শিল্পের অবস্থান সম্পর্কিত আগস্ট লস এর মুনাফা সর্বাধিকরন তত্ত্ব – শূন্য চাহিদা, চাহিদা শঙ্কু ।।

জার্মান অর্থনীতিবিদ আগস্ট লস ১৯৪০ সালে সর্বপ্রথম বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে শিল্পের অবস্থান সম্পর্কীত তুলে ধরেন এবং ১৯৫৪ সালে এটিকে ইংরেজি তে অনুবাদ করা হয় আগস্ট লস এর তত্ত্ব টি মুনাফা সর্বাধিকরন (Profit Maximization Theory) বা বাজার কেন্দ্রিক তত্ত্ব নামে পরিচিত

আগস্ট লস জার্মানির বিভিন্ন পৌরএলাকার প্রায় ১৫০ টি পন্যদ্রব্য পরিসেবা ব্যবস্থার অধ্যায়নের মাধ্যমে তার তত্ত্বটি তুলে ধরেন

অনুমান সমূহঃ আগস্ট লস কিছু অনুমানের কথা বলেন-

. এলাকা টি বিস্তৃর্ন সমতল ভূমির অন্তর্গত হবে শিল্পের প্রযোজনীয় কাঁচামাল সর্বত্র সমান ভাবে বন্টিত থাকবে
. পরিবহন ব্যয় সর্বত্র সমান দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে
. উক্ত এলাকার মানুষ জন ব্যবহার, স্বাদ, জ্ঞান  প্রযুক্তি গত দিক থেকে সম প্রকৃতির হবে
. সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য একে বারেই থাকবে না
August Losch

শূন্য চাহিদার দ্বারা বাজার এলাকা চিহ্নিত করনঃ

প্রতিটি খামার বা শিল্প কেন্দ্রের একটি নির্দিষ্ট বাজার এলাকা থাকে  যার উপর উক্ত খামারের একাধিপত্য বিরাজ করে
যা দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে যথা

) Plant Price অর্থাৎ পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ব্যয়
) Delivered Price - অর্থাৎ ক্রেতার নিকট পণ্যদ্রব্য পরিবহন ব্যয়

শূন্য চাহিদার ধারনা (Concept of “0” Demand) শিল্প কেন্দ্র বা খামার থেকে যত দূরত্ব বাড়তে থাকে, পরিবহন ব্যয় জনিত কারণে পন্য দ্রব্যের দামও বাড়তে থাকে দাম বাড়তে বাড়তে এমন এক অবস্থায় পৌছায়, যেখানে পন্যদ্রব্যের দাম (Commodity Price) ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা (Purchasing Power Parity /PPP) প্রায় সমান হয় ফলে সেখানে আর সেই দ্রব্যের কোনো চাহিদা থাকে না, একেই শূন্য চাহিদা (Zero Demand) বলে
অর্থাৎ শূন্য চাহিদার উপর ভিত্তি করে সহজেই বাজার এলাকা চিহ্নিত করা যায়

ভারসাম্য স্থান ( Space Equilibrium) – একটি নির্দিস্ট স্থানে খামার গুলি সময়ের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়ে এক সময় এসে ভারসাম্য অবস্থা প্রাপ্ত হয় যেমন-

) একচেটিয়া খামার বা শিল্প কেন্দ্রঃ এক্ষেত্রে একটি খামারের সমগ্র এলাকাটি তে আধিপত্য থাকবে, খামার টি ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করলেও তা সমগ্র এলাকার চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়

) দুই বা তিনটি খামারের সমাবেশঃ এই পর্যায়ে সমগ্র এলাকায় দুই বা তিন টি শিল্প খামার থাকবে খামার গুলি তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করে উক্ত এলাকার চাহিদা মেটানো চেষ্টা করবে ফলে উক্ত খামার গুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা দেবে, যার ফল স্বরূপ গোলাকার বাজার কালক্রমে ষড়ভূজাকার আকৃতি ধারন করবে

) প্রতিযোগিতা মূলক বাজার ভারসাম্য স্থানঃ সর্বশেষ পর্যায়ে উক্ত এলাকায় নতুন শিল্প খামার স্থাপনের জন্য কোনো শূন্য স্থান থাকবে না এবং খামার গুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায় শিল্পজাত দ্রব্যের দাম কম এই অবস্থাকেই ভারসাম্য অবস্থা বলে



চাহিদা শঙ্কুর ধারনা (Demand Cone) -  আগস্ট লস তার মুনাফা সর্বাধিকরন তত্ত্বে স্থানিক চাহিদা শঙ্কু কথা বলেন তার মতে খামারের নিকট পন্যদ্রব্যের দাম সব থেকে কম হয় এবং উৎপাদন কেন্দ্র থেকে যত দূরত্ব বাড়তে থাকে পন্য পরিবহন ব্যয়ও তত বাড়তে থাকে, ফলে দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকে ফলস্বরূপ চাহিদা কমতে থাকে

অর্থাৎ খামারের নিকট চাহিদা রেখা সবচেয়ে উঁচুতে এবং শূন্য চাহিদা যুক্ত স্থানে চাহিদা রেখা সর্বনিম্ন স্থানে বা ভূমিতে স্পর্শ করে এভাবে চাহিদা রেখাটি শঙ্কু আকৃতি ধারন করে   

লশের তত্ত্বের ধনাত্মক দিকঃ
. লশ প্রতিযোগিতা মূলক বাজারের কথা বলেন, বর্তমানে যা সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়
. তিনি শূন্য চাহিদার যে ধারনা টা দেন, বর্তমানে তারও যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে
. তিনি শূন্য চাহিদা ধারনা মাধ্যমে বাস্তব সত্যতা কে তুলে ধরেছেন কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই দাম নির্ধারিত হয়


কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.