প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে

প্রাকৃতিক পরিবেশ - পরিবেশ শব্দটির উৎপত্তি জার্মান শব্দ "Environ" থেকে যার অর্থ 'En' অর্থে In অর্থাৎ মধ্যে এবং "viron" অর্থে 'curcuit' অর্থাৎ পরিবেষ্টন সুতরাং পরিবেশ (Environment) বলতে পরিবেষ্টনকারী পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে বোঝায়। জীবজগৎ এই পৃথিবীর বা মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা পরিবেষ্টিত। অতএব পরিবেশ হল জীবের পরিবেষ্টনকারী উপাদান গুলির পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পারিপার্শ্বিক অবস্থা। পরিবেশ বিজ্ঞানী বটকিন ও কেলার (১৯৯৫) তাদের " Environmental Science" গ্রন্থে বলেন - জীব অর্থাৎ উদ্ভিদ বা প্রানী তাদের জীবনচক্রের যে কোনো সময়ে যে সমস্ত জৈব এবং অজৈব কারণ গুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেই কারণ গুলির সমষ্টিকে পরিবেশ বলে। 
তাই আমরা বলতে পারি যে প্রকৃতি সৃষ্ট পরিবেশই হল প্রাকৃতিক পরিবেশ। অর্থাৎ প্রকৃতি সৃষ্ট জড় উপাদান ও সজীব উপাদানের সমন্বয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে, তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। 

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান সমূহ - প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলিকে সাধারনত দুটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়, যথা - (A) সজীব  উপাদান ও (B) জড় উপাদান। 

সজীব উপাদান কাকে বলে?
প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্গত যে সব উপাদানের প্রান আছে যেমন - ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া থেকে অতি বৃহৎ প্রানী, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও উদ্ভিদগোষ্ঠী সবই পরিবেশের সজীব উপাদান হিসাবে গন্য হয়। পুষ্টিস্তর অনুযায়ী পরিবেশের সজীব উপাদান গুলিকে দুই ভাবে ভাগ করা যায় - (I) স্বভোজী ও (II) পরভোজী। 

স্বভোজী কাকে বলে? 
সালোকসংশ্লেষ ও রাসায়নিক সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যারা নিজেদের দেহে নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করতে সক্ষম অর্থাৎ যাদের খাদ্যের জন্য অন্য কোনো জীব প্রজাতির উপর নির্ভর করতে হয় না, তাদের স্বভোজী বলে। যেমন - সবুজ উদ্ভিদ। এরা আবার দুধরনের হয় -  (a) আলোকজীবী বা ফোটোট্রপ ও (b) অনালোকজীবী বা কেমোট্রপ। যে সব স্বভোজী সূর্যের উপস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন করে, তাদের ফোটোট্রপ বলে এবং যে সব স্বভোজী সূর্যালোকের অনুপস্থিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে তাদের কেমোট্রম বলে। কেমোট্রম জাতীয় স্বভোজীর উদাহরণ হল - ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়া। 

পরভোজী কাকে বলে?
পরবেশের সজীব উপাদানের অন্তর্গত যে সব উপাদান নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারে না এবং যারা খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে স্বভোজী বা সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল, সেই সব জীবগোষ্ঠীকে পরভোজী বলে। যেমন - সমস্ত প্রানীগোষ্ঠী ও কিছু পতঙ্গভুক উদ্ভিদ গোষ্ঠী। পরভোজী জীবগোষ্ঠী প্রধানত তিন ধরণের হয় -  (a) মৃতজীবী (ছত্রাক),  (b) পরজীবী (স্বর্নলতা, শ্বেতচন্দন, কৃমি, উকুন) ও (c) জৈবযৌগজীবী (মানুষ, গরু, বাঘ)। 

জড় উপাদান কাকে বলে? 
পরিবেশের যে সব উপাদান উত্তেজনায় সাড়া দেয় না, এমন প্রানহীন অচেতন পদার্থ বা বস্তু জড় পদার্থের অন্তর্গত। পরিবেশের জড় উপাদান গুলি হল - বিভিন্ন গ্যাস ( কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস প্রভৃতি), মাটি, ভূপ্রকৃতি, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, শিলা, খনিজ, নদী, সমুদ্র, হ্রদ প্রভৃতি। পরিবেশের এই উপাদান গুলি তিনটি উৎস থেকে আসে, যথা - শিলামন্ডল, বারিমন্ডল ও বায়ুমণ্ডল। 

প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য - প্রাকৃতিক পরিবেশের নানবিধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এগুলি নিচে আলোচনা করা হল। 
প্রাচীনত্ব - প্রাকৃতিক পরিবেশের উৎপত্তি পৃথিবী সৃষ্টির সময়কাল থেকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের উৎপত্তি একসঙ্গে না হলেও এর প্রাচীনত্ব নিয়ে কোন সংশয় নেই। 

বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয় - প্রাকৃতিক পরিবেশ বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি উপাদান স্বনিয়ন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও এগুলি পরস্পরের সঙ্গে সুদূঢ় সমন্বয়ের ভিত্তিতে সহাবস্থান করছে।

পরিবেশের ভারসাম্য - পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। সাময়িক ভাবে কোন উপাদানের পরিমানের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলেও তা দ্রুত ভারসাম্যে ফিরে আসে। 

পরিবর্তনশীলতা - পৃথিবীর জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে, তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ সদা পরিবর্তনশীল। 

নিয়মানুবর্তীতা - প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলির মধ্যে যে সব প্রক্রিয়া কাজ করে সেগুলি সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। 

আন্তঃসম্পর্ক - পরিবেশ গঠনকারী উপাদান গুলির মধ্যে নিবিড় আন্তঃসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই কোন একটি উপাদানের পরিবর্তন ঘটলে অন্য আর একটি উপাদানের পরিবর্তন ঘটে। 

উন্মুক্ত বাস্তুতন্ত্র - পরিবেশের উপাদান গুলির মধ্যে শক্তির স্থানান্তর ও রূপান্তর উন্মুক্ত তন্ত্রের মাধ্যমে ঘটে থাকে।   
 

 

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.