অষ্টম শ্রেনীর ভূগোল শিলা

অষ্টম শ্রেনী ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় শিলা থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন গুলি উত্তর সমতে আলোচনা করা হল। Class Eight Geography Chapter Number Three - rock ।।

শিলা কাকে বলে? 
উত্তর - পৃথিবী পৃষ্ঠ বা ভূত্বক যে সব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের শিলা বলা হয়। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত  এক বা একাধিক খনিজের সমসত্ত্ব  ও অসমসত্ত্ব মিশ্রনকে শিলা বলে। 

খনিজ কাকে বলে?
উত্তর - এক বা একাধিক অজৈব মৌলিক উপাদানের সহযোগে গঠিত উপাদানকে খনিজ বলে। 

সমসত্ত্ব শিলা কাকে বলে?
উত্তর - যে সব শিলা একটিমাত্র খনিজের সমন্বয়ে গঠিত, তাদের সমসত্ত্ব শিলা বলে। যেমন - চুনাপাথর কেবলমাত্র ক্যালসাইট খনিজের সমন্বয়ে গঠিত। 

অসমসত্ত্ব শিলা কাকে বলে?
উত্তর - যে সব শিলা একাধিক খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত তাদের অসমসত্ত্ব শিলা বলে। যেমন - গ্রানাইট শিলা কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার, মাইকা ও হর্নব্লেড খনিজ দ্বারা গঠিত। 

আগ্নেয় শিলা কাকে বলে? আগ্নেয় শিলা কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর - উত্তপ্ত তরল অবস্থা থেকে পৃথিবী ধীরে ধীরে তাপ বিকিরন করে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শক্ত আবরন সৃষ্টি করে তাকে আগ্নেয়শিলা বলে। আবার ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে এসে শীতল হয়েও আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি হয়। যেমন - গ্রানাইট, ব্যাসল্ট প্রভৃতি। আগ্নেয়শিলাকে উৎপত্তি অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা - নিঃসারী ও উদবেধী শিলা। 

প্রাথমিক শিলা কাকে বলা হয় এবং কেন?
উত্তর - আগ্নেয় শিলা পৃথিবীতে প্রথম সৃষ্টি হওয়ায় একে প্রাথমিক শিলা বলা হয়। 

নিঃসারী আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
উত্তর - ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে দ্রুত জমাট বেঁধে ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে নিঃসারী আগ্নেয়শিলা বলে। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের উপরে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে নিঃসারী শিলা বলে। যেমন - ব্যাসল্ট, অবসিডিয়ান, রায়োলাইট প্রভৃতি। 

উদবেধী আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
উত্তর - ভূঅভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা অনেক সময় ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরোতে না পেরে ভূপৃষ্ঠের অল্প নিচে ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে উদবেধী আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি করে। যেমন - গ্রানাইট, গ্যাব্রো, ডোলেরাইট প্রভৃতি। 

উদবেধী আগ্নেয়শিলা কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর - উদবেধী আগ্নেয়শিলা দুই প্রকার, যথা - পাতালিক ও উপপাতালিক আগ্নেয়শিলা। 

পাতালিক আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
উত্তর - ভূপৃষ্ঠের অনেক নিচে বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে ম্যাগমা জমাট বেঁধে যে সব উদবেধী আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি হয়, তাদের পাতালিক আগ্নেয়শিলা বলে। উদাহরণ - গ্রানাইট।

উপপাতালিক আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
উত্তর - ভূপৃষ্ঠের অল্প নিচে ধীরে ধীরে শীতল হয়ে যে সব উদবেধী আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে উপপাতালিক আগ্নেয়শিলা বলে। যেমন - ডোলেরাইট ।

মহাদেশীয় ভূত্বক কোন ধরণের শিলা দ্বারা গঠিত ?
উত্তর - গ্রানাইট শিলা দ্বারা।

গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ গুলি দেখতে কেমন হয়?
উত্তর - গোলাকার আকৃতির 

মহাসাগরীয় ভূত্বক কোন ধরণের শিলা দ্বারা গঠিত?
উত্তর - ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা 

পাললিক শিলা কাকে বলে?
উত্তর - বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এবং সেই ক্ষয় জাত পদার্থ কোন নিচু অঞ্চলে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হলে তা পরবর্তী কালে তাপ ও চাপের ফলে জমাট বেঁধে যে কঠিন শিলার সৃষ্টি করে, তাকে পাললিক শিলা বলে। যেমন - চুনাপাথর, বেলেপাথর, কাদাপাথর প্রভৃতি।

পাললিক শিলার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করো?
উত্তর - ক) পাললিক সিলায় স্তর দেখা যায় বলে, একে স্তরীভূত শিলা বলে। খ) পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায়। গ) পাললিক শিলা হালকা, নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির। ঘ) পাললিক শিলার প্রবেশ্যতা বেশি ও ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। ঙ) কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মূলত এই পাললিক শিলায় পাওয়া যায়। 

জীবাশ্ম কাকে বলে? 
উত্তর - পলি সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলা গঠন কালে উদ্ভিদ ও প্রানী সেই পলির স্তরের মধ্যে চাপা পরে গেলে কালক্রমে সঞ্চিত পলির প্রবল চাপে সেই উদ্ভিদ ও প্রানীর দেহ জমাট বেঁধে প্রস্তরীভূত হলে পাললিক শিলায় তাদের দেহাবশেষের ছাপ থেকে যায়। একে জীবাশ্ম বলে। 

পাললিক শিলাকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?
উত্তর - উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা - সংঘাত শিলা ও অসংঘাত শিলা। 

সংঘাত শিলা কাকে বলে?
উত্তর - আগ্নেয়শিলা প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সেই সব ক্ষয়জাত পদার্থের সঞ্চয়ের হয়ে যে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় তাকে সংঘাত শিলা। যেমন - কাদাপাথর, বেলেপাথর, কংগ্লোমারেট প্রভৃতি। 

অসংঘাত শিলা কাকে বলে?
উত্তর - রাসায়নিক ও জৈবিক ভাবে যে সব পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে অসংঘাত শিলা বলে। যেমন - চুনাপাথর, কয়লা, চার্ট, লবন শিলা প্রভৃতি। 

ভারতের লালকেল্লা কোন ধরণের শিলা দ্বারা গঠিত?
উত্তর - বেলেপাথর। 

রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে? 
উত্তর - আগ্নেয় ও পাললিক শিলা চাপ ও তাপের সংস্পর্শে এসে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে তাদের পূর্বের বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ন পরিবর্তন সাধন করে নতুন বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম সম্পন্ন যে শিলার বিকাশ ঘটায়, তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন - গ্রানাইট থেকে নিস, চুনাপাথর থেকে মার্বেল প্রভৃতি। 

বিভিন্ন শিলার রূপান্তরিত রূপ উল্লেখ করো?
উত্তর - গ্রানাইট থেকে নিস, ব্যাসল্ট থেকে অ্যাম্ফিবোলাইট,  বেলেপাথর থেকে কোয়ার্টজাইট, চুনাপাথর থেকে মার্বেল, পিট কয়লা থেকে গ্রাফাইট, শেল থেকে স্লেট, স্লেট থেকে ফিলাইট, ফিলাইট থেকে সিস্ট প্রভৃতি। 

রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?
উত্তর - ক) রূপান্তরিত শিলা অনেক কঠিন প্রকৃতির হয়। খ) আগ্নেয়শিলা থেকে সৃষ্ট রূপান্তরিত শিলা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি মসৃন, কেলাসিত ও চকচকে হয়। গ) পাললিক শিলা রূপান্তরিত হলে তার ভঙ্গুরতা হ্রাস পায়।  ঘ) রূপান্তরিত শিলায় জীবাশ্ম থাকে না। 

ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল কোন ধরণের শিলা দ্বারা গঠিত ?
উত্তর - গ্রানাইট শিলা দ্বারা।

দাক্ষিনাত্য মালভূমি কোন ধরণের শিলা দ্বারা গঠিত ?
উত্তর - ব্যাসল্ট জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত।

কার্স্ট ভূমিরূপ বলতে কী বোঝ?
উত্তর - চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্রবন কার্যের ফলে এক বিশেষ ধরণের ভূমিরূপ সৃষ্টি হতে দেখা যায়, তাকে কার্স্ট ভূমিরূপ বলে। 

স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাকমাইট কাকে বলে?
উত্তর - চুনাপাথরের গুহার মধ্যে দ্রবন কার্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হতে দেখা যায়, তারমধ্যে অন্যতম হল স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাকমাইট। গুহার ছাদ থেকে ঝুলতে থাকা চুনাপাথরের দন্ড গুলিকে স্ট্যালাকটাইট এবং গুহার মেঝে থেকে ওপরের দিকে বদ্ধিত স্তম্ভের মতো অংশকে স্ট্যালাকমাইট বলে। 

গ্রানাইট চিকচিক করে কেন ?
উত্তর - অভ্রের উপস্থিতির জন্য গ্রানাইট চিকচিক করে। 

পেনসিলের সিস কোন শিলা থেকে তৈরি হয় এবং এটি কীধরনের শিলা?
উত্তর - গ্রাফাইট শিলা থেকে, এটি এক প্রকার রূপান্তরিত শিলা। 

খনিজের কাঠিন্য পরিমাপক স্কেলের নাম কী?
উত্তর - মোহ স্কেল। এই স্কেলের মান ১ থেকে ১০ পর্যন্ত হয়। এই মোহ স্কেল অনুসারে সবচেয়ে নরম খনিজ ট্যাল্ক ও সবচেয়ে কঠিন খনিজ হীরা। 

ভারতের খনিজ ভান্ডার কাকে বলে?
উত্তর - ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলকে ভারতের খনিজ ভান্ডার বলা হয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.