অষ্টম শ্রেনী ভূগোল চতুর্থ অধ্যায়


অষ্টম শ্রেনী ভূগোল চতুর্থ অধ্যায় - চাপবলয় ও বায়ুপ্রবাহ থেকে প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হল।  

১. বায়ুর চাপ বলতে কী বোঝ?
উত্তর - বায়ুর চাপ আবহাওয়া ও জলবায়ুর এক গুরুত্বপূর্ন উপাদান। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষন শক্তি বায়ুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষন করে বলে অন্যান্য পদার্থের মতো বায়ুরও ওজন আছে এবং ওজন আছে বলে বায়ুর চাপও আছে। ভূপৃষ্ঠে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বায়ু যে পরিমান চাপ প্রদান করে, তাকেই বায়ুর চাপ বলা হয়। বায়ুর চাপ সাধারনত মিলিবার এককে প্রকাশ করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠে পৃথিবীর বায়ুর চাপ প্রায় ১০১৩.২৫ মিলিবার আর এই বায়ুর চাপ ব্যারোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়। 

২. বায়ুচাপ বলয় কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবী পৃষ্ঠের ওপর নির্দিষ্ট দূরত্বে সমধর্মী বায়ুস্তর অনুভূমিক ভাবে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার জুড়ে পুরো পৃথিবীকে কয়েকটি বলয়ের আকারে বেষ্টন করে আছে । একে বলে বায়ুচাপ বলয়। সারা পৃথিবীব্যাপী এই রকম তিনটি নিম্নচাপ বলয় ও চারটি উচ্চচাপ বলয় আছে। 

৩. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের অবস্থান ও সৃষ্টির কারণ উল্লেখ করো?
উত্তর - নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ৫-১০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সারা বছর ধরে বায়ুর নিম্নচাপ দেখা যায়। একে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চল বলে। 
নিরক্ষীয় নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণঃ ক] এই অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্ব ভাবে কিরন দেয় বলে বায়ু খুব উষ্ণ ও হালকা হয়। ফলে বায়ুর চাপ কম হয়। খ] নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি বলে বায়ুতে প্রচুর পরিমানে জলীয় বাষ্প থাকে। ফলে জলীয় বাষ্পপূর্ন বায়ুর চাপ কম হয়। গ] পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে এই অঞ্চলের ওপরের বায়ু উত্তরে ও দক্ষিনে ছিটকে যায়। ফলে বায়ুচাপ কম হয়।

৪. নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম কাকে বলে?
উত্তর - নিরক্ষীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু মিলিত হয় কিন্তু এই বায়ু নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের কাছাকাছি আসা মাত্র নিরক্ষীয় অঞ্চলের প্রচণ্ড উষ্ণতার সংস্পর্শে এসে হালকা ও উষ্ণ হয়ে সোজা উপরের দিকে উঠে যায়, তাই এই অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বায়ুর অনুভূমিক প্রভাব দেখা যায় না বলে একপ্রকার শান্তভাব বিরাজ করে। একে নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম বলে।

৫. কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ অঞ্চলের অবস্থান ও সৃষ্টির কারণ উল্লেখ করো?
উত্তর -  উভয় গোলার্ধে ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সারাবছর ধরে বায়ুর উচ্চচাপ দেখা যায়, একে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় বলে। 
উচ্চচাপ সৃষ্টির কারনঃ ক] নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের উষ্ণবায়ু ওপরে উঠে শীতল হয় এবং পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে তা উত্তরে ও দক্ষিনে ছিটকে গিয়ে ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চলে নীচের দিকে নেমে আসে। ফলে বায়ুর চাপ বেশি হয়। খ] সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের শীতল বাতাস পৃথিবীর আবর্তনের ফলে ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। ফলে বায়ুর চাপ বেশি হয়। 

৬. অশ্ব অক্ষাংশ কাকে বলে? 
উত্তর - কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়ের অন্তর্গত ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে শীতল ও ভারী বাতাস ওপর থেকে নিচে নেমে আসে বলে বায়ুর কোনো অনুভূমিক বা সমান্তরাল প্রবাহ লক্ষ্য করা যায় না। এক প্রকার শান্তভাব বজায় থাকে বলে অতীত কালের পালতোলা জাহাজ গুলি এই অঞ্চলে এসে গতিহীন হয়ে পড়ত। এই শান্ত অঞ্চলটিই অশ্ব অক্ষাংশ নামে পরিচিত। 

৭. মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের অবস্থান ও সৃষ্টির কারণ উল্লেখ করো?
উত্তর - উভয় গোলার্ধে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অর্থাৎ সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের দুপাশে সারা বছরই বায়ুর নিম্নচাপ দেখা যায়। এই নিম্নচাপ অঞ্চলটিই সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় নামে পরিচিত। 
নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টির কারনঃ  এই অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তনের বেগ তুলনামূলক ভাবে বেশি বলে এই অঞ্চলের বায়ু ক্রান্তীয় ও মেরু অঞ্চলের দিকে ছিটকে যায়। ফলে বায়ুর চাপ কম হয়।  

৮. সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়ের অবস্থান ও সৃষ্টির কারণ লেখ?
উত্তর - ৮০ ডিগ্রি থেকে মেরুর মধ্যবর্তী অঞ্চলে সারা বছর ধরে যে উচ্চচাপ বিরাজ করে, তাকে সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় বলে। উচ্চচাপ সৃষ্টির কারনঃ ক] এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারাবছরই খুব তির্যকভাবে পড়ে বলে বাতাস খুব শীতল ও ভারী হয়। ফলে বায়ুর চাপ বেশি হয়। খ] প্রচণ্ড ঠাণ্ডার জন্য এই অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্প খুব কম থাকে বলে বায়ুর চাপ বেশি হয়। গ] সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের নিম্নচাপ বলয় থেকে ঊর্ধ্বগামী বাতাস এই মেরু অঞ্চলে এসে অবনমন করে বলে, বায়ুর চাপ বেড়ে যায়।

৯. বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবী পৃষ্ঠে বায়ুচাপের সমতা বজায় রাখার জন্য বায়ু যখন উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে চলাচল করে বা প্রবাহিত হয়, তখন তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে। 

১০. কোরিওলিস বল কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবীর আবর্তন বা ঘূর্নন জনিত কারণে যে কেন্দ্রবর্হিমুখী বলের সৃষ্টি হয়, তাকে কোরিওলিস বল বলে। এই কোরিওলিস বলের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠের সংলগ্ন যে কোন গতিশীল বস্তু সোজাপথে না চলে কিছুটা দিক বিক্ষেপ ঘটায়। যেমন বাতাস ও সমুদ্র স্রোতের প্রবাহ পথের সামান্য দিক পরিবর্তন হয়। 

১১. ফেরেলের সূত্র কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবীর আবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট কোরিওলিস বলের প্রভাবে বায়ু সোজাপথে প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহের দিক পরিবর্তন সম্বন্ধীয় এই নিয়মটি ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত। 

১২. বাইস ব্যালট সূত্র কী?
উত্তর - ডাচ আবহবিদ বাইস ব্যালট ১৮৫৭ সালে বায়ুচাপের পার্থক্য ও বায়ুপ্রবাহের মধ্যে সম্পর্ক উল্লেখ করেন। তার মতে উত্তর গোলার্ধে বায়ু প্রবাহের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বাম দিকের বায়ুতে চাপ কম অনুভূত হয় অর্থাৎ ডানদিকে বায়ুর উচ্চচাপ ও বামদিকে বায়ুর নিম্নচাপ বিরাজ করে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত এই বৈশিষ্ট্যটি বাইস ব্যালট সূত্র নামে পরিচিত। 

১৩. নিয়ত বায় কাকে বলে?
উত্তর - সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে নিয়ত বায়ু বলে। নিয়ত বায়ু তিনপ্রকার - আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু। 

১৪. আয়ন বায়ু কাকে বলে?
উত্তর - কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে সারা বছর ধরে নিয়মিত ভাবে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ুকে আয়ন বায়ু বলে। উত্তর গোলার্ধে এই ফেরেলের সূত্র অনুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ু বামদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নামে প্রবাহিত হয়। 

১৫. আয়ন বায়ুর আরেক নাম কী?
উত্তর - বানিজ্য বায়ু 

১৬. কোন বায়ুর প্রভাবে মহাদেশ গুলির পশ্চিমদিকে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর - আয়ন বায়ুর প্রভাবে

১৭. ক্রান্তীয় অঞ্চলে মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে অধিকাংশ মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে কেন? 
উত্তর - পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমি মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে অবস্থিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ গুলির মধ্যে অন্যতম আয়ন বায়ু। উভয় গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব আয়ন বায়ু সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প গ্রহন করে মহাদেশ গুলির পূর্ব দিকে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় কিন্তু সেই আয়ন বায়ু যখন মহাদেশের পশ্চিম অংশে পৌঁছায় তখন সেই বায়ুতে আর জলীয় বাষ্প থাকে না বলে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। বৃষ্টিপাত হয় না বলে মহাদেশের পশ্চিম অংশে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন - আফ্রিকার সাহারা, কালাহারি প্রভৃতি। 

১৮. ITCZ কী ?
উত্তর - উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর মিলন অঞ্চলকে আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল বা ITCZ বলে। ITCZ এর পুরো নাম ইন্টার ট্রপিক্যাল কনভারজেন্ট জোন। পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর এই রকম তিনটি আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল অবস্থিত। 

১৯. পশ্চিমা বায়ু কাকে বলে? 
উত্তর - উভয় গোলার্ধে ৩০ থেকে ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত নিম্নচাপ  অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত বায়ুকে, পশ্চিম বায়ু বলে। ফেরেলের সূত্র অনুসারে এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে, এই বায়ুকে পশ্চিমা বায়ু বলে। 

২০. কোন বায়ুর প্রভাবে মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে?
উত্তর - পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে 

২১. মেরু বায়ু কাকে বলে?
উত্তর - সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের দিকে সারা বছর ধরে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে মেরু বায়ু বলে। উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু ও দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু নামে পরিচিত। 

২২. কোন বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরের সন্নিহিত দেশ গুলি বৃষ্টিপাত হয় না?
উত্তর - উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে 

২৩. কোন বায়ুর প্রভাবে শীতকালে ভূমধ্যসাগরের সন্নিহিত দেশ গুলিতে বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর - দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে 

২৪. সাময়িক বায়ু কাকে বলে?
উত্তর - যে বায়ু একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে কিংবা দিন ও রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রবাহিত হয় কিন্তু অন্য সময় যে বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায় না, তাকে সাময়িক বায়ু বলে। যেমন - মৌসুমি বায়ু, সমুদ্র বায়ু, স্থল বায়ু। 

২৯. সমুদ্র বায়ু ও স্থলবায়ু সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো?
উত্তর - সমুদ্র ও স্থলবায়ুর মূলকারন হল দিন ও রাতে স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য। দিনের বেলা স্থলভাগ যত তাড়াতাড়ি তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হতে পারে জলভাগ পারে না, তাই দিনের বেলা স্থলভাগের উপর অধিক উষ্ণতার জন্য নিম্নচাপ ও জলভাগ তথা সমুদ্রের ওপর উচ্চচাপ বিরাজ করে। যার ফলে দিনের বেলা বিশেষ করে বিকেল বেলা সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে যে বাতাস প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্র বায়ু বলে, কারণ বায়ু যেদিক থেকে প্রবাহিত হয়, সেই দিক অনুসারে তার নাম রাখা হয়। অপর দিকে রাতের বেলা স্থলভাগ অতি দ্রুত শীতল হয়ে যায় কিন্তু সেই তুলনায় জলভাগ শীতল হতে পারে না, তখন জলভাগের উষ্ণতা সামান্য বেশি হওয়ায় সমুদ্রের উপর নিম্নচাপ ও স্থলভাগের উপর উচ্চচাপ বিরাজ করে। তাই রাতের বেলা স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত হওয়ায় একে স্থল বায়ু বলে। ভোরের দিকে স্থল বায়ুর গতিবেগ বেশি হয়। 

৩০. কোন বায়ুকে স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করন বলা হয়?
উত্তর - মৌসুমি বায়ু কে 

৩১. মৌসুমি বায়ুকে সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর বৃহৎ সংস্করন বলা হয় কে?
উত্তর - সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর মতো মৌসুমি বায়ু সৃষ্টির কারণ হল ঋতু বিশেষে স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে তাপের পরিবর্তনের সাথে সাথে চাপের পরিবর্তন। সাধারনত স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে শীত ও গ্রীষ্মকালে চাপের পার্থক্য জনিত কারণে যে বিপরীতমুখী বায়ু প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়, তাকে মৌসুমি বায়ু বলে। গ্রীষ্মকালে ভারতীয় ভূখণ্ডে অধিক উষ্ণতা জনিত কারণে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় কিন্তু এই সময় ভারত মহাসাগরের জল তুলনায় শীতল থাকায় উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। যার ফলে এই সময় ভারত মহাসাগর থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের দিকে জলীয় বাষ্পপূর্ন যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে। একই ভাবে শীতকালে স্থলভাগ অধিক শীতল হয়ে পড়লে স্থলভাগের উপর উচ্চচাপ ও জলভাগের উষ্ণতা বেশি হওয়ায় জলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। এই সময় ভারতীয় স্থলভাগ থেকে ভারত মহাসাগরের দিকে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ দেখা যায়। একে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে। 

৩২. শীতকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি প্রায় হয় না কেন? 
উত্তর - শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ভারতীয় ভূখন্ডের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় বলে শীতল ও শুষ্ক এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে না, তাই শীতকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি প্রায় হয় না। 

৩৩. মৌসুমি বায়ুকে সাময়িক বায়ু বলে কেন? 
উত্তর - মৌসুমি বায়ু যেহেতু বছরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে অর্থাৎ শীত ও গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত হয়ে থাকে, বছরের অন্য সময় যার প্রবাহ লক্ষ্য কর যায় না, তাই মৌসুমি বায়ুকে সাময়িক বায়ু বলে। 

৩৪. অ্যানাবেটিক বায়ু কাকে বলে?
উত্তর - পার্বত্য অঞ্চলে পর্বতের ঢাল বয়াবর প্রবাহিত এক প্রকার বায়ু শীতল ও উচ্চচাপযুক্ত বায়ু হল অ্যানাবেটিক বায়ু। মূলত দিনের বেলা কোনো পার্বত্য উপত্যকার নীচের বা মাঝের অংশের তুলনায় উপরের অংশের বাতাস সূর্যের তাপে উষ্ণ ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। কিন্তু মাঝের অংশের বাতাস তত টা উত্তপ্ত হতে পারে না। উপরের অংশের বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠলে ঊর্ধ্ব অংশে যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয় তা পূরন করার জন্য পর্বত উপত্যকার ঢাল বরাবর নীচের অংশ থেকে শীতল বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়, এই ঊর্ধ্বমুখী শীতল বায়ুকে অ্যানাবেটিক বায়ু বলে। উপত্যকা বরাবর প্রবাহিত হয় বলে একে উপত্যকা বায়ুও বলা হয়। এই বায়ু দিনের বেলা প্রবাহিত হয়ে থাকে। 

৩৫. ক্যাটাবেটিক বায়ু কাকে বলে?
উত্তর - ক্যাটাবেটিক বায়ুর প্রবাহ পার্বত্য অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। রাতের বেলা পর্বতের ঢালের উপরের অংশের বায়ু তাপ বিকিরন করে দ্রুত শীতল ও ভারী হয়ে পরে। ওই শীতল ও ভারী বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর পার্বত্য ঢালের উপরের অংশ থেকে নীচের দিকে নামতে থাকে, এই নিম্নগামী বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু  বলে। এই বায়ুর আরেক নাম পার্বত্য বায়ু। 

৩৬. ভারতে প্রবাহিত দুটি স্থানীয় বায়ুর নাম উল্লেখ করো?
উত্তর - লু ও আঁধি 

৩৭. কোথায় সবচেয়ে বেশি স্থানীয় বায়ুর প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়?
উত্তর - ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে

৩৮. উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলে প্রবাহিত স্থানীয় বায়ুর নাম কী?
উত্তর - চিনুক 

৩৯. সিরক্কো বায়ু কোথায় প্রবাহিত হয়ে থাকে?
উত্তর - লিবিয়া মরু অঞ্চলে 

৪০. আকস্মিক বায়ুর উদাহরণ দাও?
উত্তর - ঘূর্নবাত ও প্রতীপ ঘূর্নবাত 

৪১. ঘূর্নবাত কাকে বলে?
উত্তর - ভূপৃষ্ঠের কোন স্বল্প পরিসর স্থানে হঠাৎ করে অধিক উত্তাপ জনিত কারণে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হলে, তাকে ঘূর্নবাত বলে। উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ও দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হয়। 

৪২. প্রতীপ ঘূর্নবাত কাকে বলে?
উত্তর - কোন স্থানে অধিক শীতলতার জন্য উচ্চচাপের সৃষ্টি হলে, ওই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ুর ঘূর্নির আকারে ঘুরতে ঘুরতে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। ঘূর্নবাতের বিপরীত এই অবস্থাকে প্রতীপ ঘূর্নবাত বলে। 

৪৩. কোন ধরণের ঘূর্নবাতের সাথে মেঘমুক্ত, শুষ্ক ও রোদ ঝলমলে অবস্থা যুক্ত থাকে?
উত্তর - প্রতীপ ঘূর্নবাতের সাথে 

২টি মন্তব্য:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.