ওজোন গহ্বর কীভাবে সৃষ্টি হয়


১৯৮৫ সালে জে.সি. ফারমেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ আন্টার্কটিকা সার্ভের বিজ্ঞানী গন আন্টার্কটিকায় প্রথম ওজোন গহ্বরের সন্ধান পান। তারা পর্যবেক্ষন করেন যে, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আন্টার্কটিকা মহাদেশের ওপর ওজোন স্তর পাতলা হয়। 
বিজ্ঞানী ফারমেন প্রতিবছর বসন্তকালীন ওজোন স্তরের ক্ষয়কে ওজোন গহ্বর বলে অভিহিত করেছেন। ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব ২০০ ডবসন এককের নিচে নেমে গেলে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরা হয়। ১৯৯৩ সালে ওজোন ঘনত্ব নেমে আসে ৯০ ডবসন এককে। উত্তর মেরুতেও ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হচ্ছে।

ওজোন গহ্বর সৃষ্টির পদ্ধতি 
ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি বা ধ্বংস একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। নিম্নে ওজোন গহ্বর সৃষ্টির পর্যায় ক্রমিক আলোচনা করা হল

প্রথম পর্যায়  শীতকালীন সূর্যের অনুপস্থিতিতে আন্টার্কটিকা মহাদেশের বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। ফলে দক্ষিন মেরুতে ঘূর্নায়মান পশ্চিমাবায়ুর গতিবেগ খুব বেড়ে যায় এবং কেন্দ্রে একটি আবর্তের সৃষ্টি হয়। এই আবর্তের মধ্যস্থিত বাতাসের গতিবেগ ৩০০ কিমির বেশি । ফলে আবর্ত মধ্যস্থিত বায়ু চারপাশের বায়ু থেকে সম্পূর্ন রূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তখন বায়ুর উষ্ণতা অধিক মাত্রায় হ্রাস পেয়ে নেমে আসে -৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

দ্বিতীয় পর্যায়  এই পর্যায়ে স্ট্যাটোস্ফিয়ারে মেঘের সৃষ্টি হয়। জল ও নাইট্রিক অ্যাসিড ঘনীভূত হয়ে নাইট্রিক অ্যাসিডের ট্রাইহাইড্রেট (HNO3, 3H2O) কেলাসরূপে এইমেঘে অবস্থান করে। এই সময় স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তরে ক্লোরিন নাইট্রেট (ClONO2) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) নিস্ক্রিয় ভাবে আবর্তের চারদিকে অবস্থান করে।

তৃতীয় পর্যায় - ক্লোরিন নাইট্রেট (ClONO2) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারীয় মেঘের কেলাসের অংশরূপে সংযুক্ত হয়। হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সঙ্গে ক্লোরিন নাইট্রেট এর সংঘাত ঘটলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আনবিক ক্লোরিন গ্যাস উৎপন্ন হয়। 
                 ClONO2 + HCl = Cl2 + HNO3
এইভাবে নিম্ন স্ট্যাটোস্ফিয়ারে ক্লোরিন গ্যাস সঞ্চিত হয়।

শেষ পর্যায়  দক্ষিন গোলার্ধে বসন্তের শুরুতে সূর্যের আবির্ভাবে ক্লোরিন (Cl2) অতিবেগুনি রশ্মির দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পারমানবিক ক্লোরিনে (Cl) পরিনত হয়। ক্লোরিন পরমানু ওজোন ওজোন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন কে বিয়োজিত করে অক্সিজেন অনু (O2) এবং ক্লোরিন মনোক্সাইডে (ClO) পরিনত করে।  
                  Cl2­­­­­­­­­­­­­­ (অতিবেগুনি রশ্মির) 2Cl
                         Cl + O3 = ClO + O2
এই ভাবে ওজোন অনুর বিয়োজনের ফলে ওজোন স্তর পাতলা হয় ও ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়।
বসন্তের পরবর্তী পর্যায়ে আবর্ত স্থির হয়ে গেলে ওজোন বিয়োজন বন্ধ হয়ে যায় এবং ওজোন সংশ্লিষ্ট হয়ে পুনরায় ওজোন স্তর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। এই ভাবে ওজোন স্তর চক্রাকারে ক্ষয় ও সৃষ্টি চলতে থাকে। সংশ্লেষিত ওজোনের পরিমান বিয়োজিত ওজোনের পরিমান অপেক্ষা কম হলে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়।

👉 ওজোন স্তর বিনাশে cfc এর ভূমিকা - click here

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.