ভারতের জনজীবনে হিমালয়ের প্রভাব
l. জলবায়ুর ওপর প্রভাব - হিমালয় ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মকালে আরব সাগর থেকে আগত দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু হিমালয় পর্বতে বাঁধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। আবার শীতকালে মধ্য এশিয়া থেকে আগত শীতল বায়ুর আগমন কে প্রতিহত করে অধিক শীতের প্রকোপ থেকে ভারত কে রক্ষা করে।
ll. প্রতিরক্ষা - সভ্যতার প্রথম থেকেই হিমালয় ভারত কে বহি: শত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করে আসছে। মধ্য এশিয়া থেকে আগত শত্রুরা অধিক উচ্চতা বিশিষ্ট হিমালয় অতিক্রম করে ভারতে আক্রমন করতে সক্ষম হতো না।
III. নদীর উৎপত্তি - ভারতের প্রধান প্রধান নদী গুলির উৎস স্থল হল হিমালয়। হিমালয়ের বরফ গলা ও বৃষ্টির জল থেকে এই নদী গুলি সৃষ্টি হয়ে ভারতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যেমন - গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র নদী।
IV. উর্বর মাটি - হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন বড়ো বড়ো নদী ও তাদের উপনদী গুলি নিচে নামার সময় হিমালয় থেকে প্রচুর পরিমাণ পলি বহন করে আনে, যা হিমালয় পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে ভারতের উত্তরের বৃহৎ উর্বর সমতল ভূমির সৃষ্টি করেছে। সুতরাং বলা যায় যে উত্তরের বৃহৎ সমভূমি হিমালয়ের দান।
V. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন - হিমালয় অঞ্চল জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই অনুকূল পরিবেশ কে কাজে লাগিয়ে খরস্রোতা নদী বরাবর বাঁধ নির্মাণ করে অতি সহজেই হিমালয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
VI. অরণ্য সম্পদ - হিমালয় অঞ্চল অরণ্য সম্পদে সমৃদ্ধ। এখানে ক্রান্তীয় বৃক্ষ থেকে শুরু করে আল্পীয় অরন্যের বৃক্ষের সমাবেশ দেখা যায়। এই বৃক্ষ গুলো বিভিন্ন কাষ্ঠ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচা মালের যোগান দেয়। এছাড়া এই অরণ্য অঞ্চলে বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির ভেষজ বৃক্ষও পাওয়া যায়।
VI. কৃষিকাজ - হিমালয় অঞ্চলে সমতলের মতো প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না হলেও পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে ধান, গম প্রভৃতি ফসল স্বল্প পরিমাণে চাষ করা হয়। এছাড়া অর্থকরী ফসল হিসেবে হিমালয় অঞ্চলে চা, আপেল, আঙ্গুর, চেরি প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে।
VII. পর্যটন - হিমালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক পর্যটক হিমালয় অঞ্চলে ভ্রমণে যান।
যা এক দিকে মানুষ কে যেমন বিনোদন প্রদান করে অন্য দিকে হিমালয় হিমালয়ে র বন্ধুর অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ দের আর্থিক অবস্থার উন্নতি তে সাহায্য করে।
VIII. খনিজ সম্পদ - হিমালয়ে প্রচুর পরিমাণে মূল্যমান খনিজ সম্পদ সঞ্চিত আছে। যেমন টার্সিয়ারি যুগের কয়লা, কপার, পারদ, জিঙ্ক প্রভৃতি। যদিও প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বেশ কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ এখনো আরোহণ করা সম্ভব হয়নি।
কোন মন্তব্য নেই: