ওজোন স্তর বিনাশে সিএফসির (CFC) ভূমিকা
বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর
বিনাশে সিএফসির (CFC) ভূমিকা আলোচনার পূর্বে আমাদের ওজোন স্তর কী, ওজোন স্তর কীভাবে
আমাদের রক্ষা করে ও সিএফসি গ্যাসের উৎস গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করা
হলো।
ওজোন স্তর – বায়ুমণ্ডলে
অবস্থিত বিভিন্ন গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি গ্যাস হল ওজোন যা বায়ুমণ্ডলে
খুব সামান্য পরিমানে উপস্থিত রয়েছে। এই ওজোন গ্যাসের সমাবেশ বা উপস্থিতি সবচেয়ে
বেশি লক্ষ্য করা যায় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যার বিস্তৃতি ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত কিন্তু মাত্র ২০
থেকে ৩৫ কিমির মধ্যে ওজোন গ্যাসের পরিমান সব থেকে বেশি থাকায় একেই ওজোন স্তর বলা
হয়।
প্রাকৃতিক সৌর পর্দা –
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন গ্যাসের স্তরকে প্রাকৃতিক সৌর পর্দা বলা হয়ে
থাকে। কারণ এই গ্যাস সূর্য থেকে ক্ষুদ্র তরঙ্গ রূপে আগত মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে
ক্ষতিকারক অতিবেগুলি রশ্মি শোষণ করে জীব প্রজাতিকে
রক্ষা করে পৃথিবীতে প্রানের বিকাশে সাহায্য করেছে।
সূর্য থেকে যে আলোক রশ্মি পৃথিবীর দিকে আসে তা তরঙ্গের
আকারে পৃথিবী পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। এই আগত সৌররশ্মির মধ্যে যে গুলির মান ০.৪ মাইক্রোমিটারের কম তাদের ক্ষুদ্র তরঙ্গ
বলা হয়। এই ক্ষুদ্র তরঙ্গ গুলি অতি তীব্র প্রকৃতির হয় যা পৃথিবীর জীব জগতের পক্ষে
অত্যন্ত ক্ষতিকারক। সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনিরশ্মি ০.০১ মাইক্রোমিটার থেকে ০.৪ মাইক্রোমিটার তরঙ্গ
দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে ফলে এই অতিবেগুলি রশ্মি গুলিও জীবজগতের পক্ষে ক্ষতিকারক। বায়ুমন্ডলে
অবস্থিত নাইট্রোজেন ০.১২ মাইক্রোমিটারের কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সূর্য রশ্মি
গুলিকে শোষণ করে নেয় এবং ০.১২ থেকে ০.৪ মাইক্রোমিটারের মধ্যবর্তী তরঙ্গ দৈর্ঘ্য
শোষণে ওজোন স্তর গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি – উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন উৎপন্ন হয় তা
ক্রমে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে এসে পৌঁছায়। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত এই অক্সিজেন(O2) অনু সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে আলোক রাসায়নিক
বিক্রিয়ায় দুটি অক্সিজেন পরমানুতে (O) পরিনত হয়। পরবর্তীতে এই অক্সিজেন পরমানু (O) একটি অক্সিজেন
অনুর সাথে যুক্ত হয়ে ওজোন(O3) সৃষ্টি
করে। আর এই ওজোন (O3)
কনা অতিসহজেই অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ
করে নেয়।
ওজোন কনা যখন অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে তখন এটি আবার
অক্সিজেন অনু ও পরমানুতে বিভক্ত হয়ে যায়। এই বিভক্ত অক্সিজেন পরমানু আবার কোন
অক্সিজেন অনুর সাথে যুক্ত হয়ে নতুন একটি ওজোন কনার বিকাশ ঘটায়। এই প্রক্রিয়া
বিরামহীন ভাবে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে চলতে থাকে। তাই বলা হয় বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের
সৃষ্টি ও বিনাশ একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এই ওজোন গ্যাস ০.১৮ থেকে ০.৩৪
মাইক্রোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট UV শোষণ করতে সক্ষম। মাত্র ০.৩৪ থেকে ০.৪
মাইক্রোমিটার ব্যাসের সৌর তরঙ্গ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রবেশ
করে ত্বকে ক্যানসার ও অন্যান্য রোগের সৃষ্টি করে। যেমন ওজোন স্তর UV- c ও UV –b প্রায় পুরোটায় শোষণ করে নেয় এবং UV-a আংশিক শোষণ করে।
সিএফসি(CFC) গ্যাসের উৎস ও
ওজোন বিনাশে সিএফসির ভূমিকা
বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে মানুষের
কার্যকলাপের ফলে উৎপন্ন সিএফসি বায়ুমণ্ডলের ওজোন গ্যাস কে বিনষ্ঠ করে দিচ্ছে।
সিএফসি সবচেয়ে অধিক ব্যবহৃত হয় রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিসনার, স্প্রে ক্যান,
সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে। এই সমস্ত দ্রব্য ব্যবহারে উৎপন্ন সিএফসি যার প্রধান উপাদান
ক্লোরিন এবং অন্যান্য উৎস থেকে নির্গত ব্রোমিন ধীরে ধীরে বায়ুমণ্ডলের উপরে
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে এসে পৌঁছায়। এই ক্লোরিন ও ব্রোমিন অতি সহজেই বায়ুর
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত অক্সিজেন পরমানুর সাথে যুক্ত হয়ে ওজোন সৃষ্টিতে বাধা
প্রদান করে। কারণ বেশির ভাগ অক্সিজেন পরমানু ক্লোরিনের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়ায়
অক্সিজেন অনুর সাথে যুক্ত হয়ে ওজোন কনা সৃষ্টির জন্য অক্সিজেন পরমানুর অভাব লক্ষ্য
করা যায়, ফলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি হয়।
CFC ----------- Cl
Cl + O3
----- ClO + O2
যার ফলস্বরূপ অতিবেগুনি
রশ্মি অতি সহজেই প্রবেশ করে জীবজগতের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যদিও ১৯৯৬ সাল থেকে
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সিএফসির উৎপাদন বন্ধ করার পর ওজোন স্তর আস্তে আস্তে আবার
আগের অবস্থায় ফিরে আসছে।
কোন মন্তব্য নেই: