অষ্টম শ্রেনীর ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় - অস্থির পৃথিবী


অষ্টম শ্রেনীর ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় অস্থির পৃথিবী থেকে গুরুত্বপূর্ন সংক্ষিপ্ত ও অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন গুলি উত্তর সমেত আলোচনা করা হল। 

১. মহীসঞ্চরন তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
উত্তর - আলফ্রেড ওয়েগনার

২. পৃথিবীর সমগ্র স্থলভাগ একত্রিত অবস্থায় যে বিশাল ভূখন্ড গঠন করে, তাকে কী বলে?
উত্তর - প্যানজিয়া 

৩. পাত বা প্লেট কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবীর উপরিভাগের শক্ত ও কঠিন খন্ডিত অংশ গুলিকে পাত বা প্লেট। ভূত্বক এই রকম বেশ কয়েকটি ছোট বড়ো পাতের সমন্বয়ে গঠিত। পাত গুলি গড়ে ৭০ থেকে ১৫০ কিমি পুরু।

৪. পাতের চলনের কারণ কী?
উত্তর - অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারে সৃষ্ট পরিচলন স্রোত পাতের চলনের প্রধান কারণ। 

৫. পৃথিবী মোট কত গুলি প্রধান বা বৃহৎ পাতের সমন্বয়ে গঠিত?  
উত্তর - ৬ টি 

৬. ভূত্বক গঠনকারী প্রধান পাত গুলি কী কী?
উত্তর - ইউরেশীয় পাত, ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাত, আমেরিকা পাত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত, আফ্রিকা পাত ও আন্টার্কটিকা পাত। 

৭. অপসারী পাত সীমানা কাকে বলে?
উত্তর - যে পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়, তাকে অপসারী পাত সীমানা বলে। যেমন - আমেরিকান পাত ও আফ্রিকান পাত বরাবর এই রূপ পাত সীমানা দেখা যায়। 

৮. অপসারী পাত সীমানা কে গঠনকারী পাত সীমানা বলা হয় কেন?
উত্তর - অপসারী পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় বলে ফাটলের সৃষ্টি হয়। সেই ফাটল বরাবর ভূ-গর্ভস্থ ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন ভূমিরূপ গঠিত হয় বলে, অপসারী পাত সীমানা কে গঠনকারী পাত সীমানা বলা হয়।

৯. অপসারী পাত সীমানা বরাবর কোন ধরণের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়?
উত্তর - মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা 

১০. অভিসারী পাত সীমানা কাকে বলে?
উত্তর - যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে। যেমন - প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত ও আমেরিকান পাত। 

১১. কোন ধরনের পাতের চলনের ফলে ভঙ্গিল পর্বতমালার সৃষ্টি হয়?
উত্তর - পাতের অভিসারী চলনের ফলে ভঙ্গিল পর্বতমালার সৃষ্টি হয়। 

১২. কোন দুটি পাতের চলনের ফলে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়?
উত্তর - ভারতীয় ও ইউরেশীয় পাতের অভিসারী চলনের ফলে।

১৩. কোন ধরণের পাত সীমানা বরাবর ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাতের প্রবনতা সবচেয়ে বেশি?
উত্তর - অভিসারী পাত সীমানা বরাবর। 

১৪. অভিসারী পাত সীমানাকে বিনাশকারী পাত সীমানা বলা হয় কেন?
উত্তর - অভিসারী পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ভারী পাতটি হালকা পাতের নিচে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে ভারী পাতটি ভূগর্ভের উষ্ণতার সংস্পর্শে এসে গলে ম্যাগমায় পরিনত হয় অর্থাৎ বিলুপ্ত হয়। তাই অভিসারী পাত সীমানাকে বিনাশকারী পাত সীমানা বলা হয়। 

১৫. নিরপেক্ষ পাত সীমানা কাকে বলে? 
উত্তর - যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পাশাপাশি অগ্রসর হয় কিন্তু তাদের মধ্যে কোন সংঘর্ষ হয় না, তাকে নিরপেক্ষ পাত সীমানা বলে। ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সান আন্দ্রিজ চ্যুতি এরকম পাত সীমানার উদাহরণ। 

১৬. নবীন ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ দাও? 
উত্তর - রকি, আন্দিজ, আল্পস ও হিমালয় নবীন ভঙ্গিল পর্বত। 

১৭. প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ দাও?
উত্তর - উরাল, অ্যাপেলেশিয়ান, আরাবল্লী পর্বত প্রভৃতি।

অগ্ন্যুদগম

১. অগ্ন্যুদগম বলতে কী বোঝ? 
উত্তর - ভূঅভ্যন্তরের গলিত সান্দ্র ম্যাগমা, গ্যাস, জলীয় বাষ্প কোনো ফাটল বা গহ্বরের মধ্যে দিয়ে বিস্ফোরণ সহ প্রচন্ড বেগে বা ধীর শান্ত ভাবে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে অগ্ন্যুদগম বলে। 

২. আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
উত্তর - অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত ম্যাগমা, ছাই অ অন্যান্য কঠিন পদার্থ ক্রমাগত সঞ্চিত হতে হতে পর্বতের আকৃতি ধারন করলে, তাকে আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন - ফুজিয়ামা, ক্রাকাতোয়া প্রভৃতি। এই আগ্নেয়গিরি থেকেই আগ্নেয় পদার্থের নির্গমন বা অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে। 

৩. কোন ধরণের পাত সীমানা বরাবর বিস্ফোরণ সহ অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে? 
উত্তর - অভিসারী পাত সীমানা বরাবর 

৪. অগ্ন্যুৎপাতকে ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া বলা হয় কেন?
উত্তর - অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত লাভা বিস্তৃর্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে এবং পরে সেগুলি শীতল ও কঠিন হয়ে নানা রকমের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে বলে, অগ্ন্যুৎপাতকে ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া বলা হয়। যেমন - লাভা মালভূমি, লাভা সমভূমি, আগ্নেয় পর্বত প্রভৃতি। 

৫. অন্তর্জাত শক্তি কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবী পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে ভূ-আন্দোলনের ফলে যে শক্তির উৎপন্ন হয়, তাকে অন্তর্জাত শক্তি বলে। যেমন - ভূমিকম্প। 

৬. ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট আকস্মিক শক্তি বা প্রক্রিয়া কোন গুলি?
উত্তর - অগ্ন্যুদগম ও ভূমিকম্প। 

৭. কয়েকটি বহির্জাত শক্তি বা প্রক্রিয়ার উদাহরণ দাও?
উত্তর - পৃথিবী পৃষ্ঠের বাইরে ক্রিয়াশীল শক্তি গুলিকে বহির্জাত শক্তি বলে। যেমন - নদী, বায়ু, হিমবাহ  ও সমুদ্র তরঙ্গ

৮.  সক্রিয়তার উপর ভিত্তি করে আগ্নেয়গিরিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?
উত্তর - তিন ভাগে, যথা - সক্রিয়, সুপ্ত ও মৃত আগ্নেয়গিরি। 

৯. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
উত্তর - যে সব আগ্নেয়গিরি থেকে প্রতিনিয়ত অবিরাম ভাবে বা মাঝে মধ্যেই অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে, তাকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন - সিসিলির এটনা, লিপারি দ্বীপের স্ট্রম্বোলী, হাওয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া, ভারতের ব্যারেন প্রভৃতি। 

১০. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
উত্তর - যে সব আগ্নেয়গিরি একবার অগ্ন্যুৎপাতের পর দীর্ঘকাল নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, তাদের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন - জাপানের ফুজিয়ামা, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া প্রভৃতি। 

১১. মৃত আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
উত্তর - যে সব আগ্নেয়গিরি থেকে প্রাচীনকালে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে ছিল কিন্তু ভবিষ্যতে আর অগ্ন্যুৎগমনের সম্ভাবনা নেই, তাকে মৃত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন - মেক্সিকোর পারকুটিন, মায়ানমারের মাউন্ট পোপো প্রভৃতি। 

১২. ভারতের দুটি আগ্নেয়গিরির উদাহরণ দাও? 
উত্তর - আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্যারেন ও নারকোন্ডাম আগ্নেয়গিরি।

১৩. আ আ লাভা ও পা হো হো লাভা কাকে বলে?
উত্তর - সান্দ্র প্রকৃতির যে সব লাভা বেশি দূর অবধি প্রবাহিত হতে পারে না, খুব তাড়াতাড়ি জমাট বদ্ধ হয়, তাকে আ আ লাভা  বলে এবং তরল প্রকৃতির যে সব লাভা অতি সহজেই বহু দূর অবধি ছড়িয়ে পরে তাকে পা হো হো লাভা বলে। 

ভূমিকম্প 

১. ভূমিকম্প কাকে বলে?
উত্তর - প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্ট কারণে ভূপৃষ্ঠের কোন অংশ ক্ষনিকের জন্য তরঙ্গের আকারে কেঁপে উঠলে, তাকে ভূমিকম্প বলে। 

২. ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবীর পৃষ্ঠের নিচে যেখানে প্রথম ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। আর ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সোজাসুজি উপরে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠের যেখানে প্রথম ভূমিকম্প অনুভূত হয়, তাকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলে। 

৩. ভূমিকম্প তরঙ্গ গুলিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?
উত্তর - ভূমিকম্প তরঙ্গ গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা - প্রাথমিক তরঙ্গ (P তরঙ্গ), গৌন তরঙ্গ (S তরঙ্গ) ও পৃষ্ঠ তরঙ্গ (L তরঙ্গ)। 

৪. প্রাথমিক তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ ?
উত্তর - এই তরঙ্গ প্রথম সিসমোগ্রাফে ধরা পরে বলে, একে প্রাথমিক তরঙ্গ বলে। প্রাথমিক তরঙ্গের গড় গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৬ কিমি। P তরঙ্গ প্রবাহের সময় বস্তুকনা গুলি P তরঙ্গের সাথে সংকোচন ও প্রসারনের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় বলে, একে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। P তরঙ্গ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। 

৫. গৌন তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করো?
উত্তর - P তরঙ্গের পর যে তরঙ্গটি সিসমোগ্রাফে ধরা পরে তাকে গৌন তরঙ্গ বা S তরঙ্গ বলে। এই তরঙ্গের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৩ থেকে ৫ কিমি। এই তরঙ্গ প্রবাহের সময় বস্তু কনা গুলি উপর নিচে আন্দোলন করে বলে, একে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। S তরঙ্গ কেবল মাত্র কঠিন মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না। 

৬. পৃষ্ঠ তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?
উত্তর - ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে ঢেউ এর আকারে যে তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে পৃষ্ঠ তরঙ্গ বলে। পৃষ্ঠ তরঙ্গ দুই প্রকারের হয় র‍্যালে তরঙ্গ ও লাভ তরঙ্গ। L তরঙ্গের ফলেই ভূপৃষ্ঠে সবচেয়ে বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়ে থাকে। 

৭. কোন যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্প পরিমাপ করা হয়?
উত্তর - সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে।

৮. ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ও তীব্রতা পরিমাপের জন্য কোন  স্কেল ব্যবহার করা হয়?
উত্তর - রিখটার স্কেল। এই স্কেলের মান ০-১০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

৯. প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলতে কী বোঝ?
উত্তর - প্রশান্ত মহাসাগরের উভয় উপকূলে অভিসারী পাত সীমানা বরাবর পৃথিবীর বেশির ভাগ আগ্নেয়গিরি অবস্থিত বলে, একে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলা হয়ে থাকে। এই অঞ্চলটি আবার পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ভূমিকম্প প্রবন অঞ্চল কারণ এখানে পৃথিবীর প্রায় ৭০% ভূমিকম্প হয়ে থাকে। 

১০. ভারতকে কয়টি ভূমিকম্প প্রবন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে?
উত্তর - পাঁচটি । ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে। 

১১. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিকো শহরে কত সালে বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছিল?
উত্তর - ১৯০৬ সালে। 

১২. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিকো ও লস এঞ্জেলস শহর দুটি কোন ধরনের পাত সীমানা বরাবর অবস্থিত?
উত্তর - নিরপেক্ষ পাত সীমানা বরাবর। 

১৩. মহারাষ্ট্রের কয়না অঞ্চলে ভূমিকম্পের মূল কারণ কী?
উত্তর - এই অঞ্চলের কয়না জলাধারে সঞ্চিত জলের প্রচন্ড চাপে কয়না অঞ্চলে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। 

১৪. সুনামি কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর - জাপানি শব্দ সুনামি বলতে প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসকে বোঝানো হয়ে থাকে। সমুদ্রের নিচে প্রবল তীব্রতার ভূমিকম্প সংঘটিত হলে যে প্রবল শক্তি নির্গত হয়, তা সমুদ্রের বিপুল পরিমান জলরাশিকে উপরের দিকে উত্তোলন করে। যা প্রবল বেগে কয়েক মিটার উঁচু ঢেউ এর আকারে উপকূলে দিকে অগ্রসর হয়ে, উপকূল অঞ্চলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। একেই সুনামি বলা হয়ে থাকে। যেমন - ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাভা সুমাত্রা দ্বীপের কাছে ৮.৯ মাত্রার প্রবল ভূমিকম্পের ফলে ভারত মহাসাগরের সুনামি হয়েছিল।

২টি মন্তব্য:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.