ত প্রসারিত হয় কৃষিকার্যে এই জলের গুরুত্ব অত্যাধিক

) অন্তবর্তী ভাদোস স্তর এই স্তরটি মৃত্তিকা জলস্তরের নিম্নসীমা থেকে কৈশিক স্তরের ঊর্ধবসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত এই অঞ্চলটি -১০০ মিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে উচ্চ জলস্তরীয় চাপে জল ভূ-পৃষ্টের উঠে এলে এটি শূন্য পরিপৃক্ত জলস্তর গভীরে নেমে গেলে এটি শতাধিক মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে

)  কৈশিক স্তর এই অঞ্চলটি জলস্তর অর্থাৎ সম্পৃক্ত স্তর থেকে শুরু করে কৈশিক প্রক্রিয়ায় জলের উত্থানের উর্ধবসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত সম্পৃক্ত অঞ্চলের ঠিক ওপরে এই অঞ্চলে যত ভাগ জলপূর্ন হয় তা কৈশিক প্রক্রিয়ায় হয় এবং উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলের পরিমানও হ্রাস পেতে থাকে

ভাদোস জল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাধ্যাকর্ষন শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ থেকে নেমে আসা জল ক্রমশই নিচে নামতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ভৌমজলতল পর্যন্ত পৌঁছায় উপরিভাগের বায়ু প্রভাবিত বলয়টির মধ্যে নিয়ে ভূপৃষ্ঠের জল ভূ-গর্ভে প্রবেশের পথ পায় সমগ্র অঞ্চলটি ভাদোস বা অগভীর অঞ্চল এবং এর মধ্যে দিয়ে নেমে আসা জলকে ভাদোস জল বলে 

. সম্পৃক্ত স্তর বা ফ্রিয়েটিক স্তরএই স্তরটি ভৌমজলস্তর থেকে নিম্ন স্থিত অপ্রবেশ্য শিলাস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত সম্পৃক্ত অঞ্চলে ভৌমজল শিলামধ্যস্থ সমস্ত ফাঁক জলপূর্ন করে রাখে সম্পৃক্ত স্তরকে দুটি উপভাগে ভাগ করা হয়

) সবিরাম সম্পৃক্ত স্তর অসম্পৃক্ত স্তরের ঠিক নিচের স্তরে অধিক পরিমানে বৃষ্টিপাত হলেই  কেবলমাত্র সাময়িক ভাবে ভৌম জল থাকে বৃষ্টিপাত কম হলে তা শুকিয়ে যায় এই স্তরটি সবিরাম সম্পৃক্ত স্তর বলে

) স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তরসবিরাম সম্পৃক্ত স্তরের ঠিক নিচের অংশ থেকে আরম্ভ করে ভূনিম্নে অবস্থিত অপ্রবেশ্য শিলাস্তর পর্যন্ত অংশে ভূগর্ভের জল সঞ্চিত হয়ে একটি স্থায়ী ভৌমজলস্তর গঠন করে একে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর বলে

অ্যাকুইফার - সাধারণত ভৌমজল বহনকারী সম্পৃক্ত স্তরকে অ্যাকুইফার বলে অ্যাকুইফার (Aquifer) একটি ল্যাটিন শব্দ, যা দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, Aqui শব্দটি এসেছে Aqua থেকে যার অর্থ জল এবং fer এসেছে  ferre থেকে যার অর্থ হল বহন অতএব অ্যাকুইফার বলতে জলবাহী শিলাস্তরকে বোঝানো হয়ে থাকে

অ্যাকুইফারের সংজ্ঞাকোনো অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপরে যদি কোনো প্রবেশ্য শিলাস্তর এমনভাবে অবস্থান করে যে বৃষ্টিপাত তুষারপাতের জল অপ্রবেশ্য শিলাস্তর দ্বারা আবদ্ধ হয়ে প্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে সঞ্চিত থাকতে পারে তখন সেই জল দ্বারা সম্পৃক্ত প্রবেশ্য শিলাস্তরকে জলধারক বা অ্যাকুইফার বলে

শ্রেণীবিভাগ - অ্যাকুইফার ভূ-অভ্যন্তরস্থ জলের ভান্ডার বিশালায়ন এই ভাণ্ডার সমূহ ভূপৃষ্ঠস্থ জলের অনুপ্রবেশে গড়ে ওঠে অ্যাকুইফার প্রধানত দুই ধরণের যথা) আবদ্ধ জলধারন   ) মুক্ত জলধারক । এছাড়া অন্য এক শ্রেণীর অ্যাকুইফার হল) আংশিক আবদ্ধ জলধারক

) আবদ্ধ জলধারনদুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যভাগে একটি প্রবেশ্য শিলা অবস্থান করলে তার উর্ধবভাগ উন্মুক্ত অবস্থায় থাকলে ওই উন্মুক্ত স্থান দিয়ে ভূ-পৃষ্টের জল বৃষ্টিপাতের ফলে ধীরে ধীরে মধ্যবর্তী শিলায় আবদ্ধ হয় একেই আবদ্ধ জলধারক বা confined Aquifer বলে
অনেক সময় জলসীমা ভূপৃষ্ট পর্যন্ত বিস্তৃত হলে অভ্যন্তরীণ জলচাপ যথেষ্ট বেশি হয়। যখন প্রবেশ্য শিলার জলস্তরের চাপ অধিক মাত্রায় পৌঁছায় তখন প্রবেশ্য শিলাস্তর পর্যন্ত কূপ খনন করলে জল দ্রুত গতিতে উপরে উঠতে থাকে। একে আর্তেজীয় কূপ বলে

) উন্মুক্ত অ্যাকুইফার প্রবেশ্য শিলাস্তরের নিচে অপ্রবেশ্য শিলা অবস্থান করলে ভূ-পৃষ্টের জল প্রবেশ্য শিলাস্তরে মুক্ত অবস্থায় সঞ্চিত হয়। একে উন্মুক্ত জলধারক বলে। উন্মুক্ত অ্যাকুইফারের জলস্তর ভূ-প্রকৃতির উচ্চতা ঢালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওঠা নামা করে।

স্থানীয় জলধারক উন্মুক্ত জলধারকের একটি বিশেষ রূপ হল স্থানীয় জলধারক বা পার্চড অ্যাকুইফার। যখন প্রধান ভৌমজল থেকে কিছু পরিমান ভৌমজল উল্লম্ব অপ্রবেশ্য শিলাস্তর দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়, তখন এটি সৃষ্টি হয়। পাললিক শিলাস্তরে কাদাস্তরের ওপর কিছু পরিমান জল সঞ্চিত হয়ে এরূপ স্থানীয় জলধারকের সৃষ্টি হয়। কূপ খননের মাধ্যমে সাময়িক ভাবে স্বল্প পরিমান জল পাওয়া যায়। 

) আংশিক আবদ্ধ জলধারক আবদ্ধ বা মুক্ত অ্যাকুইফার যত সংখ্যক আছে তার থেকে বেশি রয়েছে আংশিক আবদ্ধ অ্যাকুইফার। এই অ্যাকুইফারের বৈশিষ্ট্য হল প্রবেশ্য শিলাস্তরটির নিচে বা ওপরে থাকে আংশিক প্রবেশ্য অ্যাকুইটার্ড। আংশিক ভাবে প্রবেশ্য শিলাস্তর দ্বারা বেষ্টিত থাকায় এরূপ অ্যাকুইফারের জলের নির্গমন ঘটে ধীরে ধীরে এবং মূলত অনুভূমিক ভাবে।

প্রবেশ্য শিলা - যে সব শিলার মধ্যে দিয়ে সহজেই জল প্রবেশ করতে পারে তাদেরকে প্রবেশ্য শিলা বলে প্রবেশ্য শিলার উদাহরণ – বেলেপাথর, চুনাপাথর, চক, ডলোমাইট, ল্যাটেরাইট।

অপ্রবেশ্য শিলা - যে সব শিলার মধ্যে দিয়ে জল একেবারেই প্রবেশ করতে পারে, তাদের কে অপ্রবেশ্য শিলা বলে অপ্রবেশ্য শিলার উদাহরণ – শেল, শ্লেট, কাদাপাথর, গ্যাব্রো, ব্যাসাল্ট প্রভৃতি।

অপ্রবেশ্য শিলার প্রকৃতি

১. অ্যাকুইফিউজ - যে শিলা জলধারন ও নিম্নস্তরে জল পরিবহনে সক্ষম নয়, তাদের অ্যাকুইফিউজ বলে । এই ধরণের শিলা ভৌম জল ভান্ডার গঠনে কোন ভূমিকা পালন করে না। উদাহরণ – অপ্রবেশ্য আগ্নেয়শিলা সমূহ, যেমন- ব্যাসল্ট, গ্যাব্রো ।

২. অ্যাকুইক্লুড - যে শিলা জলধারন করতে সক্ষম কিন্তু ভূ-অভ্যন্তরে পরিবহনে অক্ষম, তাদের অ্যাকুইক্লুড বলে । এই শিলাও ভৌমজলের সঞ্চয়ে সাহায্য করে না কারণ শিলায় পলির আধিক্য থাকায় এই শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চল অতি ধীরে ধীরে জল শুষে নেয়। উদাহরণ – কাদাপাথর।

৩. অ্যাকুইটার্ড - যে শিলা জলের কিছু পরিমান ধারন ও পরিবহনে সক্ষম এবং বাকি জল এই শিলার ওপরে অবস্থিত প্রবেশ্য শিলায় সঞ্চয় হয়ে ভৌমজল ভান্ডার গঠনে সাহায্য করে, তাদের অ্যাকুইটার্ড বলে । উদাহরণ – বেলে- কর্দম শিলা

ভৌমজলের নিয়ন্ত্রক

কোথায় ভৌম জল ভাণ্ডার গড়ে উঠবে এবং সেই ভৌম জল ভান্ডারে কী পরিমান জলের সঞ্চয় হবে তা কত গুলি কারনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

১. মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা – মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা মৃত্তিকায় ভৌমজলের সৃষ্টি ও সঞ্চয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। সচ্ছিদ্রতা বলতে মৃত্তিকায় উপস্থিত কনা গুলির মধ্যবর্তী ফাঁক গুলিকে নির্দেশ করে। আবার মৃত্তিকার ছিদ্রতার উপর মৃত্তিকার প্রবেশ্যতা নির্ভর করে। যে শিলার সচ্ছিদ্রতা যত বেশি সে শিলার প্রবেশ্যতা তত বেশি এবং প্রবেশ্যতা যত বেশি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ভূ-অভ্যন্তরে বৃষ্টি ও তুষার গলা জলের প্রবেশ হবে তত বেশি। ফলে ভৌম জলের ভাণ্ডার গড়ে  ওঠে। যেমন – বেলেপাথর, চুনাপাথরের প্রবেশ্যতা অনেক বেশি। কিন্তু ব্যাসল্ট, গ্র্যাব্রো, শ্লেট, শেল প্রভৃতি শিলার ছিদ্রতা কম বলে প্রবেশ্যতা কম।

২. বৃষ্টিপাতের পরিমান ও স্থায়িত্ব – বৃষ্টিপাতের পরিমান ও স্থায়িত্ব ভু-গর্ভে ভৌমজলের সঞ্চয় কে নানা ভাবে প্রভাবিত করে। যেমন – খুব অল্প সময় ধরে খুব বেশি পরিমান বৃষ্টি হলেও ভৌমজলের তেমন কোন সঞ্চয় হয় না কারণ সেই অতিরিক্ত বৃষ্টির জল দ্রুত গতিতে অন্যাত্র অপসারিত হয় বলে বৃষ্টির জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ পায় না। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় ধরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়লে জল আস্তে আস্তে গড়িয়ে যায় বলে জল ভূগর্ভে প্রবেশের জন্য অতিরিক্ত সময় পায়। ফলে ভৌমজলের সঞ্চয় বেশি হয়।
৩. ভূমির ঢাল – যেখানে ভূমির ঢাল বেশি হয় বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে সেখানে বৃষ্টি ও তুষার গলা জল খাড়া ঢালের জন্য দ্রুত নিচের দিকে নেমে যায় বলে জল মাটির নিচে প্রবেশের তেমন কোন সুযোগ পায় না কিন্তু অন্যদিকে সমতল ভূমিতে ঢাল কম বলে জল ধীরে ধীরে গড়িয়ে যায় বলে সহজেই মাটির নিচে প্রবেশ করতে পারে ও ভৌম জল সৃষ্টি করে।

৪. অপ্রবেশ্য শিলার উপস্থিতি – ভৌম জল ভান্ডার সৃষ্টির অন্যতম প্রধান শর্ত হল প্রবেশ্য শিলার নিচে অপ্রবেশ্য শিলার উপস্থিতি। কারন অপ্রবেশ্য শিলা জলের নিম্ন গমন কে প্রতিরোধ করে প্রবেশ্য শিলার জলের সঞ্চয়ে সাহায্য করে। অন্যদিকে অপ্রবেশ্য শিলা না থাকলে জল অবাধে নিম্ন গমন করে শেষে ম্যাগমার সংস্পর্শে এসে বাষ্পীভূত হয়ে বিলীন হয়ে যায়।

৫. উদ্ভিদের উপস্থিতি – স্বাভাবিক উদ্ভিদের অবস্থান জলের স্বাভাবিক প্রবাহের বাধার সৃষ্টি করে, ফলে জল জল প্রবাহের গতি হ্রাস পায় বলে জল মাটির নিচে প্রবেশের অনেক সময় পায়। গাছপালা না থাকলে ভূমি উন্মুক্ত অবস্থায় থাকবে ফলে জল অতি সহজেই এক জায়গা থেকে ওপর জায়গায় সহজেই গড়িয়ে যাবে ফলে জলের অনুপ্রবেশ কম হবে।

৬. ভূমির ব্যবহার – ভূমির ব্যবহারও কোন জায়গার ভৌমজলের সঞ্চয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন কৃষি ক্ষেত্রে জমি গুলি কর্ষিত অবস্থায় থাকে বলে বৃষ্টির জল অতি সহজেই মাটির নিচে প্রবেশ করে। আবার শহরাঞ্চলে বেশির ভাগ জায়গা কংক্রিট দ্বারা বাধাই করা থাকে বলে জলের প্রবেশের সুযোগ তেমন থাকে না কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ জমি উন্মুক্ত থাকে বলে ভূ-পৃষ্ঠিয় জলের প্রায় সব টাই মাটির নিচে প্রবেশ করে।

. মৃত্তিকার আর্দ্রতা মৃত্তিকার মধ্যে জলের উপস্থিতিকে মৃত্তিকার আর্দ্রতা বলে মৃত্তিকায় আর্দ্রতার পরিমান বেশি হলে মাটির জল শোষণ ক্ষমতা কমে বৃষ্টিপাতের অপেক্ষাকৃত কম অংশ ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ পায় অন্যদিকে শুষ্ক মৃত্তিকার জল শোষণ ক্ষমতা বেশি বলে ভৌমজলের পরিমান বৃধি পায়    


২টি মন্তব্য:

  1. খুবই সহজ সরল বোধগম্য ভাষায় এবং শিরোনাম সহ যথার্থ তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্হাপিত করা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভাল। বোধগম্য। https://bongobodh.com/ আমাদের সাইটটি দেখে মন্তব্য করুন। এটি স্প্যাম নয়। ব্লগার থেকে ওয়ার্ডপ্রেসে আসছেন না কেন?

    উত্তরমুছুন

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.