মৃত্তিকা সৃষ্টিতে খনিজ পদার্থের ভূমিকা
মৃত্তিকা সৃষ্টিতে অন্যান্য নিয়ন্ত্রক যেমন – জলবায়ু, জীবজগৎ, ভূ-প্রকৃতি, সময় প্রভৃতি মতো আদিশিলা বা জনক শিলা মধ্যস্থিত বিভিন্ন
খনিজ পদার্থ গুলি মৃত্তিকা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
আবহবিকারের প্রভাবে ভূত্বকের উপরের সমস্বত্ব বৈশিষ্ট্য
সম্পন্ন চূর্নবিচূর্ন শিলার শীথিল স্তরের সৃষ্টি হয়, একে রেগোলিথ বলে। জল, উষ্ণতা, শিলাগঠনকারী খনিজ, জৈব পদার্থ ও জীবজগতের পারস্পারিক ক্রিয়াবিক্রিয়ার ফলে
রেগোলিথ থেকে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
খনিজ পদার্থের উৎস – মূলত আদিশিলা আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান দ্বারা আবহবিকার গ্রস্থ হয়ে নানা আকৃতির
চূর্নবিচূর্ন পদার্থ বা রেগোলিথের সৃষ্টি হয়। শিলা যখন চূর্নবিচূর্ন হয়, তখন শিলা মধ্যস্থিত খনিজ গুলি বাইরে নির্গত হয়। পরবর্তী কালে এই খনিজ গুলির
সাথে উদ্ভিদ ও প্রানীর দেহাবশেষ মিশ্রিত হয়ে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ খনিজ পদার্থ মৃত্তিকা
সৃষ্টি তথা মৃত্তিকার নানারূপ ভৌত রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা
পালন করে। বিভিন্ন শিলায় বিভিন্ন প্রকারের আদিশিলার উপস্থিতি থাকায় এক এক প্রকারের আদিশিলা
থেকে এক এক প্রকারের মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
মৃত্তিকা সৃষ্টিতে খনিজ পদার্থের ভূমিকা নিম্নে আলোচনা
করা হল –
১. গ্রানাইট, নিস, সিস্ট শিলা থেকে সৃষ্ট মৃত্তিকায়
আয়রন অক্সাইডের বা লৌহ কনার আধিক্য থাকায় লাল মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। যেমন – ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
২. ব্যাসাল্ট শিলায় পাইরক্সিন ও
ম্যাগনেটাইট খনিজের প্রাধান্য থাকায় ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন মৃত্তিকা কালো রঙের
হয়। যেমন – দক্ষিন ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা ।
৩. শিলায় কোয়ার্টজের পরিমান বেশি
থাকলে বেলে মাটির সৃষ্টি হয়।
৪. মৃত্তিকার উর্বরতাও খনিজ কনার
উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। যেমন – ব্যাসাল্ট শিলায় ফসফরাস, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম বেশি থাকে বলে ব্যাসল্ট শিলা
থেকা সৃষ্ট কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর মৃত্তিকা খুব উর্বর হয়।
৫. শিলা অধিক আবহবিকার গ্রস্থ হলে
প্রচুর কর্দম কনার সৃষ্টি হ্য়,যেমন – কেওলিনাইট, মন্টমোরিলোনাইট প্রভৃতি । মৃত্তিকায় কর্দম খনিজের আধিক্য
থাকলে মৃত্তিকা আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অধিক হয়, মৃত্তিকার আয়ন বিনিময় ক্ষমতা অধিক হলে মৃত্তিকা উর্বর প্রকৃতির হয়।
৬. মৃত্তিকার pH অর্থাৎ মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারকীয়তা নির্ধারনে খনিজ
পদার্থ গুলি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। যেমন গ্রানাইট শিলায় সিলিকার আধিক্য থাকায় এই শিলা থেকে
উৎপন্ন মৃত্তিকা আম্লিক চরিত্রের হয়। আবার ব্যাসল্ট শিলায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম খনিজের পরিমান বেশি থাকায় মৃত্তিকা ক্ষারকীয়
চরিত্রের হয়।
৭. মৃত্তিকার গঠন খনিজের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মৃত্তিকায়
ক্যালসিয়াম বেশি থাকলে মৃত্তিকা গঠনগত দিক থেকে শক্ত প্রকৃতির হয় কিন্তু সোডিয়াম বেশি
থাকলে মৃত্তিকার গঠন তেমন মজবুত হয় না
কোন মন্তব্য নেই: