নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের মৎস্য ক্ষেত্র গুলির উন্নতির কারণ


পৃথিবীর প্রধান মৎস্য চারণ ক্ষেত্র গুলি উত্তর গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রের মগ্নচড়া গুলিতে অবস্থিত। অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের মৎস্য ক্ষেত্রের বিকাশ ঘটেছে। নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের মৎস্য ক্ষেত্র গুলির উন্নতির কারণ গুলি।সম্পর্কে নিম্নে আলোচিত হল

অগভীর সমুদ্র বা মগ্ন চড়া: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মৎস্য ক্ষেত্র গুলি অগভীর সমুদ্রের কোন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। কারণ মুসলমান অঞ্চলের অগভীর সমুদ্রের সূর্যের আলো অতি সহজে প্রবেশ করতে পারে বলে, এখানে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্লাংটন গুলির প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া স্থল ভাগ থেকে ধুয়ে আসা আবর্জনা সঙ্গে বিভিন্ন পোকামাকড় মহীসোপান অঞ্চলে এসে জমা। ফলে মাছের খাদ্যের অভাব হয় না। অগভীর সমুদ্র মাছের ডিম পাড়ার পক্ষেও আদর্শ।

উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন:- শীতল স্রোতের সাথে বড় বড় হিমশৈল ভেসে আছে। আর হিমশৈল গুলির মধ্যে থাকে শৈবাল, নুড়ি, পাথর ইত্যাদি। উষ্ণ স্রোতের সাথে শীতল স্রোত যেখানে মিলিত হয় সেখানে হিমশৈল গলে যায়, ফলে হিমশৈল বাহিত পদার্থ গুলি মহীসোপান অঞ্চলে ক্রমাগত সঞ্চিত হতে হতে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে। এইসব মগ্নচড়া মৎস্য ক্ষেত্র হিসেবে সুবিখ্যাত। যেমন - গ্র্যান্ড ব্যাংক, ডগার্স ব্যাঙ্ক, রক ফল ব্যাংক ইত্যাদি।

নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু:- শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত যেসব স্থানের উষ্ণতা 20 ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম সেখানে মাছের সমাবেশ সবচেয়ে বেশি হয়। আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে বলে মাছ ধরার পর তা সহজে নষ্ট হয় না, ফলে মাছ সংরক্ষণের সুবিধা হয়।

শিলাময় বন্ধুর ভূমিরূপ :- নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অন্তর্গত দেশ গুলির উপকূল সংলগ্ন স্থলভাগ বন্ধুর প্রকৃতির হয় বলে কৃষি কাজ করা যায় না। তাই স্থানীয় অধিবাসীরা মৎস্য শিকার কে প্রধান জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে। যেমন - নরওয়ে, জাপান প্রভৃতি দেশের বিস্তীর্ণ উপকূল ভাগ পর্বতময়, তাই এ সমস্ত দেশ গুলির উন্নত। 

ভগ্ন উপকূল :- নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বেশিরভাগ স্থানের সমুদ্র উপকূল ভগ্ন। এই ভগ্ন উপকূল মাছ শিকারের অনুকূল বন্দর গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। 

সরলবর্গীয় অরণ্যের উপস্থিতি :- উত্তর আমেরিকা, ইউরোপের উত্তরাংশ সরলবর্গীয় অরণ্যে পরিপূর্ণ। এই অরন্যের গাছ দিয়ে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার ইত্যাদি তৈরি করা হয়, যা মাছ সংগ্রহের উন্নতিতে সাহায্য করেছে। 

শ্রমিকের সরবরাহ :- মাছ সংগ্রহ চিরকালই একটি শ্রম নিবিড় কাজ। কারণ মাছ কাটা, পরিষ্কার করা, লবণ দেওয়া, শুকানো ও বাক্সবন্দী করা প্রভৃতি নানা কাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই অঞ্চল ঘনবসতি পূর্ণ হওয়ায় শ্রমিক এর অভাব হয় না। 

চাহিদা :- এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশ গুলির মাঝারি থেকে ঘন বসতিপূর্ণ হওয়ায় এসব দেশে মাছের চাহিদা আছে এবং সেইসঙ্গে মাছের আঞ্চলিক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। যা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে মৎস্য শিকার কে বিকাশে সাহায্য করেছে। 

উন্নত প্রযুক্তি :- বর্তমানে উপগ্রহ চিত্র ও কম্পিউটারের সাহায্যে সমুদ্রের মধ্যে মাছের ঝাঁক এর গতিবিধ অবস্থান সহজে জানা যায়। মৎস্য জাহাজগুলি জিপিএসের সাহায্যে সমুদ্রের ওই সুনির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে অনায়াসে মাছ শিকার করে। এতে সময় ও শ্রম কম লাগে এবং সেই সঙ্গে ব্যয় কম হয়।

হিমঘর :- অতি আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয় বলে ধৃত মাছের পরিমাণ অনেক বেশি। এই পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছকে বিক্রির জন্য একসঙ্গে চালান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এগুলিকে ঘরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। এই অঞ্চলের মৎস্য বন্দরের নিকট এই জন্য প্রচুর হিম ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। 

উপরিউক্ত প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণ গুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মৎস্য চারণ ক্ষেত্র গুলির উন্নতিতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.