ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে শুষ্ক ও শীতকাল আর্দ্র হয় কেন

ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল বা দেশ গুলিতে এক বিশেষ ধরণের জলবায়ুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু নামে পরিচিত। এই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক অর্থাৎ এই সময় বৃষ্টিপাত হয় না এবং শীতকাল আর্দ্র অর্থাৎ এই সময় বৃষ্টিপাত হয়। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর আর অন্য কোন জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায় না ।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে শুষ্ক ও শীতকাল আর্দ্র হওয়ার কারণ আলোচনার পূর্বে আমাদের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অক্ষাংশগত অবস্থান এবং সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিনায়নের সাথে বায়ুচাপের যে স্থানান্তর দেখা যায় তার সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন ।

ভূমধ্যসাগয়ীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলটি ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশে দেখা যায়।

এই জলবায়ু ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ইউরোপ মহাদেশের পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, দক্ষিন ফ্রান্স ও ইতালি প্রভৃতি দেশে দেখা যায়। এছাড়া এশিয়ার লেবানন, তুরস্ক, মরক্কো, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিন আফ্রিকার কেপটাউন, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিনে অবস্থিত পার্থ ও ভিক্টোরিয়া,  দক্ষিন আমেরিকার চিলির মধ্য অংশে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান
সারা পৃথিবীব্যাপী মোট সাতটি বায়ুচাপ বলয় রয়েছে, এর মধ্যে তিনটি উত্তর গোলার্ধে ও তিনটি দক্ষিন গোলার্ধে এবং নিরক্ষরেখা বরাবর একটি বায়ুচাপ বলয় অবস্থিত। সাতটি বায়ুচাপ বলয়ের মধ্যে তিনটি নিম্নচাপ বলয় এবং চারটি উচ্চচাপ বলয়। এই বায়ুচাপ বলয়গুলি কী কী ও তাদের অবস্থান নিম্নে আলোচনা দেখানো হল –

১. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় – নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ৫ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিন অক্ষাংশের মধ্যে
২. কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় (২ টি) – উভয় গোলার্ধে ২৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিন অক্ষাংশের মধ্যে
৩. মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (২ টি) - উভয় গোলার্ধে ৬০ ডিগ্রি থেকে ৭০ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিন অক্ষাংশের মধ্যে
৪. মেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় (২ টি) -  উভয় গোলার্ধে উত্তর ও দক্ষিন মেরু কে কেন্দ্র করে অবস্থিত

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল গ্রীষ্মকালে শুষ্ক হওয়ার কারণ নিচে বর্ননা করা হল
আমরা জানি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলটি উত্তর গোলার্ধে ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলটি আংশিক ভাবে কর্কটীয়  উচ্চচাপ অঞ্চল ও সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে। 

গ্রীষ্মকালে যখন সূর্যের উত্তরায়ন হয় তখন পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় গুলি ৫ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি উত্তর দিকে সরে যায়। এই বায়ুচাপ বলয় গুলি যখন উত্তর দিকে সরে যায় তখন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলটি নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এবং  কর্কটীয়  উচ্চচাপ বলয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলের অন্তর্গত হয় এবং আমরা জানি এই দুই বলয়ের মাঝে উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ ভূমধসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। এই আয়ন বায়ু যখন উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভূমধসাগরীয় অঞ্চল দিকে প্রবাহিত হয় তখন এই বায়ু মূলত স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ুতে তেমন জলীয় বাষ্প থাকে না বলে, গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না । তাই গ্রীষ্মকাল ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল মেঘমুক্ত রৌদ্রজ্জ্বল থাকে।    

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল শীতকাল আর্দ্র হওয়ার কারণ নিচে বর্ননা করা হল
আবার শীতকালে যখন সূর্যের দক্ষিনায়ন হয় অর্থাৎ সূর্য দক্ষিন গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরন দিতে শুরু করে তখন পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় গুলি ৫ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি দক্ষিন দিকে সরে যায় এবং এই সময় উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলটি সম্পূর্ন ভাবে কর্কটীয় উচ্চচাপ ও সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের মধ্যে অবস্থান করে। দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে চলে এবং এই পশ্চিমা বায়ু যখন ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন প্রচুর পরিমান জলীয় বাষ্প ধারন করে শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই জলবায়ু অঞ্চল শীতকালে আর্দ্র ও মেঘাচ্ছন্ন হয়।  

👉মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর পার্থক্য জানতে Click Here
👉 ভূমধ্যসগরীয় অঞ্চল ফল চাষে উন্নত কেন ব্যাখ্যা করো - click here

কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.