বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলতে কী বোঝ


বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল উদ্ভিদ ও প্রানী কুল কে তার নিজস্ব পরিবেশে সংরক্ষণ করার অন্যতম পদ্ধতি।  
প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে UNESCO  মানুষ ও জীবমণ্ডল (Man and Biosphere /MAB) নামক একটি পরিকল্পনা গ্রহন করে। MAB পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে  UNESCO ১৯৭১ সালে প্রথম বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserve) ধারনার সৃষ্টি করে। UNESCO প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যের আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা হিসাবে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Biosphere Reserve) শব্দটি ব্যবহৃত করে, যা স্থলজ অথবা উপকূলীয়/ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। এটি এক বিশেষ ধরণের সংরক্ষণ অঞ্চল, যেখানে মানুষকেও ওই পরিবেশের অংশ ধরা হয়।

জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল চিহ্নিত করনের উদ্দেশ্য -

১. বাস্তুতন্ত্রের মধ্যবর্তী উদ্ভিদ ও প্রানীর বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা।

২. পরিবেশ সংরক্ষন ও অন্যান্য পরিবেশগত দিক গবেষণাকে উৎসাহিত করা।

৩. জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত বিষয়ে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার প্রসার ঘটানো।

৪. সমাজ, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের মধ্যে সহবাসস্থানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।

৫. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের স্থিতিশীল ব্যবহার করা।

৬. বাস্তুতন্ত্রের জৈবিক, আর্থ—সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলা।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের গুরুত্ব - Click Here

জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল চিহ্নিত করনের মানদণ্ড -
১. মানুষের প্রভাবমুক্ত কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কিছু অনন্য শ্রেণীর উদ্ভিদ ও প্রানীর উপস্থিতি এবং গবেষণা ও 
প্রশিক্ষণের জন্য সামান্য অতিরিক্ত জমির উপস্থিতি।

২. সেখানে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উপস্থিতি থাকতে হবে।

৩. অঞ্চলটিতে ভূ-সংস্থানিক ও মৃত্তিকাগত বিশিষ্টতা থাকবে।

৪. অঞ্চলটিতে আদিবাসী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পন্ন হতে হবে।

উপরিক্ত শর্ত গুলির উপস্থিতি থাকলে, অঞ্চলটিকে জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে

একটি জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চলের তিনটি অংশ থাকেযথা

) কেন্দ্রীয় অঞ্চল (Core Zone) কেন্দ্রীয় অঞ্চলটির বাস্তুতন্ত্র জীবসমূহ কঠোর ভাবে সংরক্ষিত এখানে পরিবেশ নিরক্ষন কেন্দ্র ছাড়া অন্য কিছু গড়ে তোলা যাবে না

)  নিরপেক্ষ অঞ্চল (Buffer Zone)কেন্দ্র অঞ্চলকে বেষ্টন করে থাকে নিরপেক্ষ অঞ্চল মানুষের কার্যকলাপের উপর নজর রাখা হয় এখানে সম্পদ সংগ্রহ, গবেষণা  শিক্ষামূলক কার্যকলাপের ব্যবস্থা থাকে

) পরিবর্তন মূলক অঞ্চল (Transition Zone) এটি সবথেকে বাইরের অংশ এখানে চাসবাস, পর্যটন, বসবাস প্রভৃতি করা যায়


ভারতের বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
ভারতে ১৯৮৬ সালে জীবমণ্ডল সংরক্ষণ কর্মসূচি গ্রহন করা হয়। বর্তমানে ভারতবর্ষে মোট ১৮ টি জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ১৮ টি মধ্যে ৭ টিকে বিশ্ব জীবমণ্ডল সংরক্ষণ বিন্যাসের অন্তভূক্ত করা হয়েছে, সেগুলি হল  সুন্দরবন, নীলগিরি, গালফ অফ মান্নার, নন্দাদেবী, পাঁচমারী, সিমলিপাল ও নরেক

ভারতের বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের তালিকা

১. নীলগিরি জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – কেরালা, তামিল নাড়ু, কর্নাটক
৬. মানাস জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – অসম
১১. গ্রেট রন অফ কচ্ছ জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – গুজরাত
১৬. ডিব্রু-সাইখোয়া জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – অসম
২. নন্দাদেবী জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – উত্তরাখণ্ড
৭. সিমলিপাল জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – ওড়িশা
১২. কোল্ড ডিসার্ড জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান- হিমাচল প্রদেশ
১৭. সেসাচালাম জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – অন্ধ্রপ্রদেশ
৩. গালফ অফ মান্নার জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – তামিল নাড়ু
৮. দিহাং দিহাং জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – অরুনাচল প্রদেশ
১৩. কাঞ্চনজঙ্ঘা জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান- সিকিম
১৮. পান্না জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – মধ্যপ্রদেশ
৪. নরেক জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – মেঘালয়া
৯. পাঁচমারী জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – মধ্যপ্রদেশ
১৪. আগাস্থামালাই জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান- কেরালা
ভারতের প্রথম জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল হল নীলগিরি (১৯৮৬)।

ভারতের নবীন জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল হল কাঞ্চনজঙ্ঘা (২০১৮)

৫. সুন্দরবন জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – পশ্চিমবঙ্গ
১০. আচানাক্মার ও অমরকন্টক জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান – মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড়
১৫. গ্রেট নিকোবর জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল
অবস্থান- আন্দামান ও নিকোবর


  • MAB এর পুরো নাম Man and Biosphere Programme 
  • MAB  কর্মসূচি ১৯৭১ সালে UNESCO দ্বারা গৃহিত হয়।
  • MAB  এর সদর দপ্তর  প্যারিসে অবস্থিত।
  • ভারতে MAB  কর্মসূচি গৃহিত হয় ১৯৮৬ সালে।

২টি মন্তব্য:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.