মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব ব্যাখ্যা
পৃথিবী তথা মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কিত সর্বাধুনিক মতবাদ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বা বিগ ব্যাং তত্ত্ব। এখানে এই বিগ ব্যাং তত্ত্বটি সহজ ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো। মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কিত বিগ ব্যাং তত্ত্ব।
অনুমান সমূহ - বিগ ব্যাং তত্ত্ব টি দুটি প্রধান অনুমানের উপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয়েছে
i) physical laws - The universality of physical laws
ii) Cosmological Principle - এই নীতি অনুযায়ী ব্রহ্মাণ্ড হোমোজেনিয়াস (Homohrneous) এবং আইসোট্রপিক (Isotropic) প্রকৃতির।
সিঙ্গুলারিটি এবং ব্ল্যাক হোল - হ্যাবল এর মতে 13.7 বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্ব একটি ছোট বস্তু ছিল যার অত্যাধিক উষ্ণতা ও Infinite ঘনত্ব ছিল। এই একক বস্তুটিকে সিঙ্গুলারিটি বলে। আর ব্ল্যাক হোল হল অত্যাধিক মাধ্যাকর্ষণ চাপ যুক্ত অঞ্চল।
বিগ ব্যাং - একক বস্তুটিই (Singularity) মহাবিশ্বের মূল বস্তু যার পরবর্তী কালে প্রসারণের ফলে সম্প্রসারণ শীল মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় এবং বস্তু টিও শীতল হতে থাকে। এই সময় থেকেই প্রসারণের শুরু যা বিগ ব্যাং নামে পরিচিত। মহাজাগতিক বস্তু প্রসারণের ফলে ক্রমশ ঠান্ডা হতে থাকে এবং গামা রশ্মি মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ও পরমাণুর ছোট কণার উদ্ভব হয়। বিগ ব্যাং এর কয়েক মিনিট পর সূক্ষাতিসূক্ষ বস্তুকণা ক্রমশ ঘন হয়ে নিউট্রন ও প্রোটন তৈরি করে। এই প্রোটন ও নিউট্রন থেকে হাইড্রোজেন তৈরি হয় এবং দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর বিক্রিয়ার ফলে হিলিয়াম তৈরি হয়। সম্প্রসারণ শীল মহাবিশ্বের বয়স 3 মিনিট হলে তা প্রশস্ত ও ঠান্ডা হয়। অভিকর্ষ শক্তির ফলে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের সমন্বয় ঘটে এবং যে উষ্ণতার সৃষ্টি হয়, তা অত্যন্ত উজ্জ্বল গ্যাস যুক্ত মেঘ সৃষ্টি করে। এই মেঘ থেকেই কয়েকশো মিলিয়ন বছর পর নক্ষত্র ও গ্যালাক্সির সৃষ্টি হয়। গ্যালাক্সির বস্তুকণা ও গ্যাসীয় পদার্থ অভিকর্ষীয় বলের কারণে একত্রিত হয়ে নিহারিকা বা নেবুলার সৃষ্টি করে। অনবরত আণবিক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকায় নীহারিকায় ভারি উপাদানের সৃষ্টি হয়। নীহারিকার কেন্দ্রীয় নক্ষত্রের চারপাশে শিলা ও ধাতুর সমন্বয় থেকেই নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকা গ্রহ গুলির সৃষ্টি হয়। এই ভাবে প্রায় 4.6 বিলিয়ন বছর আগে আমাদের সৌর জগতের সৃষ্টি হয়।
প্রসারণ শীল মহাবিশ্ব - বিগ ব্যাং তত্ত্বের ধারণা অনুযায়ী গত 20 মিলিয়ন বছরের বেশি সময় ধরে মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। 1965 সালে আর্ণ পেঞ্জিয়াস ও রবার্ট উইলসন আবিষ্কার করেন মহাবিশ্ব মাইক্রোওয়েভ বিকিরণে পূর্ণ হয়ে আছে এবং এর মূলে রয়েছে cosmic microwave background বিকিরণ। এই আবিষ্কারের জন্য তারা নোবেল পুরস্কার পান।
হ্যাবলের পর্যবেক্ষণ থেকে Red Shift এর ধারণা পাওয়া যায়। মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হতে থাকায় বিভিন্ন গ্যালাক্সি গুচ্ছের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এই ঘটনাকে রেড শিফট বলে।
বিগ ব্যাং সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা
i) বিগ ব্যাং বলতে অনেকে বিশাল বিস্ফোরন বোঝেন কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে বিগব্যাং হলো মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ।
ii) অনেকে মনে করেন সিঙ্গুলারিটি মহাবিশ্বের একটি ফায়ার বল কিন্তু বাস্তবে মহাশূন্যের ভেতরে সিঙ্গুলারিটি নয়, সিঙ্গুলারিটির ভিতরেই মহাশূন্যের অবস্থান।
বিগ ব্যাং এর পক্ষে যুক্তি
i) হাবল 1929 সালে আবিষ্কার করেন গ্যালাক্সি গুলি তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমানুপাতিক গতিবেগে দূরে সরে যাচ্ছে, একে Hubble's Law বলে।
ii) বিভিন্ন গ্যালাক্সির Red shift এর ঘটনা সম্প্রসারণ শীল মহাবিশ্বের প্রমাণ।
iii) 2011 সালে বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে আদিম মেঘের সন্ধান পান, যা বিগ ব্যাং এর কয়েক মিনিট পর সৃষ্টি হওয়া সর্বপ্রথম গ্যাসের থেকে সৃষ্ট।
Hii
উত্তরমুছুন