ডেভিসের স্বাভাবিক ক্ষয় চক্র মতবাদ ।। Normal Cycle of Erosion by Davis

১৮৯৯ সালে আমেরিকান ভূবিজ্ঞানী ডেভিস ক্ষয়চক্র সম্পর্কীত ধারনাটির অবতারনা করেন। তাঁর মতে ভূমিরূপ হল গঠন, প্রক্রিয়া ও পর্যায়ের সম্মিলিত পরিনতি। কোনো অঞ্চলের ভূমিরূপের সৃষ্টি ও বিনাশ চক্রবৎ আবর্তনের মাধ্যমে সম্পন্ন হলে তাকে, ক্ষয়চক্র বলে।

ক্ষয়চক্রের নিয়ন্ত্রন কারী উপাদান সমূহ

মানব জীবনের ক্রমবিবর্তনের মতো কোনো অঞ্চলের ভূমিরুপেরও ক্রম বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কানো অঞ্চলের গঠন, ভূ-প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ও বিবর্তনের সময়কাল বা পর্যায় ভূমিরূপের ক্রমবিকাশ কে নিয়ন্ত্রন করে।
শিলার গঠন (Structure) বলতে ডেভিস শিলার সব রকমের বৈশিষ্ট্য যেমন – ভূতাত্ত্বিক সংযুক্তি, কাঠিন্য, প্রবেশ্যতা, ভাঁজ, চ্যুতি ও নতি ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন।

প্রক্রিয়া (Process) বলতে ভূ-পৃষ্টের ওপর ক্রিয়াশীল সব ধরণের প্রাকৃতিক শক্তিকে এবং

পর্যায় (Time or Stage) বলতে ক্রিয়াশীল শক্তির কার্যকারিতার ব্যাপ্তি বা সময়কাল কে বোঝানো হয়েছে।

ডেভিস প্রদত্ত শর্ত

ক্ষয়চক্র সম্পর্কে দারনা উপস্থাপন কালে ডেভিস কত গুলি শর্তের কথা উল্লেখ করেন –

১. সামগ্রিক ভাবে অঞ্চলটি সমুদ্র সমতলের উপর বিদ্যমান থাকবে।

২. শিলা গঠনে সামঞ্জস্য থাকবে অর্থাৎ অঞ্চলটি কঠিন ও নরম শিলা দিয়ে গড়ে উঠবে।

৩. অঞ্চলটির উত্থান পর্ব অতি দ্রুত সম্পন্ন হবে এং উত্থান পর্বে খুব সামান্য ক্ষয় হবে।

৪. সমগ্র অঞ্চলটির জলবায়ু আদ্র প্রকৃতির হওয়া বাঞ্ছনীয়, যার ফলশ্রুতি হিসাবে নদী নালা গুলির 
দ্বারা জল প্রবাহ জনিত ক্ষয় প্রাধান্য পাবে।

৫. ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে অঞ্চলটি ধীরে ধীরে ক্ষয় পেয়ে ক্ষয় সীমা বরাবর সমপ্রায় ভূমিতে পরিনত হবে।

ক্ষয়চক্রের পর্যায়

ভূপৃষ্টের প্রাকৃতিক জলধারা তথা নদীর ক্ষয়কাজের প্রাধান্য থাকায় নদীর ক্ষয় চক্রকে ডেভিস স্বাভাবিক নামে চিহ্নিত করেছেন।

নদীর ক্ষয়চক্র তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। যথা –

১) যৌবন পর্যায়

ক) সূচনা কাল – কোনো অঞ্চলে ভূমি ক্ষয়ের প্রাথমিক ক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অঞ্চলটিতে যৌবন পর্যায়ের সূচনা হয়।
খ) নদীর প্রবাহমানতা – কোনো অঞ্চলে যৌবন অবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে ভুমিভাগের প্রারম্ভিক ঢাল অনুসারে বেশ কয়েকটি প্রধান অনুগামী নদী ও কিছু উপনদীর সৃষ্টি হয়।
গ) নদীর কাজ – নদী গুলিতে পার্শ্ব ক্ষয়ের তুলনায় নিম্ন ক্ষয় বেশি হয়। এছাড়া নদীগুলি মস্তকের দিকে ক্ষয় করতে শুরু করে।
ঘ) নদী উপত্যকার আকৃতি – নদী উপত্যকায় নিম্ন ক্ষয় বেশি হওয়ায় নদী উপত্যকা V আকৃতির হয়।
ঙ) জলপ্রপাত ও খরস্রোতের সৃষ্টি – কঠিন ও কোমল শিলা দিয়ে গড়ে ওঠা অঞ্চল গুলিতে স্থানভেদে জলপ্রপাত ও খরস্রোতের সৃষ্টি হয়।   
চ) জলবিভাজিকার বিদ্যমানতা – দুটি নদীর মধ্যবর্তী জলবিভাজিকা চওড়া হয় ও অনুভূমিক ভাবে বিদ্যমান থাকে।
ছ) ভূমির বন্ধুরতা – যৌবন পর্যায়ে নদী উপত্যকার ভূমিভাগ খাড়া ঢাল যুক্ত হয় ও উত্থান পর্বের প্রাথমিক চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়।

২) পরিনত পর্যায়

ক) সূচনা কাল – ভূমিরুপের উচ্চতা হ্রাস পাওয়ার সময়কাল থেকে পরিনত পর্যায়ের সূচনা হয়।

খ) নদীর প্রবাহমানতা – পরিণত অবস্থায় ভূমিরূপের ওপর সুসংবদ্ধ জলনির্গমন প্রণালী গড়ে ওঠে।

গ) নদীর কাজ – নদী উপত্যকায় নিম্ন ক্ষয়ের তুলনায় পাশ্বক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

ঘ) নদী উপত্যকার আকৃতি – নদী উপত্যকা গুলির মস্তক ভাগ বেশ চওড়া হয় এবং উপত্যকা গুলি দীর্ঘায়িত হতে থাকে।
ঙ) নদী বাঁক ও প্লাবন ভূমির সৃষ্টি – নিম্ন ক্ষয়ের তুলনায় পাশ্বক্ষয় বৃদ্ধি ও ভূমিভাগের উচ্চতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ার ফলে নদী বাঁক বৃদ্ধি পায় এবং নদীর দুপাশে পলি সঞ্চিত হয়ে প্লাবন ভূমি সৃষ্টি হয়।
চ) জলবিভাজিকার প্রকৃতি – জলবিভাজিকা গুলি শৈলশিরার মতো অবস্থান করে।
ছ) ভূমির বন্ধুরতা – উত্থান পর্বের প্রাথমিক চিহ্ন গুলি লোপ পায় এবং নদী গুলির নিম্ন ক্ষয়ের পরিমান হ্রাস পাওয়ায় নদী ঢাল পর্যায়িত অবস্থায় পৌঁছায়।

৩) বার্ধক্য পর্যায়

ক) সূচনা কাল – ভূমিরূপ গঠনের পর সুদীর্ঘ কাল ধরে  বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে অঞ্চলটি প্রায় উঁচু নিচু সমতল ভূমিতে পরিনত হয়ে বার্ধক্য অবস্থার সূচনা করে।

খ) নদীর প্রবাহমানতা – বার্ধক্য অবস্থায় উপনদীর সংখ্যা খুবই কম হয়।

গ) নদীর কাজ – নদীর অবক্ষেপন বা সঞ্চয় কাজের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।

ঘ) নদী উপত্যকার আকৃতি – নদী উপত্যকা গুলি সু প্রশস্থ হয়।

) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ – নদীবাক বৃদ্ধি পেয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

চ) জলবিভাজিকার প্রকৃতি – দুই বা ততোধিক নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের উচ্চতা খুবই ক্মে যায় বলে জলবিভাজিকা গুলির অস্তিত্বই বোঝা যায় না।
ছ) সমপ্রায়ভূমি ও মোনাডনকের সৃষ্টি – আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের ফলে সমগ্র অঞ্চলটি ক্ষয় পেয়ে ক্ষয় করার শেষ সীমার কাছাকাছি এসে পৌঁছে সমতল ভূমিভাগ বা সমপ্রায় ভূমি গঠন করে। এই সমতল ভূমির উপর কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ টিলা গুলিকে মোণাডনক বলে। 


কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.