ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য


সাধারনত উভয় গোলার্ধে ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে মহাদেশগুলির পশ্চিম অংশে যে জলবায়ু দেখা যায়, তাকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলিতে এই জলবায়ুর বিস্তার ও প্রভাব সব থেকে বেশি বলে একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলা হয়ে থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গত দিক থেকে অন্য জলবায়ুর থেকে সম্পূর্ন আলাদা। এই জলবায়ু অঞ্চলে  এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য কোন জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায় না। 

ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ সমূহ, যেমন – ইউরোপের স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস প্রভৃতি দেশে; আফ্রিকার মরক্কো, টিউনেশিয়া, লেবানন, আলজেরিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার তুর্কি, লেবানন, ইস্রায়েল ও সিরিয়ায় এই জলবায়ু দেখা যায়। ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ছাড়াও এই জলবায়ু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, চিলির মধ্য অংশে, দক্ষিন আফ্রিকায়, দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অস্তিত্ব লক্ষ্যকরা যায়। এই জলবায়ু পৃথিবীর মোট স্থলভাগের মাত্র ১.৭ % অঞ্চলে দেখা যায়।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল 

১. বায়ুর উষ্ণতা – ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীণ তাপমাত্রা থাকে ২১ ডিগ্রি থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে তাপমাত্রা থাকে ৪ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। শীত ও গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার প্রসর থাকে প্রায় ১১ ডিগ্রি থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

২. বৃষ্টিপাত – ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয় না অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল শুষ্ক প্রকৃতি এবং শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় অর্থাৎ শীতকাল আর্দ্র প্রকৃতির। এই জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ৩৫ থেকে ৭৫ সেমি। মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭৫% শীতকালেই হয়ে থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে শীতকালে প্রধানত পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ।

৩. বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ – সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিনায়নের সাথে সাথে পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় গুলির স্থান পরিবর্তন ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। আর এই বায়ুচাপ বলয় গুলির স্থান পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং শীতকালে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়ে থাকে।

৪. স্থানীয় বায়ুর প্রাধান্য – অন্যান্য জলবায়ু অঞ্চলের তুলনায় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে স্থানীয় বায়ু প্রবাহের প্রাধান্য দেখা যায়। এই স্থানীয় বায়ু গুলি সাধারণত উষ্ণ ও শীতল প্রকৃতির হয়ে থাকে। যেমন – শীতল বায়ু গুলির মধ্যে অন্যতম হল মিস্ট্রাল ও বোরা এবং উষ্ণ বায়ু গুলি হল সিরোক্কো, খামসিন, সান্টা আনা প্রভৃতি।

৫. রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া – ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালেই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, যার ৩ থেকে ৪ মাস অবধি থাকে। বাকি ৮ মাস ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আয়ন বায়ুর প্রভাবে তেমন কোন বৃষ্টিপাত হয় না বলে গ্রীষ্মকালীণ আবহাওয়া থাকে মেঘমুক্ত, পরিষ্কার ও রৌদ্রজ্জ্বল । অর্থাৎ বছরের বেশির ভাগ সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে বলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলকে চিরবিনোদনের জলবায়ু বলা হয়ে থাকে।

৬. স্বাভাবিক উদ্ভিদ – ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত পার্বত্য অঞ্চলে চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায়,  যেমন – ওক, সিডার, পাইন, কর্ক প্রভৃতি। এছাড়া এখানে গুল্ম জাতীয় ঝোপঝার দেখা যায়। যা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন – ফ্রান্সে ম্যাকুই, অস্ট্রেলিয়ায় ম্যালি, ক্যালিফোর্নিয়ায় চ্যাপারেল ।

৭. ফলের ঝুড়ি – ভুমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলকে ফলের ঝুড়ি বলা হয়ে থাকে। কারণ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফল চাষের অনুকূল রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া কে কাজে লাগিয়ে এখানে বানিজ্যিক ভিত্তিক পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন রকম ফলের চাষ করা হয়ে থাকে। যেমন – জলপাই, আঙুর, কমলালেবু, ন্যাসপাতি প্রভৃতি। জলপাই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ।      

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.