প্রবাল প্রাচীরের উৎপত্তি


প্রবাল প্রাচীরের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা নিয়ে অনেক জটিলতা রয়েছে। প্রবাল প্রাচীরের উৎপত্তি  বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন আর এই তত্ত্ব গুলি দুটি মূল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, i. প্লিস্টোসিন যুগে সমুদ্র পৃষ্ঠের ওঠানামা ii. স্থলভাগের স্থিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা। প্রবাল প্রাচীরের উৎপত্তি সম্পর্কিত তত্ত্ব গুলিকে মূলত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে আলোচনা করা যায় - A. অ-নিমজ্জন তত্ত্ব   B. নিমজ্জন তত্ত্ব । এখানে প্রবাল প্রাচীরের উৎপত্তি সম্পর্কিত ডারউইন প্রদত্ত নিমজ্জন তত্ত্বটি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হল। 

ডারউইনের মতে, প্রথমে সমস্ত পলিপস একত্রিত হয় উপকূল থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত অগভীর সমুদ্রের কোন উপযুক্ত সামুদ্রিক প্লাটফর্ম বা মঞ্চ বরাবর এবং সেই উপযুক্ত পরিবেশে সময়ের সাথে সাথে পলিপস গুলির দেহাবশেষ সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ উপরের দিকে বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময় সমুদ্রপৃষ্ঠ বরাবর অবস্থান করে। এই ভাবে উপকূল থেকে কিছুটা দূরে স্থিতিশীল ভূমির ওপর প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীর (Fringing reef) তৈরি হয়। 

এর পরবর্তী সময়ে টেকটনিক শক্তির ফলে সমুদ্র তলদেশের অবনমন ঘটলে পলিপসেরও অবনমন ঘটে। ফলে অতিরিক্ত গভীরতায় প্রবাল কীট গুলির মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায় বলে পলিপস গুলি দ্রুত উপরের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে, যাতে তারা খাবার পেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। 

এইভাবে উপকূল এবং প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীরের মাঝে অগভীর লেগুনের সৃষ্টি হয় এবং প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীর (Barrier reef)  তৈরি হয়। তারপর ভূমির আরো অবনমন ঘটে এবং দ্বীপটি সম্পূর্ণভাবে জলে নিমজ্জন ঘটে, তখন সেই নিমজ্জিত দ্বীপকে বেষ্টন করে আংটির আকারে যে প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠে তাকে অ্যাটল (Atoll) বলে। 

ডারউইন দ্বীপ টির দ্রুত বা হঠাৎ অবনমনের কথা না বলে ধীরে ধীরে অবনমনের কথা বলেছিলেন। যা প্রবালের উপরের দিকে বৃদ্ধির হার থেকেও কম। 
পর্যায়িত ভাবে অবনমনের ফলে উল্লেখনীয় গভীরতা বৃদ্ধি পায় না কারণ ক্রমাগত লেগুনে সঞ্চয় ঘটতে থাকে। 

ডারউইনের নিমজ্জন তত্ত্বের পক্ষে প্রমাণ
I) লেগুনের গভীরতা প্রমাণ করে দ্বীপ পর্যায়িত ভাবে নিমজ্জিত হচ্ছে। যদি ভূমিটি স্থিতিশীল থাকতো তাহলে ক্রমাগত সঞ্চয়ের ফলে লেগুন টি ভরে যেত।

II) প্রবালদ্বীপ বরাবর ভৃগুর অনুপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে ভূমিতে অবনমিত হয়েছে কারণ ভৃগু কেবলমাত্র সে সমস্ত প্রবাল দ্বীপ বরাবর গড়ে ওঠে যেগুলি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। 

III) প্রবাল প্রাচীর এর গভীরতা ক্রমশ নিচের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে, এটি এটাই প্রমাণ করে যে প্রবাল তৈরি হয় সামুদ্রিক মঞ্চের নিমজ্জন তল বরাবর। 

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.