অষ্টম শ্রেনীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় - পৃথিবীর অন্দরমহল

এখানে অষ্টম শ্রেনীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় পৃথিবীর অন্দরমহল থেকে যাবতীয় সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন গুলি উত্তর সমেত সহজ সরল ভাষায় স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হল। আশাকরি ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠনের ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন গুলি উপকারে লাগবে। 

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর 
১. পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দূরত্ব কত কিমি?
উত্তর - প্রায় ৬৩৭০ কিলোমিটার

২. পৃথিবীর গভীরতম সোনার খনিটি কোন দেশে অবস্থিত? 
উত্তর - পৃথিবীর গভীরতম সোনার খনি রবিনসন ডীপ (গভীরতা ৩-৪ কিমি) দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত।   

৩. পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রতি ৩৩ মিটার গভীরতা বৃদ্ধিতে কত ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়? 
উত্তর - ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে। 

৪. পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কত?
উত্তর - পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

৫. পৃথিবীর সৃষ্টি হয় কত বছর আগে?
উত্তর - আজ থেকে ৪৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়। 

৬. পশ্চিমবঙ্গের একটি উষ্ণ প্রস্রবনের নাম লেখ?
উত্তর - বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণ। 

৭. পৃথিবীর কোন দেশ ভূতাপ শক্তি থেকে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে?
উত্তর -  আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র 

৮. ভারতের কোথায় ভুতাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত?
উত্তর - ভারতের মনিকরনে ভুতাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। 

৯. পৃথিবীর গড় ঘনত্ব কত?
উত্তর - ৫.৫ গ্রাম/ ঘনসেমি

১০. কোন ভূকম্পীয় তরঙ্গ তরল বা অর্ধতরল মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না?
উত্তর - S তরঙ্গ তরল বা অর্ধতরল মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। 

১১. পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগকে কয়টি স্তরে ভাগ করা হয় ও কী কী?
উত্তর - তিনটি স্তরে, যথা - ভূত্বক, গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডল। 

১২. ভূত্বককে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী?
উত্তর - ভূত্বককে দুই ভাগে ভাগ করা হয় - মহাদেশীয় ভূত্বক ও মহাসাগরীয় ভূত্বক। 

১৩. মহাদেশীয় ভূত্বক কোন ধরণের শিলা দ্বারা গঠিত?
উত্তর - গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত

১৪. মহাসাগরীয় ভূত্বক কোন ধরণের শিলা দ্বারা গঠিত?
উত্তর - ব্যাসল্ট শিলা 

১৫. ভূত্বকে কোন উপাদানের পরিমান সবচেয়ে বেশি?
উত্তর - অক্সিজেন (৪৭%) 

১৬. মহাদেশীয় ভূত্বক অন্য কী নামে পরিচিত ?
উত্তর - সিয়াল নামে পরিচিত। 

১৭. মহাসাগরীয় ভূত্বক অন্য কী নামে পরিচিত ?
উত্তর - সিমা নামে পরিচিত।  

১৮. সিয়াল ও সিমা কে পৃথক করেছে কোন বিযুক্তি রেখা ?
উত্তর - কনরাড বিযুক্তি রেখা 

১৯. ভূত্বকের গড় গভীরতা কত?
উত্তর - প্রায় ৩০ কিমি 

২০. ভূত্বক ও গুরুমন্ডলের মাঝে কোন বিযুক্তিরেখা অবস্থিত?
উত্তর- মোহোরোভিসিক বিযুক্তিরেখা 

২১. গুরুমন্ডলকে কয়টি স্তরে ভাগ করা হয় ও কী কী?
উত্তর - দুটি - ক্রোফেসিমা ও নিফেসিমা 

২২. ক্রোফেসিমা ও নিফেসিমা কে পৃথক করেছে কোন বিযুক্তিরেখা?
উত্তর - রেপিত্তি বিযুক্তিরেখা। 

২৩. পৃথিবীর অভ্যন্তরের কোন স্তরটি নিফে নামে পরিচিত? 
উত্তর - কেন্দ্রমণ্ডল 

২৪. গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডলকে পৃথক করেছে কোন বিযুক্তিরেখা?
উত্তর - গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা

২৫. অন্তঃকেন্দ্রমন্ডল ও বহিঃকেন্দ্রমন্ডল পৃথককারী বিযুক্তিরেখার নাম কী?
উত্তর - লেহম্যান বিযুক্তিরেখা

২৬. পৃথিবীর চৌম্বকত্ব সৃষ্টি হয়েছে ভূঅভ্যন্তরের কোন স্তরে?
উত্তর -  বহিঃকেন্দ্রমন্ডলে 


সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর 

১. ম্যাগমা কাকে বলে?
উত্তর - ভূ-গর্ভস্থ পদার্থ সমূহ প্রচণ্ড চাপ ও তাপের জন্য কঠিন অবস্থায় না থেকে গলিত অর্ধতরল অবস্থায় অবস্থান করছে। এই প্রচন্ড গরম বাষ্প সমন্বিত অর্ধতরল পদার্থকে ম্যাগমা বলা হয়। 

২. লাভা কাকে বলে?
উত্তর - ভূপৃষ্ঠের কোন ছিদ্র বা ফাটল বরাবর ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা যখন ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে লাভা বলে। এই লাভা বাইরে বেরিয়ে শীতলতার সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে আগ্নেয়শিলায় পরিনত হয়। 

৩.  উষ্ণ প্রস্রবনের সৃষ্টি হয় কীভাবে?
উত্তর - ভূ-গর্ভস্থ ভৌমজল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করলে তা ভূতাপের সংস্পর্শে এসে ফুটতে আরম্ভ করে। পরবর্তী কালে ওই উত্তপ্ত জল যখন ভূপৃষ্ঠের কোন ফাটলের মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবে বাইরে বেরিয়ে আসে তখন তাকে উষ্ণ প্রস্রবণ বলে। যেমন - পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণ। 

৪. বিযুক্তিরেখা কাকে বলে?
উত্তর - পৃথিবীর অভ্যন্তরের পদার্থ সমূহ সর্বত্র একই অবস্থায় নেই, কোথাও কঠিন, কোথাও তরল অবস্থায় রয়েছে। শুধু তাই নয় পদার্থ গুলির অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘনত্বেরও তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তাই ভূ-গর্ভের যেখানে পদার্থের অবস্থা ও ঘনত্বের পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে ভূমিকম্পের P ও S তরঙ্গ গতি ও দিকের সামান্য হলেও বিচ্ছুতি ঘটে থাকে। ওই অঞ্চল গুলিকে ভূতত্ত্ববিদরা বিযুক্তিরেখা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।  

৫. শিলামন্ডল কাকে বলে?
উত্তর - সমগ্র ভূত্বক ও গুরুমন্ডলের উপরি অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে, শিলামণ্ডল। শিলামণ্ডল বলতে পৃথিবীর উপরিভাগের কঠিন অংশকে বোঝানো হয়। শিলামণ্ডলের গভীরতা প্রায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার। 

৬. অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ?
উত্তর - শিলামণ্ডলের নিচে ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত গুরুমন্ডলের যে অংশের পদার্থ সমূহ প্রচণ্ড তাপ ও চাপের ফলে পিচের মতো অর্ধতরল অবস্থায় রয়েছে, তাকে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বলে। গ্রিক শব্দ অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের অর্থ হল দূর্বল স্তর। 

৭. পৃথিবীর অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে আলোচনা কর?
উত্তর - ভূমিকম্প তরঙ্গের গতি প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগকে তিনটি প্রধান স্তরে ভাগ করেছেন, যথা - ভূত্বক, গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডল। 

ক] ভূত্বক - পৃথিবীর সবচেয়ে উপরের কঠিন অংশকে ভূত্বক বলা হয়। ভূত্বকের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল 
👉 মহাদেশ ও মহাসাগর অনুসারে ভূত্বককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা - মহাদেশীয় ভূত্বক ও মহাসাগরীয় ভূত্বক।
👉 মহাদেশীয় ভূত্বকে প্রধানত সিলিকা(SI) ও অ্যালুমিনিয়াম (AL) খনিজের প্রাধান্য দেখা যায় বলে, একে সিয়াল (SIAL) বলা হয়।  
👉 মহাসাগরীয় ভূত্বকে প্রধানত সিলিকা (SI) ও ম্যাগনেশিয়াম (MG) খনিজের প্রাধান্য দেখা যায় বলে, একে সিমা (SIMA) বলা হয়।  
👉 ভূত্বকের গড় গভীরতা প্রায় ৩০ কিমি।
👉 মহাদেশীয় ভূত্বক গুলি গ্রানাইট ও মহাসাগরীয় ভূত্বক গুলি ব্যাসল্ট জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত।
👉 ভূত্বক প্রধানত অক্সিজেন ও সিলিকা জাতীয় উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। 

খ] গুরুমন্ডল - ভূত্বকের নিচের স্তরটি গুরুমন্ডল নামে পরিচিত। গুরুমন্ডলের বৈশিষ্ট্য গুলি হল 
👉 গুরুমন্ডলের বিস্তার প্রায় ২৯০০ কিমি পর্যন্ত। 
👉 গুরুমন্ডলের উষ্ণতা ২০০০ থেকে ৩০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস মতো।
👉 গুরুমণ্ডলের গড় ঘনত্ব প্রায় ৩.৪ - ৫.৬ গ্রাম/ঘনসেমি।
👉 গুরুমণ্ডলে প্রধানত ক্রোমিয়াম, লোহা, সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম খনিজের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
👉 গুরুমন্ডল কে দুটি প্রধান স্তরে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথা - ক্রোফেসিমা ও নিফেসিমা। 
👉 ৩০ থেকে ৭০০ কিমি গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত গুরুমণ্ডলের যে অংশটিতে মূলত ক্রোমিয়াম, লোহা, সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম খনিজের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়, তাকে ক্রোফেসিমা বলে।
👉  ৭০০ থেকে ২৯০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অংশটি নিফেসিমা নামে পরিচিত। কারণ এই স্তরে নিকেল, লোহা, সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়ামের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। 

গ] কেন্দ্রমণ্ডল - ভূ-অভ্যন্তরের সর্বনিম্ন স্তরটি যা পৃথিবীর কেন্দ্রকে বেষ্টন করে রয়েছে, তাকে কেন্দ্রমন্ডল বলে। কেন্দ্রমন্ডলের বৈশিষ্ট্য গুলি হল 
👉 কেন্দ্রমণ্ডল গুরুমন্ডলের নিম্ন স্তর অর্থাৎ ২৯০০ কিমি থেকে ৬৩৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। 
👉  এই স্তরটি প্রায় ৩৫০০ কিমি পুরু। 
👉  এই স্তরটি মূলত নিকেল ও লোহা দ্বারা গঠিত বলে, একে নিফে বলা হয়।
👉  কেন্দ্রমণ্ডলের গড় উষ্ণতা প্রায় ৫০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
👉  গড় ঘনত্ব প্রায় ৯.১ থেকে ১৩.১ গ্রাম/ ঘনসেমি।
👉 কেন্দ্রমণ্ডল টি দুটি স্তরের সমন্বয়ে গঠিত, যথা - বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল ও অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল। 
👉 বহিঃকেন্দ্রমণ্ডলের বিস্তৃতি ২৯০০ কিমি থেকে ৫১০০ কিমি পর্যন্ত এবং এই স্তরটি তরল অবস্থায় রয়েছে। 
👉 অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের বিস্তৃতি ৫১০০ কিমি থেকে ৬৩৭০ কিমি পর্যন্ত। এই স্তরটি কঠিন অবস্থায় রয়েছে। 

1 টি মন্তব্য:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.