মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কীত পি. কোটেশ্বরমের 'তাপীয় ইঞ্জিন' তত্ত্ব
পি. কোটেশ্বরমের তাপীয় ইঞ্জিন তত্ত্ব মৌসুমি বায়ুর
উৎপত্তি সম্পর্কীত আধুনিক ধারণা গুলির মধ্যে অন্যতম যা তিব্বত মালভূমির উষ্ণকরনের
সাথে সম্পর্কীত। এর আগে হ্যালির ধ্রুপদীয় তত্ত্ব বা Classical Theory যা ‘স্থল ও জলভাগের উচ্চচাপ
ও নিম্নচাপের তারতম্যের তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত’ তা মৌসুমি বায়ুর
উৎপত্তির সাধারন ধারণা দিতে সক্ষম হলেও সামগ্রিক ব্যাখ্যা দিতে পারিনি। কিন্তু
১৯৫০ এর দশকের পর থেকে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের গবেষণার মাধ্যমে উপরিস্তরের
বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আরোহন করা সম্ভব হয়েছে যা মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি
রহস্য উৎঘাটনে সাহায্য করেছে। সেই রকমই একটি ধারণা বা Concept হল পি. কোটেশ্বরমের
তাপীয় ইঞ্জিন তত্ত্ব (Thermal Engine Theory)।
১৯৭৩ সালে রাশিয়া ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে
ভারত মহাসাগরে মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কীত গবেষণা চালান হয় যা MONEX নামে পরিচিত।
এই গবেষনায় প্রমানিত হয় যে ভারতে মোসুমি বায়ুর আগমনে তিব্বত মালভূমির এক গুরুত্বপূর্ন
ভূমিকা রয়েছে। এই গবেষণার আগেই ১৯৫৮ সালে পি. কোটেশ্বরম মৌসুমি বায়ুতে তিব্বত মালভূমির যে ভূমিকা রয়েছে তা ব্যাখ্যা
করেন।
তিব্বত মালভূমি ভারতের উত্তরে অবস্থিত
যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০০ মিটার উঁচু এবং ৪.৫ মিলিয়ন বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই
মালভূমি অঞ্চল গ্রীষ্মকালে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি
উষ্ণ হয়। এই উষ্ণ অঞ্চল থেকে বায়ু হালকা হয়ে উদ্ধগামী হয়ে মেঘে পরিনত হয়। এই মেঘ
থেকে নির্গত লীনতাপ ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের অংশে বিপরীত মুখী আবর্ত বা প্রতীপ
ঘূর্নবাতের সৃষ্টি করে। এই প্রতীপ ঘূর্নবাতের বায়ুর কিছু অংশ ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের
অংশ দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত
হয়ে পশ্চিম ভারত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অংশে অবনমিত হয়। তারপর এই অবনমিত বায়ু
নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিন পশ্চিম দিক থেকে নিরক্ষীয় পশ্চিমা বায়ু রূপে
ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। প্রবেশকালে সমুদ্র থেকে প্রচুর পরিমানে জলীয় বাষ্প ধারন করে
ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। আবার শীতকালে যখন তিব্বত মালভূমি অতিরিক্ত শীতল হয়ে পড়ে
তখন তিব্বত মালভূমি অঞ্চলের নিম্ন বায়ুমণ্ডলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়, যা ভারতবর্ষে
শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে শীতল ও শুষ্ক বায়ুপ্রবাহ ঘটায়। এই ভাবে ভারতের
উত্তরে অবস্থিত তিব্বত মালভূমি শীত ও গ্রীষ্মকালে বিপরীত মুখী মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে
গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
কোন মন্তব্য নেই: