মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ।। Cloudburst
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এক প্রকারের অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিক বৃষ্টি যা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়, যার
ফলে হড়পা বান ঘটে। অন্যভাবে বললে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হল - খুব অল্প সময়ের জন্য ( ১
মিনিটের কম ) শিলা ও বজ্রপাতের সমন্বিত অত্যাধিক পরিমান বৃষ্টি, যার ফলে ধবংসাত্মক
পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেমন – বন্যা, ভূমিধ্বস, হিমামী সম্প্রপাত, সলিফিকেসন,
কাদাপ্রবাহ, মৃত্তিকা প্রবাহ, সয়েল ক্রিপ ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের মতো।
ভূপৃস্থ
থেকে ১৫ কিমি উচ্চতায় অবস্থিত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকেই মূলত মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হয়ে
থাকে। কোনো মেঘ ভাঙা বৃষ্টি থেকে এক ঘণ্টায় ১৩ সেন্টিমিটারেরও অধিক বৃষ্টি হয়ে থাকে। ক্লাউড ব্রাস্ট (Cloudburst) এর ফলে যে বড়ো বড়ো ফোটার বৃষ্টি হয়, তা যে ল্যাংমুয়ার বৃষ্টিপাত (Langmuir Precipitation) নামে পরিচিত, এতে বৃষ্টির ফোটা গুলি পরস্পর সন্নিবিষ্ট হয়ে বৃহৎ আকার ধারন
করে, ফলে দ্রুত নিচে পতিত হয়।
ল্যাংমুয়ার
বৃষ্টিপাত পদ্ধতি কেবল মাত্র সেই সব মেঘের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যেগুলি ফ্রিজিং পয়েন্ট (freezing point) এর উদ্ধে উত্থিত হয় না। ক্লাউড ব্রাস্ট (Cloudburst) এর উপরের অংশে তাপমাত্রা দ্রুত ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। ফল
স্বরূপ বৃষ্টির ফোটা গুলি পরস্পর সংঘর্সের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে বৃহৎ আকৃতি ধারন
করে খুব দ্রুত নিচে পরে। কোনো কোনো মেঘ ভাঙা বৃষ্টি (Cloudburst) এর সময় প্রতি মিনিটে ২০ মিমি এর বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ক্লাউড ব্রাস্ট (Cloudburst) এর ফলে প্রচুর মানুষের
প্রান হানি ঘটে ও সম্পত্তি নষ্ট হয়।
যেমন – ২০১৩ সালের ১৬ জুন উত্তরাখন্ডে এর ফলে মানুষের
প্রান হানি ঘটে ও সম্পত্তি নষ্ট হয়।
ক্লাউড ব্রাস্ট (Cloudburst) এর ফলে হড়পাবান ও প্রবল বন্যা হয়ে থাকে। যেমন – উত্তরাখন্ডের ক্লাউড ব্রাস্ট ভারতে বর্তমানের সময়ের অন্যতম ভয়াবহ বিপর্যয়।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থাপনা
নিম্নলিখিত
পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে ক্লাউড ব্রাস্ট এর ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা কমানো
সম্ভব
১. বিপর্যয়
প্রবন অঞ্চল গুলি চিহ্নিত করনের মাধ্যমে মানুষ কে সচেতন করা।
২.
আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য পূর্বাভাস প্রদানের জন্য উন্নত ও কার্যকরী প্রযুক্তির
ব্যবহার।
৩.
গ্রামীণ ও পৌর বসতি স্থাপনের জন্য পরিকল্পনার মাধ্যমে সঠিক স্থান নির্বাচন করা।
৪.
জলাধার নির্মানের জন্য অনেক সময় পার্বত্য অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যা পার্বত্য অঞ্চলে
কম্পনের সৃষ্টি করে ও গাছের শিকর আলগা করে দায়। এই সব বিস্ফোরণ বন্ধ করতে হবে।
৫. উন্নয়ন
মূলক পরিকল্পনার জন্য জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বড়ো ডামের পরিবর্তে ছোট ডাম নির্মান করতে হবে প্রভৃতি।
৬. প্রাকৃতিক বিপদ
আপদ থেকে রক্ষার জন্য রাজ্য ও জেলা লেভেলে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ও লঘুকরন কেন্দ্র
থাকবে।
৭. প্রাকৃতিক ভাবে স্পর্শকাতর এলাকায় হোটেল। মোটেল, রেস্তোরা প্রভৃতি ব্যাঙের
ছাতার মতো গজিয়ে তোলা যাবে না।
৮. পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য যে মানবিক সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিকাঠামোর
প্রযোজন হয়, সেগুলির শক্তি বাড়ানো ।
৯. পুনবাসন ও সাহায্যের ক্ষেত্রে কোনো রকম বৈষম্যতা করা যাবে না।
১০. ক্লাউড ব্রাস্ট এর পরবর্তি সময়ে ধ্বংসাবশেষ, রেগোলিথ ও পাথরের নিচে চাপা পরে থাকা মানুষকে
দ্রুত উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
১১.
বিপর্যয়ের পরবর্তী সময়ে নিম্নভূমি অঞ্চলে নানারকম মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়,
তা বোধ করতে হবে। যেমন ম্যালেরিয়া, চিকুণগুনিয়া ও ডেঙ্গু মতো রোগ দেখা যায়।
১২.
ক্লাউড ব্রাস্ট প্রভাবিত অঞ্চলে আবার নতুন
করে জল সরবরাহ, ইলেকট্রিক পোল ও টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃ স্থাপন করতে হবে।
উত্তরাখণ্ড ক্লাউড ব্রাস্ট
উত্তরাখণ্ড কে ‘the
abode of gods’ বলা হয়, যেখানে বরফাবৃত পর্বত, প্রানীন জঙ্গল ও অসংখ্য সুন্দর
পার্বত্য নদীর উপস্থিতি দেখা যায়, যা ভারতে এক পবিত্র তীর্থ স্থান। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী ও পর্যটক উত্তরাখন্ডে আসে। এগুলোর
পাশাপাশি উত্তরাখণ্ডে প্রায় প্রতি বছর ক্লাউড ব্রাস্ট, ভূমিধ্বস ও হড়পাবানের প্রবনতা
দেখা যায়। ২০১৩ সালে ১৬ ডিসেম্বরের ক্লাউড ব্রাস্ট বর্তমান সময়ের এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়
যার ফলে বহু মানুষের প্রানহানী ঘটে। তাই এই বিপর্যয় কে ‘Himalayan
Tsunami’ বলা হয়।
কোন মন্তব্য নেই: