জীববৈচিত্র্যের হটস্পট ও রেড ডেটা বুক ।

 জীববৈচিত্র্যের উষ্ণবিন্দু (Biodiversity Hotspot) ধারনাটির উপস্থাপনা করেন ১৯৮৮ ব্রিটিশ বাস্তুবিদ নরম্যান মায়ার  পৃথিবীর যে সব স্থানীয় উচ্চ জীববৈচিত্র্য সম্পন্ন অঞ্চল রয়েছে এবং এই স্থানিক বৈশিষ্ট্যের জন্য সে সব প্রজাতির বিলুপ্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল, সেই সব অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে উষ্ণবিন্দু শব্দটি ব্যবহৃত করা হয়েছে জীববৈচিত্র্যের উষ্ণবিন্দু বলতে সেই সব অঞ্চলকে বোঝায়, যেখানে মোট প্রজাতির একটি বড়ো অংশের স্থানিকতা অর্থাৎ একমাত্র সেই অঞ্চলে বিদ্যমান  

জীববৈচিত্র্যের উষ্ণবিন্দু নির্ধারনের জন্য নিম্নলিখিত টি মানদণ্ড থাকা বাঞ্ছনীয়

) পৃথিবীর মোট ৩,০০,০০০ টি উদ্ভিদ প্রজাতির ০.৫ % অর্থাৎ ১৫০০ টি উদ্ভিদ প্রজাতির উপস্থিতি থাকবে।

খ) অঞ্চলটির মোট প্রাথমিক স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রায় ৭০ % বা তার বেশি লুপ্ত হয়ে গেছে।


 পৃথিবীর বেশির ভাগ জীববৈচিত্র্যের উষ্ণবিন্দু ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে কারণ এই দুটি অঞ্চলের তাপমাত্রা আদ্রতা সারা বছর ধরে অনেক বেশি থাকে। সাগর ও মহাসাগর গুলিতেও উচ্চতা ও গভীরতা বৃদ্ধি ও হ্রাসের সাথে সাথে প্রজাতি ও বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যতা দেখা যায়।

সারা পৃথিবীব্যাপী মোট ৩৬ টি জীববৈচিত্র্যের উষ্ণবিন্দু চিহ্নিত করা হয়েছে এই জীব বৈচিত্র্য অঞ্চল গুলি পৃথিবীর মোট ভূভাগের ২.৪ % দখল করে আছে এর মধ্যে ভারতবর্ষে  টি উচ্চ জীব বৈচিত্র্য সম্পন্ন উষ্ণবিন্দু রয়েছে যথাপূর্ব হিমালয় অঞ্চল, পশ্চিম হিমালয় অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ।

মহাদেশ অনুযায়ী জীববৈচিত্র্যের উষ্ণবিন্দুর সংখ্যা

. উত্তর আমেরিকা – ৫  টি

২. দক্ষিন আমেরিকা ৫ টি

৩. ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া – ৪ টি

৪. আফ্রিকা – ৯ টি

৫. হিমালয় ও পূর্ব ও উত্তর- পূর্ব এশিয়া – ১৩ টি

  • আন্দিজ পর্বতের ক্রান্তীয় হটস্পট টি পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বৈচিত্র্যময়।
  • নর্থ আমেরিকান কোস্টাল প্লেন পৃথিবীর নবীন তম হটস্পট। 


ভারতবর্ষে টি জীববৈচিত্র্য উষ্ণবিন্দুর বিবরণ -

) পূর্ব হিমালয় অঞ্চল এটি ২০০৫ সালে চিহ্নিত করা হয়। এই উষ্ণবিন্দুটি উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল ও ভুটান নিয়ে বিস্তৃত।

এটি হিমালয়ের ৫০০ মিটার থেকে ৮০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকায়, বিভিন্ন উচ্চতায় ভিন্ন ভিন্ন ধরণের বাস্তুতন্ত্রের সমাবেশ দেখা যায়, যেমন – হিমালয়ের পাদদেশের সমতল অঞ্চলে তৃণভূমি ও বড়ো পাতার উপক্রান্তীয় বৃক্ষ থেকে মাঝারি উচ্চতায় নাতিশীতোষ্ণ বড়ো পাতার অরন্য এবং অধিক উচ্চতায় সরলবর্গীয় অরণ্য ও বৃক্ষ সীমার উপর আল্পীয় তৃণভূমির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।  

) পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল - এই উষ্ণবিন্দুটি ভারতের পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কার ১,৮২,৫০০ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত আছে। ভারতের দুটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ আগাস্থামালাই ও সাইলেন্ট ভ্যালি এই উষ্ণবিন্দুর অন্তর্গত।

অঞ্চলটির বৈচিত্র্যময় ভূমিরূপ ও বৃষ্টিপাতের বৈষম্যতা বিভিন্ন প্রকৃতির উদ্ভিদের সমাবেশে সাহায্য করেছে। এখানে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য, উপক্রান্তীয় পর্নমোচি অরণ্য ও ঝোপঝাড়ের সমাবেশ দেখা যায়। প্রায় ৬০০০ রকমের উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে এই অঞ্চলে। 

এই অঞ্চলে ১১০০ প্রকারের প্রাণী প্রজাতি ও ৪৫০ প্রকারের পক্ষী প্রজাতির বিদ্যমানতা রয়েছে।



রেড ডেটা বুক - 

International Union for Conservation of Nature and Natural Resources (IUCN) ১৯৬৬ সালে রেড ডেটা বুক (Red Data Book) প্রকাশ করে। রেড ডেটা বুকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই বইতে অন্য উদ্ভিদ ও প্রানীর থেকে বিপদাপন্ন যে সব স্তন্যপ্রায়ী প্রানী ও পাখি রয়েছে তাদের তথ্য আরও বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়। এই বইয়ের গোলাপী পাতা গুলিতে ভয়ংকর ভাবে বিপদগ্রস্ত (critically endangered) প্রজাতি গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রেড ডেটা বুক অনুসারে সারা বিশ্ব ব্যাপী প্রায় ২০,০০০ প্রজাতি বিপদাপন্ন।

২০১৫ সালে IUCN প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের প্রায় ৯৮৮ টি প্রজাতি রেড তালিকাভুক্ত ।   

ভারতের ভয়ংকর ভাবে বিপদগ্রস্ত প্রজাতি -

ক) হিমালয়ান রেড পান্ডা      

খ) পিগমি হগ

গ) নামধাপার উরন্ত কাঠবেড়ালি

ঘ) মালাবারের গণ্ডগোকুল

ঙ) কাশ্মীরি হরিন

চ) অরনামেন্টাল মাকড়সা

ছ) হকবিল কচ্ছপ   প্রভৃতি 









কোন মন্তব্য নেই:

Deejpilot থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.