অরণ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারিতা


একই জায়গায় একই সাথে বহু প্রজাতির বিভিন্ন সংখ্যক গাছের সমাবেশ ঘটলে তাকে অরণ্য বলে। তবে রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মত অনুসারে সেই সমস্ত স্বা ভাবিক উদ্ভিদের সমাবেশকে ই অরণ্য নামে অভিহিত করা হয়, যা স্থানীয় জলবায়ু এবং তার বণ্টনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, জীবজন্তুকে আশ্রয় দেয় ও প্রাকৃতিক বাসস্থান গড়ে তোলে এবং কাঠ উৎপাদনে সক্ষম। এছাড়া প্রতি হেক্টর অন্তত 0.05 হেক্টর জমির উপর এই ধরনের গাছপালার সমাবেশ থাকলে, তবেই তাকে বনভূমি বলে। অরণ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে  আমাদের সাহায্য করে থাকে। অরন্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারিতা গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। 

প্রত্যক্ষ গুরুত্ব
i) জ্বালানি কাঠ - অর্ণ থেকে প্রাপ্ত শক্ত ও নরম কাঠ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে উৎপাদিত মোট কাঠের শতকরা প্রায় 50 ভাগই জ্বালানি রূপে ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার সবথেকে বেশি। 

2) শিল্পের কাঁচামাল - দেশলাই উৎপাদন, প্লাইউড নির্মাণ, আসবাসপত্র নির্মাণ, জাহাজ ও রেলগাড়ি সহ বিভিন্ন যানবাহনের অংশবিশেষ নির্মাণ, কাগজের মন্ড প্রস্তুতির কাঁচামাল, রেয়ন প্রস্তুতির কাঁচামাল, কাঠের বোর্ড উৎপাদনের নরম ও শক্ত কাঠ ব্যবহার হয়। এছাড়া ঘরবাড়ি নির্মাণেও কাঠ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 

3) ভেষজ দ্রব্য - অরণ্য থেকে সর্পগন্ধা, অনন্তমূল, কুথ,  সিঙ্কোনা প্রভৃতি পাওয়া যায় এবং ওষুধ তৈরির কাজে লাগে। 

4) উপজাত বনজ দ্রব্য - বনভূমি থেকে লাক্ষা, ধুনা, রজন, গদ, হরিতকী, দারচিনি, এলাচ, কালো জিরে, বেত, ঘাস, তারপিন তেল, রাবার প্রভৃতি বনজদ্রব্য সংগ্রহ করা হয়।

5) পশুপালন - তৃণভূমি অঞ্চলে গবাদিপশু প্রতিপালন করা হয় ও পশুপালন শিল্প গড়ে ওঠে। যেমন অস্ট্রেলিয়া ডাউনস, উত্তর আমেরিকার প্রেইরি নিউজিল্যান্ডের তোষক প্রভৃতি তৃণভূমি গুলি পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

6) পর্যটন শিল্প - বনভূমি অসংখ্য পশুপাখির আবাসস্থল। পশুপাখি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণ এ পৃথিবীর সব বনভূমিতে পর্যটকেরা বেড়াতে যান। যেমন - আফ্রিকার সেরেঙ্গেটি, মাসাইমারা প্রভৃতি অরণ্যে হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক প্রতিবছর বেড়াতে আসেন।


পরোক্ষ উপকারিতা বা গুরুত্ব
1) জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ - অরণ্য জলবায়ুর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গাছের পাতা থেকে বাষ্প মোচন প্রক্রিয়ায় নির্গত জল জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে বনভূমির বায়ু আর্দ্র হয় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। 

2) পরিবেশ দূষণ - অরণ্য পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে। গাছ বায়ু থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং বায়ুতে অক্সিজেনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। 

3) মৃত্তিকা ক্ষয় নিবারণ - বনভূমি থাকলে মৃত্তিকার উপরে স্তরটি বৃষ্টির জলের সঙ্গে ধুয়ে যায় না অথবা ঝরের সময় শুকনো ধূলিকণা একস্থান থেকে অন্যস্থানে অপসারিত হয় না। গাছের শিকর মৃত্তিকার কণাগুলি কে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ রেখে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় সেখানে বনভূমি থাকা একান্ত প্রয়োজন। 

4) মরুভূমির প্রসার রোধ - বনভূমি মরুভূমির বিস্তার রোধ করে। মরমের প্রান্তদেশে অরণ্য বলয় সৃষ্টি করে বাড়ি কনায় বিস্তার প্রতিহত করা যায়। ভারতের ধর্মের প্রসার রোধ করার উদ্দেশ্যে মরুভূমির প্রান্তদেশে অরণ্য বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। 

5) মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি - গাছের ডালপালা, পাতা, শিকড় ইত্যাদি পচে জৈব পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই জৈবপদার্থ সংযোজিত হয়ে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। 

6) বন্যার প্রভাব হ্রাস - বৃষ্টির জলের সঙ্গে প্রচুর পলি বাহিত হয়ে করে নদীতে গিয়ে জমা হয় ও নদী খাতের গভীরতা হ্রাস করে। এর ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বন ভূমি থাকলে বৃষ্টির জলের সঙ্গে বাহিত এই পলির পরিমাণ হ্রাস পায় এবং বন্যার জল ভূগর্ভে অনেক বেশি পরিমাণে প্রবেশ করে বন্যার প্রকোপ কমায়।

7) ঝড়ের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ - অরণ্য বিধ্বংসী ঝড়ের প্রকোপ থেকে জীবন ও সম্পত্তি হানি রোধ করে।

8) জাতীয় আয়ের উৎস - বনজ সম্পদের প্রাচুর্য  দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কানাডা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মায়ানমার প্রভৃতি দেশের জাতীয় আয়ের একটি প্রধান উৎস হলো বনজ সম্পদ। 

9) জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ - গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ প্রভৃতি জীব বৈচিত্রের ধারক ও বাহক হল অরণ্য। আগামী প্রজন্মের জন্য জীব বৈচিত্রের বিশেষভাবে প্রয়োজন। 


কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.