জল দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব

জলে বিভিন্ন ধরণের দূষিত পদার্থ যেমন - জৈব ও অজৈব পরিপোষক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, উত্তপ্ত জল, বিভিন্ন ভারী ধাতু প্রভৃতি মিশে জলকে দূষিত করে দেয়। ওই দূষিত জলে বসবাসকারী বিভিন্ন জলজ প্রানী ও উদ্ভিদ গুলির প্রান সংশয় হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে। শুধু জলজ প্রানী নয় সেই দূষিত জল মানুষ ও স্থলভাগের অন্যান্য প্রানীরাও পানীয় হিসাবে ব্যবহার করলে তাদের শরীরে নানা ধরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। যার ফলে মানুষ ও প্রানীদের শরীরে নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং কখনো কখনো প্রানহানীও ঘটতে পারে। জলদূষণের ক্ষরিকারক প্রভাব গুলি নিচে বর্ননা করা হল - 

জলবাহিত রোগ - দূষিত জল থেকে বিভিন্ন ধরনের জলবাহিত রোগ গুলি ছড়িয়ে থাকে, যেমন কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, সিসটোসোমিয়াসিস প্রভৃতি। 

পেটের অসুখ - জলের মাধ্যমে বিভিন্ন দূষিত পদার্থ আমাদের শরীরে সঞ্চিত হলে বিভিন্ন ধরণের পেটের অসুখ, ক্যান্সার ও পেশির কাঠিন্য যুক্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়। 

ফুসফুসের ক্যান্সার - অ্যাসবেস্টস জাতীয় ফাইবার দ্বারা দূষিত জল ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে অ্যাসবেস্টোসিস জাতীয় এক প্রকারের ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। 

ত্বকের রোগ সমূহ - আর্সেনিক জলে সংক্রমিত হয়ে পানীয় ও খাদ্যের মাধ্যমে জীবদেহে প্রবেশ করে। আর্সেনিকের প্রভাবে হাতে চেটো ও পায়ের পাতায় কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়, যাকে ব্ল্যাক ফুট রোগ বলে।   

জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি - জলে অ্যাসিড ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের পরিমান বৃদ্ধি পেলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রানীর ক্ষতিসাধন হয়, ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। 

ইউট্রোফিকেশন - জলে নাইট্রেট জাতীয় জৈব ও অজৈব পরিপোষণের পরিমান বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ, যেমন - কচুরিপানা জাতীয় উদ্ভিদ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে। যার ফলে জলে বসবাসকারী প্রানীদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পরিমান কমে যায় এবং জলাশয়টি ক্রমে মজে নষ্ট হয়ে পড়ে, একেই ইউট্রোফিকেশন বলে। 

মৃত্তিকার ক্ষতি - অতিরিক্ত লবণতা যুক্ত জল ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকার ক্ষারত্বের পরিমান বৃদ্ধি পায়, ফলে জমি ফসল উৎপাদনের জন্য অনুর্বর হয়ে পড়ে। 

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি - মানুষের ব্যবহৃত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ, তেলবাহী ট্যাঙ্কার থেকে প্রচুর পরিমান তেল সমুদ্রের জলে মেশার ফলে সামুদ্রিক প্রানী, উদ্ভিদ ও প্রবাল জাতীয় কীট গুলি আজ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। 

মিনামাটা রোগ - ১৯৫৫ সালে জাপানের মিনামাতা উপসাগরের জলে পারদ সংক্রমনের ফলে পারদ সামুদ্রিক মাছের দেহে কেন্দ্রীভূত হয়। মিনামাতা গ্রামের বহু মানুষ এই মাছ খাওয়ার ফলে পারদ জীব বিবর্ধিত হয়ে নানাআ রোগের সৃষ্টি করে। পারদ বিষক্রিয়া জনিত এইরূপ রোগকে মিনামাতা বলে। 

ইটাই ইটাই বা আউচ আউচ রোগ - জলে ক্যাডমিয়াম সংক্রমনের ফলে যে রোগের সৃষ্টি হয় তার ফলে অস্থি ভঙ্গুর হয় ও অস্থি মজ্জার সমস্যা ঘটে। এরূপ রোগকে ইটাই ইটাই বা আউচ আউচ রোগ বলে। 

সিসা জনিত বিভিন্ন রোগ - পানীয় জলে সিসার পরিমান বেড়ে গেলে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই সিসা জনিত সংক্রমনের ফলে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়, মস্তিস্কের কোশ বিনষ্ট হয়, রক্ত চাপের বৃদ্ধি ঘটে, শিশুদের মস্তিস্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।  

1 টি মন্তব্য:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.